ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

নতুন উচ্চতায় টেনিস সম্রাজ্ঞী সেরেনা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৩ জুলাই ২০১৬

নতুন উচ্চতায় টেনিস সম্রাজ্ঞী সেরেনা

অনেকে ভাবতেই শুরু করেছিলেন আর হয়ত পারবেন না! কারণ টানা তিন গ্র্যান্ড সøামে ব্যর্থ হয়েছেন শিরোপা জিততে। ৩৪ বছর বয়সী সেরেনা উইলিয়ামসের জন্য বয়সটাই যেন শত্রুতে পরিণত হয়ে উঠছিল। জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফের রেকর্ড ২২ গ্র্যান্ড সøাম জয়! টেনিসের উন্মুক্ত যুগে স্টেফির ওপর কেউ নেই। ২১ গ্র্যান্ড সøাম জেতার পর যেন পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লেন সেরেনা। ইউএস ওপেন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন কিংবা ফ্রেঞ্চ ওপেনে ভাগ্যদেবীও মুখ তুলে চাইলেন না, সেরেনারও মাইলফলকটা ছোঁয়া হয়ে উঠছিল না। অবশেষে যে উইম্বলডনটা তাঁর ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে সেই মঞ্চেই স্টেফিকে ছুঁয়ে ফেললেন। সপ্তমবারের মতো উইম্বলডন জিতে ২২ গ্র্যান্ড সøাম জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ টেনিস সেনসেশন। তবে স্টেফিকে কখনও ছোঁবেন ঘুণাক্ষরে নিজেও সেটা কস্মিনকালে ভাবেননি, লক্ষ্য থাকা তো দূরের কথা। সেটাই হয়ে গেছে। এবার বাকি আরও কয়েকটি রেকর্ডের মালিক হওয়া। চলতি বছর আরেকটি গ্র্যান্ড সøাম বাকি। নিজের দেশে ইউএস ওপেন জিতলেই স্টেফিকে ছেড়ে গিয়ে নতুন রেকর্ড স্থাপন করবেন তিনি। অবশ্য, সার্বিকভাবে সব যুগের টেনিস ইতিহাস এক করলে এখনও সেরেনার ওপরে আছেন একজন। তিনি হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি টেনিস তারকা মার্গরেট কোর্ট। তিনি মোট ২৪টি গ্র্যান্ড সøাম জিতে এককভাবে এখনও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন। তাঁকে ছুঁতে হলে আরও দুটি গ্র্যান্ড সøাম জিততে হবে সেরেনাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক তারকা মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা সর্বাধিক ৯টি উইম্বলডন জিতেছেন, সেই রেকর্ডও ছোঁয়া বাকি। লক্ষ্যের শেষ হয়ে যায়নি এখনও সেরেনার। তবে নতুন যে উচ্চতায় উঠেছেন এতে করেই সর্বকালের সেরাদের কাতারে এখন শীর্ষ পর্যায়ে তিনি। দীর্ঘ একটা বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তিনটি। অবশেষে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য ছুঁতে পেরেছেন সেরেনা উইলিয়ামস। গত বছর সর্বশেষ গ্র্যান্ড সøাম হিসেবে জিতেছিলেন উইম্বলডন। আবার সেই উইম্বলডনই জিতে স্টেফি গ্রাফের রেকর্ড ২২ গ্র্যান্ড সøাম জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এ কৃষ্ণ তারকা। জার্মান টেনিসের কিংবদন্তি স্টেফি উন্মুক্ত যুগের টেনিসে ওই রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু নতুন ইতিহাসকে সাক্ষী করার পর সেরেনা নিজেই দাবি করলেন ২২ গ্র্যান্ড সøাম জেতার লক্ষ্য কখনোই ছিল না তার! কারণ, স্টেফি যা করে গেছেন সেটা ছোঁয়ার অভিলাষটাকে অনেক কঠিন বলে মনে করেন সেরেনা, সেজন্যই সেই চিন্তা কখনও করেননি। চিন্তা না করলেও রেকর্ডটা ধরা দিয়েছে সেরেনাকে। তবে এবার উইম্বলডনটা আরও আকর্ষণীয় হতে পারতো। দীর্ঘদিন পর মর্যাদার এ গ্র্যান্ড সøাম আসরে সেরেনা-ভেনাস দ্বৈরথ হওয়ার জোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বড় বোন ভেনাস সেমিফাইনালে হেরে যান এ্যাঞ্জেলিক কারবারের। তাই শিরোপা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া হয়নি দুই বোনের। অতীতে অনেকবার দুই সহদোরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়েছেন। এবার সেটা হওয়ার জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তবে হয়নি শেষ পর্যন্ত। সেরেনার অর্জন দেখতে ঠিকই ফাইনালের পুরো সময় গ্যালারিতে উপস্থিত থাকলেন ভেনাস। তাঁকে বিদায় করে দেয়া কারবারকে ফাইনালে বিধ্বস্ত করে প্রতিশোধটা নিয়ে নিলেন সেরেনা। জয়ের পর উৎফুল্ল সেরেনা বলেন,‘এটা সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার এবং অভাবনীয় ছিল। আমি এ বছর দু’বার চেষ্টা করেছিলাম এবং কিন্তু দুইজন দারুণ প্রতিপক্ষের কাছে হেরে যাওয়াতে সেটা হয়নি। এখানে যারা উপস্থিত থেকে আমাকে ২২তম জয়ের অভিনন্দন জানালেন তাদের ধন্যবাদ।’ তবে পরক্ষণেই সেরেনা বোমাই ফাটিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন ২২ গ্র্যান্ড সøাম জেতার লক্ষ্য কখনোই ছিল না তার। এ বিষয়ে বিশ্বসেরা এ তারকা বলেন, ‘২২ কখনোই আমার লক্ষ্য ছিল না। কারণ এ চিন্তা করাটাও ছিল অভাবনীয়ভাবে কঠিন। তবে এটা অর্জনের পর মনে হচ্ছে বিজয় কতখানি সুমিষ্ট! বিশেষ করে এটা আরও বেশি মধুর লাগে যখন আমি জানি যে জয়ী হতে কতখানি কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে।’ অল ইংল্যান্ড ক্লাবে এ নিয়ে মোট ৭ বার শিরোপা জিতলেন সেরেনা। তাই উইম্বলডন যেন হয়ে গেছে নিজ ঘরের মতো। এ বিষয়ে সেরেনা বলেন, ‘এই কোর্টটা সত্যিই নিজের ঘরের মতো মনে হয়। অবশেষে এখানেই এমন অর্জন হওয়াটা সত্যিই চমৎকার একটা অনুভূতি।’ টানা এক বছর ধরেই সুযোগ ছিল স্টেফিকে ছোঁয়ার। সেই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেন গত বছর ইউএস ওপেন এবং এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফ্রেঞ্চ ওপেন জিততে ব্যর্থ হওয়ার কারণে। অসি ওপেনে সেরেনাকে দুঃখটা উপহার দিয়েছিলেন কারবার। ফাইনালে তিন সেটের লড়াইয়ে সেরেনা হেরে গিয়েছিলেন। সেই এ্যাঞ্জেলিককে হারিয়েই প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি রেকর্ডও ছুঁলেন। এ বিষয়ে সেরেনা বলেন, ‘এ্যাঞ্জেলিকের বিরুদ্ধে খেলতে আমি ভালবাসি, তিনি সত্যিই দারুণ এক প্রতিপক্ষ। তিনি সবসময়ই হাস্যোজ্জ্বল থাকেন। তার মতো দারুণ ব্যক্তিত্বকে পেয়ে আমি সত্যিই বিমোহিত।’ একক শিরোপা জয়ের পরদিনই আবার বড় বোন ভেনাসের সঙ্গে জুটি বেঁধে জিতেছেন মহিলা দ্বৈত শিরোপা। তারা ৬-৩, ৬-৪ সেটে হারিয়ে দিয়েছেন হাঙ্গেরির টিমিয়া বাবোস ও কাজাখস্তানের ইয়ারোসøাভা শিভেডোভা জুটিকে। এটি দুই বোনের ১৪তম দ্বৈত গ্র্যান্ড সøাম জয়। সবমিলিয়ে ২৩টি দ্বৈত ফাইনাল খেলে ২২টিতেই জিতলেন তারা। ক্যারিয়ারে মাত্র একবার, ১৯৯৯ সালে স্যান ডিয়েগো ওপেনের ফাইনালে দুই বোন হার দেখেছিলেন। এদিন জয়ের পর সম্প্রতিই যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস ও টেক্সাসে বন্দুক হামলার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। কৃষ্ণাঙ্গ জঙ্গীদের গুলিতে ৫ পুলিশ নিহত হয়। সেরেনা বলেন, ‘উগ্রতা কখনও উত্তর নয়। ডালাসে গোলাগুলির ঘটনা খুবই দুঃখজনক। গায়ের রং যেমনই হোক কিংবা কেউ যেখান থেকেই আসুক কারও জীবন চলে যাওয়ার জন্য নয়। আমরা সবাই মানুষ।’ সেরেনা আর ভেনাস সহদোরা আবারও জেগে উঠেছেন। যেটা আজ থেকে এক যুগ আগে ছিল সবার মুখে মুখে, আবারও যেন দু’জনে সেই অবস্থান তৈরি করছেন। ৩৬ বছর বয়সেও ভেনাস নিজেকে ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিংয়ে নিজেকে সেরা দশের মধ্যে রেখেছেন। বড় বোনের এই বয়সেও এমন নৈপুণ্য সেরেনাকে আরও অনুপ্রেরণা জোগায়। কারণ, ইনজুরি এবং শারীরিক সমস্যায় মাঝে কয়েকটা বছর দারুণ ভুগেছেন ভেনাস। হারিয়ে গিয়েছিলেন অন্তরালে। তিনিই আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। তাই সেরেনাও যেন উজ্জীবনী শক্তি পাচ্ছেন নিজের মধ্যে।
×