ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

তবু নায়ক সি আর সেভেন

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৩ জুলাই ২০১৬

তবু নায়ক সি আর সেভেন

একযুগ আগেও কেঁদেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। একযুগ পরও কাঁদলেন। কিন্তু উপলক্ষ্য দুটির মধ্যে ফারাক আকাশ-পাতাল। ২০০৪ সালে ইউরোর শিরোপা হারিয়ে কেঁদেছিলেন; এবার ২০১৬ সালে কাঁদলেন ইউরোর ট্রফি ছুঁয়ে। একেই বলে বুঝি প্রকৃতিই খেয়াল! জাতীয় দলের জার্সিতে নিয়মিত ব্যর্থতার গ্লানি সইতে না পেরে কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন লিওনেল মেসি। ঠিক একই সময়ে আরেক সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো পেয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য। ইউরো চ্যাম্পিয়ণশিপের শিরোপা জিতে সি আর সেভেন এখন সুখের সপ্তম স্বর্গে বসবাস করছেন। আর মেসি! হতাশা ও গ্লানি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে রয়েছেন আঁড়ালে। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা এখন একবাক্যে বলছেন, সফল্য রোনাল্ডো-শূন্য মেসি! দু’জনই আধুনিক সময়ের সেরা ফুটবলার, মহানায়ক। সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকাতেও উপরের দিকে দুজনের নাম। ক্লাবের হয়ে অসংখ্য সাফল্যের আনন্দে ভেসে গেলেও জাতীয় দলের জার্সি শুধু হতাশই করেছে দুজনকে। তবে এখন এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন রোনাল্ডো। আর মেসি থেকে গেছেন সেই নরকেই! মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিততে পারেননি। গত মাসে বিশেষ কোপা আমেরিকার ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর অভিমানে বিদায় জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে। কিন্তু রোনাল্ডোকে সেই হতাশায় পুড়তে হয়নি। ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরোর শিরোপা জিতে রোনাল্ডো এখন পর্তুগালের ইতিহাসের তো বটেই, বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসেরই সেরাদের কাতারে প্রবেশ করেছেন। রোনাল্ডোর ক্লাব ক্যারিয়ারে দৃষ্টি দিলে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। ২০০৩ সালে ডেভিড বেকহ্যামের শূন্যস্থান পূরণ করতে তাঁকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিয়ে এসেছিলেন কোচ এ্যালেক্স ফার্গুসন। ছয় বছরের ম্যানচেস্টার জীবনে ৯টি শিরোপার স্বাদ পেয়েছিলেন সি আর সেভেন। ২০০৯ সালে সেই সময়ের ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে তিনি যোগ দেন বিশ্বের সবচেয় সফল ও দামী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। স্প্যানিশ ক্লাবটিতেও জয়জয়কার রোনাল্ডোর। ইউরোপের সফলতম ক্লাবে এ পর্যন্ত ৮টি শিরোপা জিতেছেন তিনি। যার মধ্যে আছে এ বছরের চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ট্রফিও। কিন্তু ক্লাব থেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুললেই যেন বদলে যেতেন রোনাল্ডো। পর্তুগালের হয়ে এত দিন তেমন কোন সাফল্য পাননি। সেরা সাফল্য ছিল ২০০৪ সালের ইউরোতে রানার্সআপ হওয়া। কিন্তু এখন তিনি অন্য মানুষ, জাতীয় দলের হয়ে ইউরো জয়ের আনন্দে বিভোর। ফাইনালে চোটে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এসেছিলেন মাঠের বাইরে। আর খেলতে না পারলেও সতীর্থদের উৎসাহ দিয়ে গেছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। অবশেষে জীবনের অন্যতম সেরা উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তিনবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রোনাল্ডো বলেন, এই সাফল্যে আমি খুব খুশি, সত্যিই খুশি। এই ট্রফির জন্য আমি একযুগ অপেক্ষা করেছি। সেই ২০০৪ সাল থেকে। আমি ঈশ্বরকে বলেছিলাম, তিনি যেন আমাদের আরও একটা সুযোগ দেন। তিনি দিয়েছেন। পর্তুগীজ অধিনায়ক বলেন, ইউরোর এই সাফল্য পর্তুগালের মানুষের প্রাপ্য। পর্তুগালের খেলোয়াড়দের প্রাপ্য।’ মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারলে আরও ভাল লাগত। আক্ষেপটা থাকছেই। তবু সতীর্থদের নিয়ে গর্বিত সি আর সেভেন। বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, দিনটা আমার জন্য মোটেও ভাল হলো না। ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই চোট পেয়ে উঠে যেতে হলো। তবে আমার বিশ্বাস ছিল দলের খেলোয়াড়দের ওপর। তাদের প্রতিভা আছে, সামর্থ্য আছে। সবচেয়ে বড় কথা, কোচ দারুণ কৌশলে খেলিয়েই জয় তুলে নিয়েছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটে ও রিয়াল মাদ্রিদরে হয়ে ট্রফির পর ট্রফি জিতেছেন। তবে দেশের হয়ে পাওয়া এবারের সাফল্যকেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখছেন রোনাল্ডো। বলেন, আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত এটি। এটিই সেরা সাফল্য। ফ্রান্সকে হারিয়ে আমরা এই মুহূর্তটি পেয়েছি। আমি উচ্ছ্বসিত। ঈশ্বরের প্রতি জানিয়ে তারকা এই ফরোয়ার্ড বলেন, আমি সব সময় জাতীয় দলের হয়ে এমন একটা শিরোপা জিততে চেয়েছিলাম। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, এবার সবকিছুই আমাদের পক্ষে যাওয়ায়। অনেক বছরের ব্যর্থতার পর এটা পর্তুগালের প্রাপ্য। তবে আমাদের উপর কারও বিশ্বাস ছিল না। ক্লাবগুলোর হয়ে আমি এরই মধ্যে সবকিছু জিতেছি। জাতীয় দলের হয়ে কিছু জয়ের অভাব ছিল। এবার সেটা পূরণ হওয়ায় আমি খুব খুশি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের পাশাপাশি ইউরো জয়ের পর রোনাল্ডোই যে ২০১৬ সালের ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতবেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্স তারকা এ্যান্টোনিও গ্রিজম্যান। এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফরাসী তারকা সি আর সেভেনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই দেখছেন না। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ব্যালন ডি’অরের লড়াইটা শেষ হয়ে গেল। এই মৌসুমে তো রোনাল্ডো দুটি বড় ট্রফি জিতেছে।
×