ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিদ্দিকুরের গৌরবময় ইতিহাস, প্রথম বাংলাদেশী পুরুষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ

রিওতে চেষ্টা থাকবে সেরাটা দেয়ার

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৩ জুলাই ২০১৬

রিওতে চেষ্টা থাকবে সেরাটা দেয়ার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনেক আগেই বাংলাদেশের ‘টাইগার উডস’ উপাধি পেয়ে গেছেন। পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকে যাই করছেন সেটাই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে গলফ নামক খেলাটির চর্চা হয় এবং সেটা আন্তর্জাতিক মানের তার স্বাক্ষর প্রথম দেখিয়েছিলেন সিদ্দিকুর রহমানই। একের পর এক দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সাফল্য ও গর্ব বয়ে এনেছেন তিনি। এবার আরেকটি নতুন ইতিহাস রচনা করলেন এ গলফার। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে বিবেচিত ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যজ্ঞ অলিম্পিক গেমসে সরাসরি অংশ নেয়ার সুযোগ লাভ করেছেন সিদ্দিকুর। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোন ঘটনা নেই। কখনও কোন বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদ সরাসরি নিজ যোগ্যতায় অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। সবসময়ই ওয়াইল্ড কার্ড ছিল একমাত্র ভরসা। এবার সরাসরি অলিম্পিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত সিদ্দিকুর প্রত্যয় জানিয়েছেন দারুণ কিছু করার। উল্লেখ্য, আগামী মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে অনুষ্ঠিত হবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক। অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা থাকতে হয় এবং উপযুক্ততা প্রমাণ করতে হয় এ্যাথলেটদের। সেই যোগ্যতা বাংলাদেশের কোন ক্রীড়াবিদ এর আগে দেখাতে পারেননি। তবে এবার ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ডাকছিল সিদ্দিকুরকে। ইতিহাসের অংশ হতে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন তিনি। অবশেষে সুসংবাদটা পেয়েছেন, প্রথম কোন বাংলাদেশী ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নেবেন এই গলফার। সরাসরি অলিম্পিকে যাওয়ার জন্য বিশ্ব গলফ র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬০-এর মধ্যে থাকলেই চলত। সোমবার প্রকাশিত হয় অলিম্পিকের জন্য সর্বশেষ বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং। সেখানে ৫৬তম স্থানে থাকার কারণে সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সুযোগটা পেলেন সিদ্দিকুর। নিয়ম অনুযায়ী অলিম্পিকের র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৬০ গলফে অংশ নেবেন। আগামী ৫ আগস্ট রিও ডি জেনেরিওতে অলিম্পিক শুরু হবে। অবশ্য অবস্থানে একটু অবনমনই ঘটেছে সিদ্দিকুরের। আরও ওপরের দিকে ছিল তার র‌্যাঙ্কিং। গত সপ্তাহে চীনা তাইপেতে টুর্নামেন্ট শেষ করার পর ছিলেন ৫৩তম স্থানে। মূলত তখনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সিদ্দিকুরের সরাসরি রিও ডি জেনেরিওতে যাওয়া। তবে মরিশাসে গত মে মাসে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশিয়া ব্যাংক টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হওয়াটাও সিদ্দিকুরের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছিল অনেক। সবমিলিয়ে সোমবার রাতে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে পড়লেও রিও অলিম্পিকে সরাসরি যাওয়ার কোন সংশয় থাকল না। ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রথম গলফার হিসেবে এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জেতেন সিদ্দিকুর। দেশের হয়ে প্রথম গলফ বিশ্বকাপেও খেলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার দেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলতে যাচ্ছেন ৩১ বছর বয়সী এই গলফার। বাংলাদেশের বাকি এ্যাথলেটদের অলিম্পিকে অংশ নেয়ার জন্য ভরসা ‘ওয়াইল্ড কার্ড’। এরই মধ্যে রিও অলিম্পিকে খেলার জন্য ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশের শূটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি, আরচার শ্যামলী রায় এবং দুই সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও সোনিয়া আক্তার টুম্পা। তবে এবার বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের আগ্রহ ও মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবেন সিদ্দিকুর। নিজেও প্রত্যয় জানিয়েছেন দারুণ কিছু করার। এ বিষয়ে তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে পেশাদার গলফ সার্কিটে খেলার পর আমার যে অভিজ্ঞতা তার সবকিছু মিলিয়ে উজাড় করে দেয়ার প্রচেষ্টা করব রিও অলিম্পিকে। ২০১৪-১৫ সালে ইনজুরির কারণে প্রত্যাশা অনুসারে পারফর্ম করতে পারিনি। তবে সেই ইনজুরি কাটিয়ে উঠেছি। সেই সঙ্গে আমার খেলা আরও উন্নত করতে বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছি। এর প্রতিফলন আশা করি রিওতে দেখাতে পারব। আমার আত্মবিশ্বাস এখন আগের থেকে অনেক।’ অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েই ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তুলে ফেলেছেন। এখন বাকি শুধু নিজেকে মেলে ধরে যতদূর সম্ভব বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা। এ বিষয়ে সিদ্দিকুর বলেন, ‘ভাল লাগছে অবশ্যই। এমন আনন্দের বিষয় কখনও ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দেশের পতাকা সেখানে উড়াতে পারব তাতেই তো অন্যরকম লাগছে। বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আমি অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি যেটা অবশ্যই গর্বের।’ অলিম্পিকের আগেই নিজের প্রস্তুতিটা ভালভাবে সেরে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন সিদ্দিকুর। আগামী ২৪ জুলাই থাইল্যান্ড যাবেন এ গলফার। সেখানে অংশ নেবেন একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। এতে করে অলিম্পিকের প্রস্তুতিটা বেশ ভাল হবে বলেই মনে করেন তিনি। থাইল্যান্ড থেকে আবার দেশে ফিরে ২ আগস্ট অলিম্পিকে অংশ নিতে রিও ডি জেনিরোর উদ্দেশ ঢাকা ত্যাগ করবেন বাংলাদেশের ‘টাইগার উডস’।
×