ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিএনপির শোকসভায় ফখরুল

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৩ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশানে জঙ্গী হামলার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে দেশব্যাপী শোক দিবস পালন করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ। এ ব্যর্থতা ঢাকতে সব দোষ বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপাচ্ছে। সরকারের উদ্দেশ্য একটাই, দেশেবিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করা। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদের দানব রুখতে দলমত নির্বিশেষে ৭১’র মতো ঐক্য করতে হবে। আর এর হাতিয়ার হতে হবে গণতন্ত্র। মির্জা ফখরুল বলেন, গুলশানের উগ্রবাদী ঘটনা দেশের রাজনীতিতে একটি ভূমিকম্প। এ ঘটনায় গোটা দেশের মানুষ আতঙ্কিত। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগেই বলেছিলেন, গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশ আক্রান্ত হবে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ-উগ্রবাদ রুখার ক্ষমতা দেশের জনগণের রয়েছে। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য যদি হয় বিরোধী দলকে দোষারোপ তাহলে তা সম্ভব নয়। কারণ, এটা স্থানীয় সমস্যা নয়, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের সম্পর্ক রয়েছে। তারপরও এর জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার জন্য সন্দেহভাজনদের ধরে মেরে ফেলা হচ্ছে ব্যর্থতা ঢাকার জন্য। তিনি বলেন, ইসলাম কখনও জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। তরুণ যুবকদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গীবাদে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা এখন সারাবিশ্বের সমস্যা। তাই দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এ সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানোর পরও সরকার এতে সাড়া দিচ্ছে না। ফখরুল বলেন, দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ বিএনপি সমর্থন করে। তাই বিএনপিকে বাদ দিয়ে জঙ্গীবাদ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তাই সরকারকে বলছি আসুন দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দানবকে ধ্বংস করি। তবে এর জন্য দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, শোকমিছিল করার সময় সাতক্ষীরায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে তার মুক্তি দাবি করছি। এ ছাড়াও এ যাবত যেসব নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মুক্তি এবং খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাদের সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। শোকসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। এদের কঠোরহস্তে দমন করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে। তবে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবেলা করলে বন্ধ হবে। তা না করে দোষারোপ ও মিথ্যাচারের রাজনীতি দিয়ে দেশের মানুষকে খুশি করা যাবে না। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে এ ভয়াবহ সমস্যার সমাধান আপনারা করতে পারবেন না। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই বলেই আজ জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদের আবির্ভাব হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে এখন দুই রকমের আইন রয়েছে। সরকারী দলের জন্য এক রকমের আইন আর বিরোধী দলের জন্য আরেক রকম আইন। তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতার মোহে বুঝতে পারছে না তারা দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিএনপিকে দোষারোপ করার সুযোগে জঙ্গীরা আরও সংগঠিত হয়ে আবারও ঘটনা ঘটাবে। মওদুদ বলেন, দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদ দমন করা সম্ভব। এ জন্য ছাত্র-জনতা সবাইকে নিয়ে ঐক্য করতে হবে। তিনি বলেন, যতদিন দেশের মানুষ ভোটের অধিকার না পাবে ততদিন আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার এখন খালেদা জিয়ার কথা শুনছেন না। কিন্তু জনগণ যখন ক্ষেপে যাবেন তখন শুনবেন। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সক দোষ বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপাবেন না। এভাবে বিরোধী দল ধ্বংস করা যাবে না। আপনারা মনে করছেন বিএনপি থাকলে অনির্বাচিত সরকারকে বাধা দেবে। মির্জা আব্বাস বলেন, যদি কেউ ভাবে গুলশানের ঘটনা কোন সরকার বা দলের ওপর আক্রমণ তাহলে ভুল করবে। কারণ এটা দেশের ওপর আক্রমণ। সারা বিশ্ব এ ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কিন্তু আমরা কেন এ ঘটনাকে সহজভাবে দেখছি। তিনি বলেন, বিএনপির ওপর অত্যাচার চলছে। এ অত্যাচার আরও বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রী থাকার জন্য বিএনপিকে বকাবকি করেন। তিনি বলেন, দেশে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা। বিশ্বব্যাপী আঘাতের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই আর ক্ষমতা ভাগাভাগি নয়, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দানবটাকে সামাল দেই। সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জঙ্গীবাদের নাম করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। সত্য একদিন না একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ নির্মূলে খালেদা জিয়া নিঃশর্ত জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। আর আপনারা বলছেন অমুকের সঙ্গে তমুকের সঙ্গে বসব না। এখন জাময়াতের সঙ্গে বসবেন না। কিন্তু অতীতে আপনাদের সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বসার ছবি রয়েছে। শোক সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আবদুল আউয়াল মিন্টো, এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া প্রমুখ।
×