ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ এদের ধরলেও দ্রুত জামিনে বের হয়ে আসে

কক্সবাজারে জঙ্গীনেতার বাড়িতে গভীর রাতে গোপন বৈঠক!

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৩ জুলাই ২০১৬

কক্সবাজারে জঙ্গীনেতার বাড়িতে গভীর রাতে গোপন বৈঠক!

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি, নাশকতা এবং সরকারবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠক থেকে পুলিশের হাতে ধৃত জঙ্গী গ্রুপের সদস্যরা সহজে জামিনে বের হয়ে এসে ফের জঙ্গীবাদী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েক বছরে অন্তত পাঁচ শতাধিক জঙ্গী জামিনযোগ্য দ-বিধির ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে কারাগার থেকে। পুলিশ তাদের ধরে এনে জেলহাজতে ঢোকালেও বাইরে থাকা তাদের অনুসারীদের তদ্বিরে দ্রুত বের হয়ে যেতে পারছে দেখে আরও বেড়ে গেছে জঙ্গীদের মনোবল। মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরা একের পর এক হত্যাকা- ও হামলা চালায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সঠিক তদন্ত না হওয়া এবং তদ্বিরবাজদের কারণে পুলিশের দুর্বল রিপোর্টের সুযোগ নিয়ে অল্প দিনেই জামিনে বের হয়ে যায় জঙ্গীরা। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গীগোষ্ঠীর কাছে রয়েছে অঢেল কালো টাকা। ওই টাকার কাছে হার মানে ধান্ধাবাজ নেতারা। ওই সব নেতার কারণে পুলিশও নিরুপায় হয়ে আটক জঙ্গীদের সন্দেহজনক ধারায় চালান করে আদালতে। এছাড়া কক্সবাজারের ‘জঙ্গীপাড়া’ বলে পরিচিত এলাকার জঙ্গী নেতা ছলাহুল ইসলাম, ইব্রাহিম আতিক ও আবু ছালেহ ওরফে ছালেহ আহমদের মাধ্যমে বিএনপি নেতা ও পৌরসভার এক জনপ্রতিনিধির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পাহাড়তলী, হালিমাপাড়া, ইসলামপুর এবং জিয়ানগর এলাকাকে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা জঙ্গীঅধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রভাবশালী ওই নেতা ও জঙ্গীদের ভয়ে স্থানীয়রা টু-শব্দ করারও সাহস পায় না। প্রায়ই নিশিরাতে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অচেনা ১৫-২০ জনের গ্রুপসহকারে আবু ছালেহ’র বাড়িতে ও ছনখোলা রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গোপন বৈঠক হয় বলে জানা গেছে। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী জেএমবি-আরএসও ক্যাডারদের উল্লেখযোগ্য ব্যবসা-বাণিজ্য চোখে পড়ার মতো না হলেও তারা অঢেল টাকার মালিক। শহর ও শহরতলীতে নিজ নামে জমিজমা ক্রয় করে দালানকোঠা নির্মাণ করে বিলাসী জীবনযাপন করছে জঙ্গীরা। স্থানীয় এক শ্রেণীর জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়ে জাতীয় সনদও সংগ্রহ করেছে ওই সব জঙ্গী। বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন পরিচালনার নামে বিদেশী অর্থায়নে তারা ইতোমধ্যে প্রচুর কালো টাকার মালিক বনে গেছে। বিভিন্ন সংস্থা, সচেতন মহল ও সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে। সূত্র জানায়, কক্সবাজার, বান্দরবানের পাহাড়ে, মাদ্রাসায়, আবাসিক হোটেলে, অফিস-বাসায় ও গোপন কক্ষ থেকে পুলিশ গত কয়েক বছরে অন্তত পাঁচ শতাধিক জঙ্গীকে আটক করলেও তাদের আদালতে সোপর্দ করার সময় দ-বিধির ৫৪ ধারায় (সন্দেহজনক) চালান করায় সহজে জামিন পেয়ে বেরিয়ে পড়ছে জঙ্গীরা। পুলিশের এক শ্রেণীর অসৎ দারোগাকে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে সহজে ফাইনাল রিপোর্টও পৌঁছে দিচ্ছে জঙ্গীগোষ্ঠী। পরবর্তীকালে আদালতের হাকিম পুলিশের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ‘আসামি নির্দোষ’ বলে খালাস প্রদানের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। একাধিক সূত্র জানায়, জেল থেকে বের হয়ে ওই সব জঙ্গী ফের অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে। গোপনে পুলিশের সোর্সকে খুঁজতে থাকে এবং অনেকের জানমাল তখন নিরাপত্তাহীন হয়ে দাঁড়ায়। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা, হরকাতুল জিহাদ, আরএসও এবং জেএমবিসহ সকল জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ক্যাডার ও মৌলবাদী ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর একাধিক দেশে ওই কট্টরপন্থী মৌলবাদী চক্রের বহু আত্মীয়স্বজন অবস্থান করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে আন্তর্জাতিক জঙ্গী কানেকশন। এদিকে, দেশের পাহাড়ী অঞ্চল পার্বত্য বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে আরাকান বিদ্রোহীসহ একাধিক সংগঠন ও জেএমবি সদস্যরা ভারি অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। মিয়ানমারের অসংখ্য মামলার হুলিয়া জারির আসামি ও বিএনপির এক সাবেক সাংসদের ভগ্নিপতি আরাকান বিদ্রোহী সংগঠনের (নুপা) সেক্রেটারি জেনারেল নজমুল আলমের নেতৃত্বে ওই সময় জেএমবির সদস্যরা ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উখিয়ার হিজলিয়ার পশ্চিমে হরিণমারা পাহাড়ে আস্তানা গাড়ে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন অবস্থায় চাঁদা ও লুটতরাজের লক্ষ্যে ভয়ঙ্কর জঙ্গী ওই নজমুল আলমের নেতৃত্বে তার দলবল কক্সবাজার সাগরে ১৪ মাঝি-মাল্লাকে খুন করে ট্রলারের কোল্ড স্টোরে বন্দী করে ভাসিয়ে দেয়। পুলিশ ওই সময় নজমুল আলমের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিতে উদ্যত হলেও বিএনপি-জামায়াতের প্রচ- চাপের মুখে নজমুল আলমকে বাদ রেখে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ইনানীর গর্জনভাজা জিরি এলাকা থেকে সাগরের মাঝপথ পর্যন্ত ওই জঙ্গী সদস্যদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিল। একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার সরকারী কলেজের পেছনে এবং পিএমখালীর ছনখোলায় দুটি মাদ্রাসায় শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর আদলে প্রতি রাতে গেরিলা ট্রেনিং চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই মাদ্রাসায় আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ট্রেনিংপ্রাপ্ত একাধিক রোহিঙ্গা মৌলভী দ্বারা রোহিঙ্গা ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
×