ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ জুলাই ২০১৬

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল); যা দেশের আলোচিত রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নামে পরিচিত। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় থাকা বিদ্যুত কেন্দ্রটির এবার নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ভারত হেবি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল) বিদ্যুত কেন্দ্রটি টার্ন কী ভিত্তিতে নির্মাণ করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের (ইপিসি) মূল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে এক দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। এটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থাৎ তিন বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর করেন বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য। অন্যদিকে ভেলের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রেম পাল যাদভ। গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের বিদ্যুত সঙ্কট মোকাবেলায় প্রতিবেশী ভারতের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। তখন ২০১০ সালে ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়। এই সমঝোতার আলোকে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারত ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) যৌথভাবে বিআইএফপিসিএল গঠন করে। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি বাংলাদেশের বাগেরহাটের রামপালে একটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সকল প্রক্রিয়া শেষের পরও ভারত এবং বাংলাদেশের দুটি সরকার পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্তে প্রকল্পটি পিছিয়ে যায়। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি বিশেষ অগ্রাধিকার তালিকায় ঠাঁই দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দায়িত্ব নেয়ার পর রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে তার সরকারের সমর্থন রয়েছে বলে ঘোষণা করেন। যদিও বাংলাদেশে পরিবেশবাদীরা রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছেন। সরকার এক্ষেত্রে রাপমাল বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না জানিয়ে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি রামপাল নিয়ে পরিবেশবাদীদের কাছে সরকার নিজস্ব অবস্থান ব্যাখ্যা করে। তবে ওই আলোচনায় পরিবেশবাদীরা সন্তুষ্ট নয় বলে সরকারকে জানিয়ে যায়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের দুটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। এজন্য আমরা আশা করছি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। কোন রকম বিলম্বের কারণে যাতে বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি না পায় সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকতে বলেন তিনি। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্রটি ভারত এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করবে। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয় সার্কের অন্যান্য দেশও উপকৃত হবে। তিনি দাবি করেন, বিদ্যুত কেন্দ্রটি সুন্দরবনের ক্ষতি করবে না। এজন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের বিদ্যুত সচিব প্রদীপ কুমার পূজারী বলেন, আন্তর্জাতিক সকল মানদ- অনুসরণ করে যাতে ভেল বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি। প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয় মূল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে এক দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে ঋণ সহায়তা প্রদান করবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। দুটি সমান ক্ষমতার ৬৬০ মেগাওয়াটের ইউনিট নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্ধেক মালিকানা থাকবে পিডিবির কাছে বাকি অর্ধেক থাকবে এনটিপিসির কাছে। ঋণের বাইরেও ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ থাকছে ভারত এবং বাংলাদেশের। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, এনটিপিসির চেয়ারম্যান এ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সিএমডি) গুরুদীপ সিং, পিডিবির চেয়ারম্যান শামসুল হানান মিঞা উপস্থিত ছিলেন।
×