ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় নজরদারিতে রাখা হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৩ জুলাই ২০১৬

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় নজরদারিতে রাখা হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী কর্মকা-ে শিক্ষার্থীদের নাম আসায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নজরদারিতে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সচিবালয়ে নিজ দফতরে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের সঙ্গে বৈঠকের আগে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রত্যেকের ওপর নজর রাখা হবে। তবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, জামায়াতের মানারাত, বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটিসহ একাধিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের নাম জঙ্গী হামলাকারীর তালিকায় আসলেও মন্ত্রণালয় সেখানে নীরব কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নর্থ সাউথ যেমন উদ্বেগের কারণ তেমনি অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণে সেখানকারও অনেক শিক্ষার্থীর নাম আসছে জঙ্গীদের তালিকায়। তাই কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিলে সঙ্কটের সমাধান হবে না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এর আগেও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছিল। তখন কি সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি? এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। তাদের সঙ্গে আগেও বৈঠক করেছি, বহু আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, আজকে এ ঘটনাটা সকলকে যেভাবে নাড়া দিয়েছে আগের ঘটনাটি এভাবে সকলকে নাড়া দেয়নি। এটা আমাদের নজরে নেই, তা কিন্তু নয়। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একজন শিক্ষককে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। শোকজ করা হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শোকজের জবাব দিয়ে চলে গেছেন। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা ওখানে যে নজর রাখি না তা নয়। নর্থ সাউথে অনেক ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। অনেক দিন ট্রাস্টি বোর্ডের কমিটিকে স্থগিত রেখেছি। প্রসেস কমপ্লিট না করা পর্যন্ত আমরা তাদের কনভোকেশন করতে দেইনি। সেখানে রাষ্ট্রপতি যাবেন সেটা আমরা অনুমোদন করিনি। এতে তাদের অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এখন নর্থ সাউথের বিষয়টি সবাই সার্বিকভাবে মনে করছেন। আমরাও সেভাবে গ্রহণ করেছি। আগে যে আমাদের (নজর) ছিল না তা নয়। যেভাবে ছিল সেভাবে মোকাবেলা করেছি। আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই আমরা ভিন্নভাবে মোকাবেলা করছি। শিক্ষা কার্যক্রমে এক সেমিস্টার অনুপস্থিত থাকলে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাদের এ সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়নি বলেও জানান তিনি। বর্তমানে দেশে ৯৫টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারী অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেরাও সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ি পালিয়ে জঙ্গীবাদে ঝুঁকছে বলে তথ্য আসায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সরকার ও অভিভাবক মহলে। কোন তরুণ বাড়ি পালিয়ে জঙ্গী দলে ভিড়েছে কি না- তা জানতে পরিবারের কাছে তথ্য চেয়েছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বলা হয়েছে, কোন শিক্ষার্থী টানা দশ দিন অনুপস্থিত থাকলেই সে তথ্য সরকারকে জানাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত তা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। উল্লেখ্য, জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের নামী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। প্রশ্নের মুখে পড়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিও। জঙ্গী হামলাকারী, আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের হয়ে হামলার হুমকি দাতাদের তালিকায় চলে এসেছে আলোচিত এ প্রতিষ্ঠানের একের পর এক উগ্রবাদী ছাত্রের নাম। সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গী হামলা চালানোর পর অভিযানে নিহত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী নিব্রাস ইসলাম নিহত হয়েছে। নিব্রাস যখন নর্থ সাউথে পাড়ালেখা করে তখন সেখানকার শিক্ষক ছিলেন হামলার ঘটনায় আটক হাসনাৎ রেজা করিম। শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে গিয়ে নিহত জঙ্গী আবীরও নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী। একই বিতর্কে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। গুলশানে হামলাকারী নিহত জঙ্গীদের একজন রোহান ইমতিয়াজ ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। রোহান স্কলাসটিকায় পড়াশোনা শেষ করে পড়ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। অন্যদিকে গুলশানে হামলার ঘটনার পর কথিত আইএসের বরাত দিয়ে বাংলাদেশী তিন তরুণের ভিডিও প্রকাশ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স। ভিডিও’র প্রথম তরুণ সাবেক নির্বাচন কমিশনার সফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান শাফি। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় তার বাড়ি। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেট। তাহমিদ নটরডেম কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। এর পর তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়েছেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ ছাত্রকে নিয়েও চলছে হইচই। এরা ছাড়াও আরও অনেক তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন। যারা দেশের নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিখোঁজদের খুঁজতে সহায়তা চেয়েছে। জঙ্গীবাদ বিরোধী কর্মসূচী ঘোষণা শিক্ষকদের ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সভা সমাবেশ, গণস্বাক্ষর, উঠান বৈঠক, মতবিনিময়, শ্রেণীকক্ষে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সর্বনাশা কুফল সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের অবহিতকরণ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে শিক্ষক সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ)। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচী ঘোষণা করেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) এর সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন অধ্যক্ষ মোঃ সাজিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ শাহাদাৎ হোসেন রানা, সাইদুর রহমান পান্না, উপাধ্যক্ষ হরিচাঁদ ম-ল সুমন, ওবায়দুর রহমান, ওয়াহিদুজ্জামান মিয়া, মন্তাজ উদ্দিন মর্তুজা, অধ্যক্ষ সামসুল আলম, অধ্যক্ষ দিলারা ইসলাম, উপাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, অধ্যক্ষ একেএম মোকছেদুর রহমান, হাবিবুর রহমান, মামুনুর রশিদ এবং আকলিমা জাহান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে মুুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং তাদের এ দেশীয় ও বিদেশী প্রভুদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সমগ্র শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সম্মেলনে পক্ষের সকলকে একতাবদ্ধ হয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তি রক্ষার আহ্বান জানানো হয়। এ লক্ষ্যে স্বাশিপ মাসব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে দেশব্যাপী ১৬ জুলাই উপজেলা, ১৯ জুলাই জেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী মানববন্ধন ও সমাবেশ এবং ২৩ জুলাই বিভাগীয় শহরে সমাবেশ। এছাড়া স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিট সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের সর্বনাশা কুফল সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের অবহিতকরণ; ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সমাবেশ, গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক, সন্ত্রাসবিরোধী স্বাক্ষর সংগ্রহ এবং এ বিষয়ে সরকার কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচীর সহায়ক ভূমিকা পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
×