ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে বাংলাদেশের অবস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৩ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী দমনে বাংলাদেশের অবস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ নিয়ে বর্তমান সরকার অতীত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মনোভাব, এখানের বিভিন্ন হামলায় আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করছে এখন বাংলাদেশ। মঙ্গলবার সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এসব তথ্য জানান। এছাড়া ঢাকা সফরের বিষয়ে এক টুইটার বার্তায় নিশা জানিয়েছেন, জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিন দিন সফর শেষে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা ত্যাগ করেছেন নিশা দেশাই। এদিকে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, গুলশানে জঙ্গী হামলার প্রেক্ষিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে পারবেন। ঢাকা ছাড়ার আগে মঙ্গলবার সকালে সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটের গুলশানের বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আধাঘণ্টা সময় ধরে চলা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান প্রমুখ। বৈঠকটি ছিল অফ দ্য রেকর্ড। বৈঠক সূত্র জানায়, নিশা দেশাই তার চলতি সফরের বিভিন্ন দিক সিনিয়র সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে বলেন, তিনি মনে করছেন জঙ্গীবাদ নিয়ে সরকার তার অতীতের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে মেনে নিচ্ছে যে, এই সব হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের একটি সম্পৃক্ততা রয়েছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তিনি মনে করেন, জঙ্গীবাদ, তা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন মোকাবেলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অতীতে বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যাকে স্রেফ দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফসল মনে করলেও বর্তমানে এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক যে একটি যোগসাজশ রয়েছে তা মেনে নিতে শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় কারিগরি ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণভিত্তিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে সাংবাদিকদের কাছেও জানিয়েছেন নিশা দেশাই। নিশা সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সরকার বলেছে, অভ্যন্তরীণভাবে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় কি কি সামর্থ্য রয়েছে তা যাচাই করে নিয়েই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদের এই হুমকি বৈশ্বিক, তাই বৈশ্বিকভাবেই এর মোকাবেলা করতে হবে। নিশা বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বৈঠকে সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট, দেশে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ রয়েছে। এ অবস্থার নিরসনে সরকারের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরই মত দেন তারা। সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তারা বলেন, এর বাইরে কৌশলগত কোন সহায়তা কতটুকু ও কিভাবে নেয়া যায় তা সরকার নির্ধারণ করবে। বৈঠকে জঙ্গী হামলা কিংবা তৎপরতায় ক্রাইসিস মোমেন্টে মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কেমন হওয়া উচিত, মিডিয়ার কেমন ভূমিকা পালন করা উচিত সে নিয়েও কথা হয়। মিডিয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেন তারা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নিয়মিত ব্রিফিং করার বিষয়টিও বৈঠকে উঠে আসে। এদিকে ঢাকা ছাড়ার আগে একাধিক টুইটার বার্তায় নিশা দেশাই লিখেছেন, সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো এবং এসব ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিসওয়াল তার টুইটার বার্তায় লিখেছেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর শেষ করলাম। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়টি আমি জানিয়েছি। জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত সন্ত্রাসীরা বিজয়ী হবে না। তিনি বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্য আছে। যারা আমাদের সমাজে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের পরাজিত করার মতো প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা আমাদের কমিউনিটি এবং তরুণদের নিয়ে কাজ করব, যাতে তারা সঠিক পথ খুঁজে পায়। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতির বিষয় জানানোও তার সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বলে জানান বিসওয়াল। রবিবার নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকায় আসেন। সেদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। একই দিনে সন্ধ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক করেন নিশা। সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার নিশা দেশাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তরাঁ পরিদর্শন করেন। চলতি মাসের শেষে ঢাকা সফরের কথা ছিল নিশা দেশাইয়ের। তবে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলায় দেশী-বিদেশী নাগরিক হত্যা ও কিশোরগঞ্জে হামলার প্রেক্ষাপটে তার সফর এগিয়ে আনা হয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব জঙ্গী হামলা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বেড়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে মার্কিন সহায়তা দেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য নিশা দেশাই ঢাকায় আসেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ও উপ সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী মানপ্রিত আনন্দ বাংলাদেশের পর শ্রীলঙ্কা সফর করবেন। তারা মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে কলম্বো গেছেন। মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের পরিবার স্বেচ্ছায় ফিরতে পারবেন ॥ রাজধানীর গুলশানে হামলার প্রেক্ষিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পরিবার স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। সোমবার এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা স্বেচ্ছায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে পারবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের দেশে ফেরার ব্যয় বহন করবে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এপি বলেছে, আগামীতে কোন হামলা হলে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারের সদস্যরা যেন সেই হামলার শিকার না হন, সেজন্যই আগে ভাগে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এপি। তবে দেশে ফিরতে পারবেন শুধু পরিবারের সদস্যরা, এটা কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য প্রযোজ্য হবে না।
×