ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখুন

প্রধানমন্ত্রী অভিভাবককে ছেলেমেয়ের প্রতি নজর রাখতে বললেন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ জুলাই ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী অভিভাবককে ছেলেমেয়ের প্রতি নজর রাখতে বললেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাত্তরের চেতনায় দেশবাসীকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোন ঠাঁই হবে না। বর্তমান সরকার জঙ্গীবাদের বীজ অঙ্কুরিত ও উত্থান হতে দেবে না। কোন জঙ্গীর স্থান, সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না। এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তাই কেউ বিপথে পাঠাতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীমুক্ত করতে পারব ইনশাল্লাহ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে শান্তিময় দেশ। মঙ্গলবার গণভবনে আয়োজিত এক ভিডিও কনফারেন্সে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ নির্মূলে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে সেটি মা-বাবাসহ অভিভাবকদের সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। তাদের বিপথে যাওয়া থেকে থামানোর দায়িত্ব সবার। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরাও খোঁজ-খবর রাখবেন। আর প্রত্যেক ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় জঙ্গী-সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটিগুলো কারও জঙ্গী সম্পৃক্ততা থাকলে তা খুঁজে বের করবে। আড়ালে আবডালে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গী, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারা বিপথে যাচ্ছে এবং কারা বিপথে নিচ্ছে তাদের শনাক্ত করাসহ জনসচেতনতা সৃষ্টি করবে এই কমিটি। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে শেখ হসিনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ১৬ জেলার মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারী কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময়ের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাবৃন্দ নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গীবাদ দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ধন্যবাদ জানান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমাদের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একজোট হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে জঙ্গীবাদে নিমজ্জিত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্দীপ্ত করতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা ইসলামের নাম করে মানুষ হত্যা করছে, তারা দেশে-বিদেশে আমাদের পবিত্র ধর্মের বদনাম ও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই অশুভ শক্তির চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। কারণ আমাদের ধর্মে আছে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু তারা রমজানে তারাবি না পড়ে, ঈদের দিন ঈদের নামাজ না পড়ে মানুষ হত্যা করছে। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করতে চাই, এটাই আমাদের করা লক্ষ্য। জঙ্গী দমনে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমি চাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের ফলেই এসব কাজ সম্ভব হচ্ছে। দেশবাসীও সমর্থন করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সবক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশের চলমান এই উন্নয়ন দেখে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছে। দেশের এই অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করাও জঙ্গী হামলার একটা কারণ হতে পারে। জঙ্গী হামলায় উচ্চশিক্ষিতদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজী মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে, সেই ছেলেমেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যাচ্ছে? তারা কিভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় পরিবার থেকে? অথচ প্রশ্ন আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। এ নিয়ে রিপোর্ট দিতো মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এখন দেখা যায় অনেকে স্বেচ্ছায় গুম হয়ে এখন তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কাজ করছে। তবে আমরা এর উৎস খুঁজে বের করব। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ সবাইকে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নির্দেশনা দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস এ অবস্থার আমরা পরিবর্তন করতে পারব। ইসলাম ধর্মকে যেন কেউ কলুষিত করতে না পারে সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কেউ বিপথে পাঠাতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। এ লক্ষ্যে নানা প্রকল্প রয়েছে, সেখানে বিদেশীরা কাজ করেন। তাদের নিরাপত্তা জরুরী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকার মানুষ এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করবেন। আমরা পারব। এ বিশ্বাস আমার আছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই একযোগে কাজ করলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে পারবে না। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
×