ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুসান্না সাজ্জিল

ইরাক যুদ্ধ শেফিল্ড থেকে সিলকট

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৩ জুলাই ২০১৬

ইরাক যুদ্ধ শেফিল্ড থেকে সিলকট

২০০৩ সালে চার হাজারেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ছোট্ট শহর শেফিল্ডের একটি স্থান সিটি সেন্টারে। প্রতিবেশী সাউর্দ ওয়ার্কস্পার শহরেও ছিল একই প্রতিবাদ। ইরাক যুদ্ধ শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে তাদের এই যুদ্ধবিরোধী আয়োজন। তৎকালীন বিশ্বে এমন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছিল অভূতপূর্ব। তাদের এমন দাবি, যুদ্ধবিরোধী মনোভাব অন্য শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ল। তারা সকলে জড়ো হলো লন্ডন শহরের প্রাণকেন্দ্রে। সেই বিক্ষোভে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। কিন্তু ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তাদের এমন দাবি আমলে নেয়নি। তারা ইরাক যুদ্ধের পক্ষেই রায় দেয়। (পক্ষে ৪২১ ভোট এবং বিপক্ষে ২৬৩ ভোট)। ক্ষমতায় তখন লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশকে খুশি করতে গিয়ে তিনি পুরো ব্রিটিশ জাতিকে এমন বোকা বানান। তৈরি করলেন মিথ্যা অতিরঞ্জিত গোয়েন্দা রিপোর্ট। যার সারমর্ম সাদ্দামের হাতে গোপন মারণাস্ত্র। কিন্ত যুদ্ধের পরই নিশ্চিত হওয়া গেল সব ডাহা মিথ্যা। ততদিনে ফিরে আসার পথ নেই। জাতি-বর্ণ গোষ্ঠীতে বিভক্ত ইরাক গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত। সাদ্দামকে সরাতে গিয়ে ইতিহাসের এমন রক্তাক্ত পরিণতি। দীর্ঘ ১৩ বছর পর শেফিল্ডের সেই স্মৃতি এখন অনেককেই তাড়িত করছে। তারা অনেকেই রেডিও-টিভিতে সেই দাবির করছে স্মৃতিচারণ । কারণ আজ দীর্ঘ এক যুগ পর আবারও প্রমাণিত হলো, প্রকাশিত হলো ইরাক যুদ্ধের অযৌক্তিকতা। সিলকট রিপোর্ট সেই অযৌক্তিকতার পাশাপাশি টনি ব্লেয়ারের যুদ্ধ পরবর্তী ভূমিকাকেও দায়ী করেছেন। সাদ্দামের সময়কালীন সেনা- সদস্যদের যুদ্ধপরবর্তী সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত না করা ছিল তাদের অন্যতম। সিলকট রিপোর্টে আইএসের উত্থানের জন্য ইরাক যুদ্ধকে দায়ী করা হয়। কারণ এই যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে ইরাকে জন্ম হয় আল কায়েদা ইন ইরাক। যার একটি বিশাল অংশ ইরাকের সাবেক সেনা-সদস্য। আল কায়েদা ইন ইরাক পরবর্তীতে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আইএস নামে আবির্ভূত হয়। সিলকট রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান এ সঙ্কটের মূল কারণ নিয়ে আলোচনা করছেন। দাবি তুলছেন দায়ী ব্যক্তিকে সামনে আনার। যার এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা ও হঠকারিতার বলি বিশ্বের তামাম মানুষ। খোদ লেবার প্রধানও এ দাবির পক্ষে একাত্ম। টনি ব্লেয়ারের শাস্তি জেরেমি করবিনও দাবি করছেন। আপাতত দৃষ্টিতে ফেঁসে যাচ্ছেন ব্লেয়ার। কোনভাবেই এ দায় তিনি এড়াতে পারেন না। এখন অপেক্ষা কেবল তাঁর শাস্তির।
×