ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে রফতানি হচ্ছে লটকন

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৩ জুলাই ২০১৬

বিদেশে রফতানি হচ্ছে লটকন

এ রহমান মুকুল, পঞ্চগড় ॥ বছর কয়েক আগে জংলি ফল হিসেবে অবজ্ঞা আর অবহেলার পাত্র ছিল সবুজ আর হলুদাভ ফল লটকন। পরিবারের ছেলেমেয়েরা খেলে খেত, আর সব চলে যেত কাক পক্ষির পেটে। এখন সেই চিত্র নেই। বদলে গেছে দৃশ্যপট। আর্থিকভাবে প্রচুর মুনাফা আর টক-মিষ্টি মিশ্রিত সুস্বাদু এই ফলটির কদর বেড়েছে। পঞ্চগড়ে লটকন এখন আর অবহেলার ফল নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছায় অনেক কৃষকই এখন লটকনের বাগান করছেন। সুপারি, লিচু বা অন্যান্য বাগানের ভেতরেই লটকন লাগিয়ে বাড়তি টাকা আয় করছেন পঞ্চগড়ের কৃষক। একবার চারা লাগাতে পারলেই হলো। পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যেই ফল দেয়া শুরু হয়। এর মধ্যে খুব একটা পরিচর্যা বা সার দিতে হয় না। লটকন চাষে খরচ নেই বললেই চলে। শুরুর দিকে প্রতি গাছে লটকন ধরে এক থেকে দুই মণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ফলনও বাড়ে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রের মতে, জেলায় ১৬ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। শৌখিন চাষী ছাড়াও শতাধিক বাগান গড়ে উঠেছে। সূত্রমতে, একটি লটকন গাছে ৫ থেকে ১০ মণ এবং প্রতি হেক্টরে ৫ থেকে ৮ টন লটকন উৎপাদিত হচ্ছে। এলাকার কৃষকরা বলছেন, এই বছরটা লটকনের বছর। কারণ চাহিদা অনেক। শুরুতেই দুই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এখন ২ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সদর উপজেলার পানিমাছ পুকুরী গ্রামের লটকনচাষী কসিরুল ইসলাম জানান, সুপারি বাগানের ভেতরে ৫-৬ বছর আগে ১১০টি লটকন গাছ লাগাই। এবার ৪৫টি গাছে ফল ধরেছে। ইতোমধ্যে ৪০ মণ লটকন মণপ্রতি ২ হাজার ১শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি। মনোহরদীঘি গ্রামের মোতাহার হোসেন ৬৫টি লটকন গাছের ফল বিক্রি করেছেন এক লখ ২০ হাজার টাকায়। তিনি জানান, তার কোন খরচ নেই। পুরোটাই লাভ। পঞ্চগড়ের লটকন এখন স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। বগুড়া, সিলেট, যশোর, মানিকগঞ্জ, খুলনায় যাচ্ছে বেশি। এছাড়া বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। লটকনকে ঘিরে ব্যবসায়িক বলয়ও গড়ে উঠেছে। অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই লটকন কিনছেন। ফলে কম-বেশি লাভ করছেন সবাই। স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু বকর ছিদ্দিক জানান, কৃষকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা মণ দরে কিনে ২৩শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করি। কৃষিবিদরা জানিয়েছেন, পঞ্চগড়ের মাটি অধিক মিষ্টি ও সামান্য টকজাতীয় লটকন চাষের উপযোগী। কারণ এ অঞ্চলের মাটিতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, লটকন খাদ্যমানে ভরপুর। এতে ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য ভিটামিনও রয়েছে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে লটকনের চাষাবাদ বাড়বে এবং কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।
×