ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, আটক ৪০

পর্তুগীজ সমর্থকদের উল্লাস, ফরাসীদের তাণ্ডব

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১২ জুলাই ২০১৬

পর্তুগীজ সমর্থকদের উল্লাস, ফরাসীদের তাণ্ডব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, এরই পাদদেশে অবস্থিত সেইন্ট ডেনিস। স্টেড ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাগতিক ফ্রান্সকে আরেকটি গৌরবময় শিরোপা জয়ে সমর্থন দিতে হাজির হয়েছিলেন দর্শক-সমর্থকরা। প্রায় ৭৬ হাজার দর্শক উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের নিরবতার কষ্ট উপহার দিলেন পর্তুগীজ ফরোয়ার্ড এডার। অতিরিক্ত সময়ে (ম্যাচের ১০৯ মিনিট) গোল করে তিনি ফ্রান্সকে শিরোপা জিততে দেননি। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবে স্টেডিয়ামে উপস্থিত গুটিকয়েক পর্তুগীজ ভক্ত-সমর্থকরা তখন থেকেই নাচে-গানে আনন্দ-উল্লাস করেছেন। অপরদিকে, হতাশ ফরাসী সমর্থকরা হয়ে গেলেন বেপরোয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে বোতল ছুড়ে দেয়। স্টেডিয়ামের ভেতরে যেতে পারেননি অনেকেই, তারাও ক্ষিপ্ত হয়ে বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও জলকামান ব্যবহারসহ আটক শুরু করে। প্রায় ৪০ সমর্থককে এ সময় গ্রেফতার করে পুলিশ। প্যারিস পুলিশ জানিয়েছে ম্যাচের আগেই পুরো স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায়। ফ্রান্স ও পর্তুগালের জার্সি পরে এবং পতাকা হাতে স্টেডিয়ামে আসেন দর্শকরা। কিন্তু অনেকেই স্থান সঙ্কুলান না হওয়াতে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারেননি। সে কারণেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত স্বাগতিক ফ্রান্স হেরে যাওয়াতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন দর্শকরা। তার ঢিল ও কাচের বোতল ছুড়তে শুরু করেন পুলিশ বাহিনীর দিকে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং পরে জলকামান ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে। সমর্থকরা আগুনও জ্বালিয়ে দেন। এরপর পুলিশ গ্রেফতার শুরু করে। পরবর্তীতে দমকলকর্মীরাও এসে আগুন নেভানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সমর্থকরা আবর্জনা এবং ঘের দেয়া বেড়াসমূহ ভেঙ্গে আগুন জ্বালিয়েছিলেন। প্রায় ৪০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ৯ জনকে লিও শহরের আদালতে নেয়া হয় উগ্র আচরণ এবং আগুন জ্বালানোর সরঞ্জাম বহনের জন্য। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন রাসায়নিক ছুড়ে ফেলার কারণে। গত সপ্তাহেও পুলিশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল তরুণের ওপর টিয়ারগ্যাস ছুড়ে ছিল ফ্রান্স ফাইনালে ওঠার পর তারা বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টির পর। এছাড়া ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যকার ম্যাচের দিনও উভয় দলের ভক্ত-সমর্থকগোষ্ঠী বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করেছিল। সে সময়ও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল মার্শেইর রাস্তা। সেই ঝামেলায় আহত হয়েছিল ৩৫ ব্যক্তি। ওই ঘটনায় ১৫০ রাশিয়ান সমর্থককে দোষী সাব্যস্ত করে ফরাসী আদালত। গত নবেম্বরে ফ্রান্সে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছিল এবং ১৩০ ব্যক্তি নিহত হয়। এরপর থেকেই যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে ফরাসী আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদা সতর্কাবস্থায় আছে। তবে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই মাঠে এসেছিল ফরাসী সমর্থকরা। সেটা না হওয়াতে হতাশায় মুষড়ে পড়ে স্বাগতিক দর্শকরা। প্রত্যেকেই আক্ষেপ জানিয়েছেন স্বাগতিকদের হারের পর। তবে উল্টো পরিস্থিতি ছিল পর্তুগীজ ভক্তদের। ফ্রান্সে প্রায় ১.২ মিলিয়ন পর্তুগীজের বসবাস। শুধু প্যারিসেই এর মধ্যে ৬ লাখ পর্তুগীজের বসবাস। দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই তাই উৎসবে মেতে ওঠেন তারা। স্টেডিয়ামের ভেতরেই তারা ‘লাল সমুদ্র’ গড়ে তোলেন জার্সির রংয়ে। লিসবনেও হয়েছে উৎসব। একটি ‘ফ্যান জোনে’ ফুটবল ভক্তরা চিৎকার করছিলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স, আমরা ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন্স!’
×