ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘এটা দলীয় নৈপুণ্যের ফল’

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১২ জুলাই ২০১৬

‘এটা দলীয় নৈপুণ্যের ফল’

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ পর্তুগাল মানে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, ইউরোতে দলটির আলো ছিল তাকে ঘিরে। স্বাগতিক ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালেও আলোচনায় ছিলেন কেবলই রিয়াল তারকা, হাজারও সমর্থক তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছিলেন। ইনজুরিতে পড়ে ১৪ মিনিটেই মাঠ ছাড়তে হয় পর্তুগীজদের চোখের মনিকে। এর চেয়ে বড় ধাক্কা আর কি হতে পারে? কষ্টের এই বিষয়টিকেই মন্ত্রে রূপ দিলেন একজন, তিনি কোচ ফার্নান্ডো সান্তোস। গোলশূন্য প্রথমার্ধের বিরতিতে শিষ্যদের ডেকে বললেন, ‘চলো রোনাল্ডোর জন্য শিরোপাটা জিতি!’ জেগে উঠল পর্তুগাল, যদিও জয়টা (১-০) এলো একেবারে শেষ মুহূর্তে, তবে গুরুর ডাকে বদলে গেল চেহারা। প্রথমদিকে কোণ্ঠাসা পর্তুগাল ভাল খেলল শেষ বেলায়, কাজে লাগাল অন্তিম সুযোগ। তাতেই প্রথমবারের মতো রোনাল্ডোর হাতে উঠল বৈষয়িক কোন শিরোপা। রোনাল্ডোকে প্রশংসায় ভাসালেও ইতিহাস গড়ার পর সান্তোস শোনালেন ঐক্যের গান- বললেন, ‘এ সাফল্য দলীয় নৈপুণ্যের ফল।’ শিরোপা জয়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পর্তুগীজ কোচ বলেন, ‘সবাই জানে ক্রিশ্চিয়ানো কে? যে কোন মুহূর্তে, যে কোন পরিস্থিতিতে গোল করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা তার রয়েছে। তবে আমি সবসময় বলে এসেছি, আমরা একটা দল, এই সাফল্য দলীয় নৈপুণ্যের ফসল।’ অনুভূতিটাকে হংস-শাবকের সঙ্গে তুলনা করে ৬১ বছর বয়সী আরও যোগ করেন, ‘এই মুহূর্তে নিজেকে অরূপ হংস-শাবকের মতো মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে সমুদ্রে ভেসে ভেসে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করছি। পুরো পর্তুগাল দলটাই তো তাইই! সবকিছু সামলে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। দেশে ফিরব, মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখব ...।’ রোনাল্ডোর ওপর বাড়াবাড়ি রকমের প্রত্যাশায় কিছুটা যেন বিরক্ত কোচ ‘রোনাল্ডো হচ্ছে এই দলে হাঁসের ওই পাখার মতো, যার ওড়ার সৌন্দর্য দর্শনীয়। কিন্তু ফুটবল দলীয় খেলা, সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য এখানে সবাইকে এক হতে হয়। ফ্রান্সে আসার আগেও বলেছি, আমার দলে ট্যালেন্টের অভাব নেই, আমাদের কেবল প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি দৌড়াতে হবে। ওরা সেটা করে দেখিয়েছে। আমি দারুণ খুশি।’ ২০১২ ইউরো ও ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রীসের (কোচ) পারফর্মেন্স (নকআউটে উত্তোরণ) নিজের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন সান্তোষ, ‘সত্যি বলতে গ্রীসকে দেখে আমরা দুই বছর আগে লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম, সবাইকে বলেছিলাম, আমাদের ফাইনালে ওঠার সামর্থ্য রয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত শিরোপা উৎসবে কেমন ক্রেজি ব্যাপার!’ ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়া বিধ্বস্ত পর্তুগালকে বলতে গেলে নতুন করে দাঁড় করিয়েছেন সান্তোস। এমনকি ইউরোর বাছাই পর্বে দুর্বল আলবেনিয়ার কাছে ০-১ গোলে হেরেছিল রোনাল্ডোরা! এরপরই সান্তোস জাদু পর শুরু ফাইনাল পর্যন্ত টানা ১৪ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অপরাজিত তারা। শিরোপাজয়ী ম্যাচটাকে জীবনের সেরা ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি, ‘ইউরোর ফাইনাল, শিরোপা ... আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা।’ বিশ্বকাপ এবং ইউরো বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে পাওলো বেন্তে সরে দাঁড়ানোর পর পর্তুগালের নতুন কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান ৫৯ বছর বয়সী সান্তোস। তার আগে চার বছর গ্রীসের কোচ ছিলেন সান্তোস, দলটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয়, অভিজ্ঞতাটা দারুণভাবে কাজে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তড়িৎ প্রকৌশলী সান্তোস ১৯৮৭ সালে পর্তুগীজ ক্লাব এসতুরিলের হয়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর পোর্তোকে পর্তুগীজ লিগা ও এইকে এথেন্স গ্রিক কাপ জিতিয়েছেন, কাজ করেছেন রোনাল্ডোর সাবেক ক্লাব স্পোটিং লিসবনের হয়েও। পর্তুগালের দায়িত্ব নেয়ার পর শুরুটা হয়েছিল ফ্রান্সের কাছে প্রীতি ম্যাচে ০-১এ হার দিয়ে, কাকতালীয়, সেই স্টেড ডি ফ্রান্স মাঠে, সেই ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরোর শিরোপা জয়! মধুর প্রতিশোধের পর সান্তোস নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ভাবতেই পারেন।
×