ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে জয়সূচক গোল করে হয়ে গেলেন পর্তুগালের জাতীয় বীর

‘জিরো থেকে হিরো এডার’

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১২ জুলাই ২০১৬

‘জিরো থেকে হিরো এডার’

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আগেভাগেই কাঁদতে হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। ২০০৪ সালে প্রথম ইউরো খেলে রানার্সআপ হওয়ার পরও কাঁদতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু এবারের কান্না ম্যাচের মাত্র ২৫ মিনিটের সময়ই হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে মাঠের বাইরে যাওয়ার কারণে। তবে সি আর সেভেনের অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিকে আনন্দে উচ্ছ্বসিত ঝলমল চোখে পরিণত করেছেন এডার। রবিবার ইউরো ফুটবলের ফাইনালে সেইন্ট ডেনিসের স্টেড ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচনা করলো পর্তুগাল। স্বাগতিক ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরো শিরোপা জিতল তারা। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার কোন বড় আন্তর্জাতিক আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গৌরবময় এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো পর্তুগীজরা। সেই ইতিহাসের রচয়িতা হয়ে গেলেন ২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এডার। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য ড্র হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ায়। সবমিলিয়ে ম্যাচের ১০৯ মিনিটের সময় ২৫ গজ দূর থেকে একটি আচমকা শটে তিনি লক্ষ্যভেদ করে দেশকে গৌরব উপহার দেন। ৯৫ বছরের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম শিরোপা, ইউরোপের সেরা হয়েছে পর্তুগাল। অবিস্মরণীয় এই অর্জনের পুরো কৃতিত্বই এডারের। তাই এখন তিনি পর্তুগালের জাতীয় বীর। এডার দাবি করেছেন রোনাল্ডো তাকে নাকি আগেই বলেছিলেন পর্তুগালের হয়ে জয়সূচক গোলটি তিনিই করবেন। আর সেটাই অনুপ্রাণিত করেছিল তাকে। ২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আজারবাইজানের বিরুদ্ধে অভিষেক ঘটেছিল এডারের। কিন্তু কোন সময়ই প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পাননি। রবিবার ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালেও রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছেন ৭৯ মিনিট পর্যন্ত। এরপর উদীয়মান তরুণ রেনাটো সানচেসের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন এডার। সি আর সেভেন নেই, এ কারণে তখন মরিয়া হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে পর্তুগাল। সংগ্রামী প্রথমার্ধ শেষে দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা নিজেদের ফিরে পেয়েছিল পর্তুগীজরা। বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ফরাসীদের সঙ্গে সমানে-সমান পাল্লা দিতে থাকে। এডারকে ৭৯ মিনিটের সময় মাঠে নামান কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। সেটা নির্ধারিত সময়ে কাজে লাগেনি। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে ওই এডারই পর্তুগালকে তাদের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে মূল্যবান এবং ঐতিহাসিক গোলটি উপহার দিয়েছেন। মটিনহোর পাস থেকে বল পেয়েছিলেন মাঝমাঠে। বেশি বিলম্ব করেননি এডার। ২৫ গজ দূর থেকেই আচমকা তীব্র শট নিয়েছেন। ম্যাচে ফরাসী অধিনায়ক ও গোলরক্ষক হুগো লরিস বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত সেভ করে দলকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু এডারের এই তীব্র গতির আচমকা শট আর রুখতে পারেননি। লক্ষ্যভেদ করেন এডার! তখন ছিল অতিরিক্ত সময়ের ১৯ এবং ম্যাচের ১০৯ মিনিট। অধিনায়ক রোনাল্ডোর কান্নাটাকে আনন্দে পরিণত করেছেন তিনি এর মাধ্যমে। দেশের ফুটবল ভক্ত সমর্থকদের প্রথমবারের মতো গর্বিত ভঙ্গিতে উন্নত মস্তকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ করার উপলক্ষ্য দিয়েছেন এডার। ২০০৪ সালে একবারই মাত্র কোন বড় আসরের ফাইনাল খেলেছিল পর্তুগাল। সেবার ইউরো ফাইনালে গ্রীসের কাছে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ১৯ বছর বয়সী তরুণ রোনাল্ডোর। ১২ বছর পর অধিনায়ক রোনাল্ডো পর্তুগীজ অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জয় করে নিজের সেই দুঃখ ভুললেন এবং পর্তুগীজদেরও অশ্রু মুছিয়ে দিলেন। আর এর পুরো কৃতিত্বই ২৮ বছর বয়সী এডারের। তিনি ফাইনালের আগে দেশের হয়ে মাত্র ২৮ ম্যাচ খেলে ৩ গোল করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথমটি করেছিলেন গত বছর এবং চলতি বছর করেছিলেন বাকি দুই গোল। আর এবার ফাইনালে তিনি দেশকে চ্যাম্পিয়ন করার গোলটি উপহার দিলেন নিজের ক্যারিয়ারের ২৯তম ম্যাচে খেলতে নেমে। ১৯২১ সালে ফুটবল ইতিহাসে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা পর্তুগাল সবচেয়ে বড় সাফল্যটি পেল ৯৫ বছর পর। এই ফ্রান্সের বিপক্ষে ১৯৭৫ সালের পর আর কোন ম্যাচই জিততে পারেনি পর্তুগাল এবং টানা ১০ পরাজয়ও বরণ করেছিল। আর বড় দুঃখগুলোর মধ্যে আছে ১৯৮৪ ও ২০০০ সালের ইউরোতে এবং ২০০৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নেয়া। সব প্রতিশোধ এবার ইউরো ফাইনালে নিল পর্তুগাল এডারের অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক এই গোলটির মাধ্যমে। এডার জানিয়েছেন অধিনায়ক রোনাল্ডোর মন্তব্যই তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এ বিষয়ে এডার বলেন, ‘রোনাল্ডো আমাকে বলেছিলেন তুমি দেশের হয়ে জয়সূচক গোলটি করবে। তিনি আমার মধ্যে শক্তিটা জাগিয়েছিলেন, অনুপ্রাণিত করেছিলেন। আর এটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ ২৫ গজ দূর থেকে গোল করার বিষয়ে এডার বলেন, ‘এটা হচ্ছে সেই গোল যেটা আমি ইউরো শুরুর প্রথম মিনিট থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। সব পর্তুগীজের জন্য যত শ্রম আমরা দিয়েছি সেটা ছিল চমৎকার। উপযুক্ত পুরস্কার পেয়েছি আমরা এবং অবশ্যই আমাদের অভিনন্দিত হওয়া উচিত।’
×