ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

জাপা এমপি হান্নান ও তার ছেলেসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট পেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১২ জুলাই ২০১৬

জাপা এমপি হান্নান ও তার ছেলেসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট পেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এমএ হান্নান (৮০) ও তার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুম- এ সাত ধরনের অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আট আসামির মধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছে। অন্যদিকে তিনজনকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। আসামিদের মধ্যে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাংসদ হান্নানের ছেলে মোঃ রফিক সাজ্জাদ (৬২), ডাঃ খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ (৬৯), মিজানুর রহমান মিন্টু (৬৩), মোঃ হরমুজ আলী (৭৩) গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। পলাতক রয়েছেন- ময়মনসিংহের বাসিন্দা মোঃ ফখরুজ্জামান (৬১), মোঃ আব্দুস সাত্তার (৬১) ও খন্দকার গোলাম রব্বানী (৬৩)। সোমবার ধানম-িতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন দুই সমন্বয়ক এমএ হান্নান খান ও সানাউল হক। প্রতিবেদন তৈরিতে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন মোহাম্মাদ মতিউর রহমান। ২০১৫ সালের ১৯ মে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন এ মামলা করেন। ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক পরে এজাহারটি গ্রহণ করে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। তদন্ত সংস্থা ওই বছরের ২৮ জুলাই তদন্ত শুরু করে এ বছরের ১১ জুলাই তা শেষ করে। ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলে ওই দিনই হান্নানকে তার গুলশানের বাড়ি থেকে এবং ছেলে রফিক সাজ্জাদকে ওই এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই দিন গ্রেফতার করা হয় ডাঃ খন্দকার গোলাম সাব্বির, মিজানুর রহমান মিন্টু ও হরমুজ আলীকে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, অভিযুক্ত এমএ হান্নানের রামবাবু রোডের ৫৯নং বাড়িকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করতেন। এমএ হান্নান ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের পর মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়ান। প্রথম শহর মুসলিম লীগের সদস্য এবং ১৯৬৫-৬৬ সালে জেলা যুগ্ম-সম্পাদক হন। ১৯৬৫ সালে তিনি মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে কোতোয়ালি-ত্রিশাল আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। হান্নান ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইল থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৬-৭৭ সালে মুসলিম লীগের কার্যক্রম শুরু হলে তিনি জেলার যুগ্ম-সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান হান্নান। দুই বছর পর দলের সভাপতিম-লীর সদস্য হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হন হান্নান। হান্নানের বিরুদ্ধে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম। এমএ হান্নানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ (চার্জ) এনেছে তদন্ত সংস্থা। অভিযোগগুলো নিম্নে দেয়া হলো অভিযোগ-১ ॥ ১৯৭১ সালের ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহের গোলকীবাড়ী বাইলেনের প্রখ্যাত ভাস্কর আব্দুর রশিদকে অপহরণ, নির্যাতনের পর জীপগাড়ির পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নির্মমভাবে হত্যা ও লাশ গুম। অভিযোগ-২ ॥ একাত্তরের ২ আগস্ট ত্রিশাল থানার বৈলর হিন্দুপল্লী ও মুন্সীপাড়ায় অগ্নিসংযোগ, সেন্টুকে গুলি করে হত্যা ও দু’জন হিন্দুকে গুলি করে আহত, শহীদ আঃ রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে হত্যার ঘোষণা। অভিযোগ-৩ ॥ একাত্তরের ৭ থেকে ৯ আগস্টের মধ্যে বৈলরের আঃ রহমান মেম্বারকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুম। অভিযোগ-৪ ॥ ১৯৭১ সালের ১৭ নবেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে খন্দকার আব্দুল আলী রতনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুম। অভিযোগ-৫ ॥ ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে মোঃ আবেদ হোসেন খানকে আটক, নির্যাতন ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর। এছাড়া ৭ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে কেএম খালিদ বাবুকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন। হান্নানের ছেলে রফিক সাজ্জাদের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে কোন তথ্য না দেয়া হলেও সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, ‘এমপি হান্নানের বিরুদ্ধে মামলাটি অত্যন্ত হাইপ্রোফাইল। তার ছেলে সাজ্জাদের বয়স তখন কম হলেও বাবা-ছেলে মিলে ময়মনসিংহ অঞ্চলে রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। এছাড়া অন্য ছয় আসামির বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
×