ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত সচিব বৈঠক আগামীকাল

রামপালে এক শ’ মেও সোলার বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ জুলাই ২০১৬

রামপালে এক শ’ মেও সোলার বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে

রশিদ মামুন ॥ রামপালে ১০০ মেগাওয়াটের সোলার বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি। দুই দেশের বিদ্যুত সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে আগামীকাল বুধবার। দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং ও স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের বিদ্যুত সচিব প্রদীপ কুমার পূজারীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এজন্য ঢাকায় আসছেন। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ত্রিপুরা থেকে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ত্রিপুরাও এই বিদ্যুত দিতে সম্মত। তবে বিষয়টিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। বুধবারের বৈঠকে বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আনতে চায় বাংলাদেশ। সচিব পর্যায়ের সম্মতির পর ভারত সরকার এ বিষয়ে অনুমোদন দিলেই ত্রিপুরা বাংলাদেশকে বিদ্যুত দিতে পারবে। গত ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির উদ্বোধন করেন। এ সময় ত্রিপুরা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার টেলিকনফারেন্সে সংযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে সরবরাহ করার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর ওই আহ্বানের পর এবার বিদ্যুত আমদানির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হচ্ছে। যেহেতু সকল অবকাঠামো রয়েছে তাই বিদ্যুত রফতানিতে ভারত সম্মত হলেই তা আনা সম্ভব। জানতে চাইলে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, বৈঠকে রামপাল কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের অগ্রগতি ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে চলমান সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এরমধ্যে একেবারে নতুন রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে সৌর বিদ্যুত এবং ত্রিপুরার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। এর বাইরে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি, রামপাল কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র এবং বিদ্যুতের আন্তঃসংযোগ নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, রাপমাল বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যে আপত্তি তুলেছিল এখন তার অবসান হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ চুক্তি হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, রামপাল কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য সকল বিষয় চূড়ান্ত রয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির পরে দরপত্র আহ্বান করে চায়না বাংলাদেশ পাওয়ার কোম্পানি পায়রাতে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে। কিন্তু এখনও রামপালের চুক্তিই করা সম্ভব হয়নি। পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের চেয়ে সরকারের অভ্যন্তরীণ জটিলতাকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস্ লিমিটেড (ভেল) সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। ভেল এজন্য পারফরমেন্স গ্যারান্টি পিজিও জমা দিয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য ভারতের এক্সিম ব্যাংক ঋণও দিতে সম্মত হয়েছে। তবে সুন্দরবন ধ্বংসের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে পরিবেশবাদীদের আন্দোলন চলছে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে চুক্তি করার ৪১ মাসের মধ্যে। আর দ্বিতীয় ইউনিট শেষ করতে হবে ৪৬ মাসের মধ্যে। এর বাইরে রামপালে ১০০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এই বিদ্যুত কেন্দ্রটিকে রামপালের ২য় ইউনিট বলা হচ্ছে। এখানে অধিগ্রহণ করা ৫০০ একর জমির উপর সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১০০ মেগাওয়াটের সৌর প্যানেল বসানো হবে। এজন্য অন্তত ৩৫০ একর জমির প্রয়োজন হবে। এর বাইরে বৈঠকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব থেকে পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুত নেয়ার জন্য গ্রিড লাইন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে নির্দিষ্ট রুটের অনুমোদন দেয়া হয়। ভারত অরুণাচল প্রদেশে জল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে এই বিদ্যুত অন্য এলাকায় সরবরাহ করতে চায়। বাংলাদেশ সেখান থেকে কিছু বিদ্যুত ক্রয়ের আগ্রহ দেখায়। যদিও এ বিষয়ে আলোচনা খুব বেশিদূর আগায়নি। বিদ্যুত বিভাগ বলছে ভারত থেকে এখন ভেড়ামারা দিয়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। এর বাইরে একই এলাকা দিয়ে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। এজন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) ভেড়ামারাতে আরও একটি হাইভোল্টেজ ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন নির্মাণ করছে। বৈঠকে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতের বেসরকারীখাত থেকে এই বিদ্যুত ক্রয় করা হবে। এজন্য ভারত সরকার এরমধ্যে অনুমোদনও দিয়েছে।
×