ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এপিজি সম্মেলন দু’মাস পিছিয়ে ঢাকা থেকে ওয়াশিংটন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ জুলাই ২০১৬

এপিজি সম্মেলন দু’মাস পিছিয়ে ঢাকা থেকে ওয়াশিংটন

এম শাহজাহান ॥ অর্থপাচার-জঙ্গী অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের বার্ষিক সম্মেলন এবার যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দু’মাস পিছিয়ে সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২৩ জুলাই এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের (এপিজি) এ সম্মেলন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এপিজির প্রধান কার্যালয় থেকে ১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সম্মেলনটি যুক্তরাষ্ট্রে করার জন্যও সেই দেশের পক্ষ থেকে এপিজির কাছে আবেদন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই আবেদন গ্রহণ করেছে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত এপিজির প্রধান কার্যালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, জঙ্গী অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ, অর্থপাচার প্রতিরোধ এবং যেকোন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অর্থায়ন বন্ধে প্রতিবছর এপিজির বার্ষিক সভা করা হয়ে থাকে। সংস্থাটির এবারের সভায় ৪১টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, আটটি দেশ এবং ২৮টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রায় চার শ’ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। এই সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গুলশান ও শোলাকিয়ায় দু’দফা জঙ্গী হামলার কারণে সম্মেলনের সময়সূচী পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভেন্যুও পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রে করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তুতি যথেষ্ট ভাল ছিল। কিন্তু তারপরও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এখানে আর এপিজির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বার্ষিক সভা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এপিজি হেডকোয়ার্টার্স। তিনি বলেন, অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে এপিজির সম্মেলনটি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে আইন প্রণয়নসহ কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বাংলাদেশের উপর খুশি। তিনি বলেন, জঙ্গী অর্থায়ন ও এবং অর্থপাচার বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিভাগ রয়েছে। এটা এখন বিশ্বমানের। এ বিভাগের কর্মতৎপড়তার কারণে বাংলাদেশ ধূসর তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। এটা না হলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশে পরিণত হতাম। তখন কেউ বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাইত না। জানা গেছে, ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) দেয়া ৪০টি শর্ত পূরণেও বাংলাদেশ কাজ করছে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ে অর্থায়ন সম্পর্কিত মামলা দায়েরের জন্য দুটি পৃথক যৌথ তদন্ত ইউনিট গঠন করেছে সরকার। যৌথ এ তদন্ত ইউনিটে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইডি) প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এ তদন্ত ইউনিট দুটি দায়েরকৃত মানব পাচার ও সোনা চোরাচালান সম্পর্কিত মামলা এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনে যেসব মামলা হয়েছে সংঘটিত সেসব সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে অর্থায়নের যোগসূত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জানা গেছে, অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক এপিজির সঙ্গে সমন্বয়, তদারকি, এ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানসহ সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করে থাকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর আগে, ২০১৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে এসে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন খতিয়ে দেখে এপিজি। সেই সফরের প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তারা একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে। সেখানে এপিজি কিছু সমস্যা তুলে ধরেছে। সেসব সমস্যা অনেকটাই সমাধান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী সভায় তা জানানো হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
×