ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কেবিনেটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

পাড়া মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং মনিটর করবেন এমপি মন্ত্রীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ জুলাই ২০১৬

পাড়া মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং মনিটর করবেন এমপি মন্ত্রীরা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় গণসচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইউনিয়ন, পাড়ায়, মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা এবং তা মনিটরিংয়ের জন্য তিনি মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কারা, সেখানে কী হয়, তা খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বেগম জিয়ার নির্বাচনের দাবি নিয়েও বৈঠকে সমালোচনা করা হয়। এছাড়া মন্ত্রিসভা কৃষিতে আইসিটির প্রয়োগের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৬ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন, পাড়া-মহাল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। আপনারা যারা যার নির্বাচনী এলাকার বাইরেও যে যেখানে যাবেন সেখানে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তাকেও এই কার্যক্রমে অংশ নিতে বলবেন। বৈঠকে তিনি গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু শোলাকিয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি এবং অপর তিন সংসদ সদস্য মিলে নিহত দুই পুলিশের এবং নিহত মহিলা ঝর্ণা রানীর পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেয়ার কথা ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন এ কথা মন্ত্রিসভাকে অবহিত করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে খবর চলে আসে। আমি ডিসিকে বলেছিলাম, দ্রুত ঈদের নামাজ শেষ করতে। নামাজ শেষ করার আগে কোন অভিযান না চালাতে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশের পর ডিসি দ্রুত নামাজ পড়ানো এবং জোরে বয়ান দেয়ার কথা বলেন। ইমামও দ্রুত নামাজ শেষ করেন। নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিরা ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কিছুই জানতে পারেনি। জানতে পারলে হুড়োহুড়িতে হতাহতের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হঠাৎ করে ঘটনা ঘটেছে। পুলিশও তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। মন্ত্রিসভার এক সিনিয়র সদস্য বৈঠকে বলেন, পর পর দুটি ঘটনায় জঙ্গীদের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। মানুষ জঙ্গীদের কোন অবস্থায় সাপোর্ট করছে না। তিনি বলেন, গুলশানের হামলা হলো টার্গেট কিলিং। জঙ্গীরা ইতালি, জাপান ও ভারতের নাগরিকদের হত্যা করেছে। এই তিনটি দেশই বাংলাদেশের পরম বন্ধু দেশ। অন্য কোন দেশের নাগরিককে তারা টার্গেট করেনি। এটাও ভাবার বিষয়। অপর এক সদস্য বলেন, ফ্রান্স, ব্রাসেলস ও ইস্তান্বুলে ‘হাইসিকিউরিটি প্লেসে’ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী এই মুহূর্তে নির্বাচন চায়। দেশে জঙ্গী হামলা চলছে, এর মধ্যে তিনি নির্বাচন দেয়ার কথা বলেন। দেশের প্রতি তার কোন দায়িত্ব কর্তব্য আছে বলে মনে হয় না। তার শুধু দরকার ক্ষমতা। ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করে খাবে। দুর্নীতিবাজ পুত্রকে আবার দেশে ফিরিয়ে এনে লুটপাটের মচ্ছব করবে। দেশে বিদেশীরা আসবেন না বলে অনেকে বলছেন, এ প্রসঙ্গে উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশীরা আসবেন না এটা ঠিক নয়। ফ্রান্সের (প্যারিসে) ঘটনার পর সেখান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে। বিদেশীরা আসবেন। তবে আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে। জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে হবে। বৈঠকে এক মন্ত্রী সন্ত্রাসী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কথা বললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত ‘এগ্রেসিভ’ হওয়ার দরকার নেই। কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার দরকার কি। সেখানে কারা কি করছে তা মনিটরিং করে ব্যবস্থা নিলে তো হয়। এতে প্রতিষ্ঠানও বাঁচবে, আবার সমস্যাও দূর হলো। মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়, মসজিদে-মাদ্রাসায় মনিটরিং করা হচ্ছে। আপনারাও আপনাদের মতো করে মনিটরিং করবেন। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প সেক্টরের দিকে খেয়াল রাখতে। কোন রকম বিভ্রান্তি যাতে না হয়। এদিকে কৃষিতে আইসিটির প্রয়োগের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৬ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ আইনটি ১৯৭৬ সালে অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করা হয়। এরপর ১৯৮৪ ও ১৯৯৬ সালে এটি সংশোধন করা হয়। সামরিক শাসনামলের হওয়ায় সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটিকে আইনে পরিণত করতে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওই আইনগুলোর কার্যকারিতা রক্ষা করতে পরে নতুন আইন করার উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার, যার অংশ হিসেবে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় আসে। পাশাপাশি কৃষি গবেষণাকে ‘আরও আধুনিক ও যুযোপযোগী’ করার বিষয়টি মাথায় রেখে এই খসড়া করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কৃষি গবেষণা ১৯৭৬ সালে যেখানে ছিল, এখন আর সেখানে নেই। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটা করা হয়েছে।’ প্রস্তাবিত আইনে সংযোজিত নতুন বিষয়ের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ, ইনস্টিটিউটে নতুন জাতের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা, কৃষিতে আইসিটির প্রয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শস্য উৎপাদনের জন্য পঞ্জিকা তৈরি ও প্রকাশের কথাও রয়েছে। খসড়া থেকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রয়োজনীয় দেশী ও বিদেশী প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষা প্রদানে এই ইনস্টিটিউট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যদি এই বোর্ডের সদস্য বা পরিচালক সরল বিশ্বাসে কোন কাজ করেন, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানি বা ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। আগের অধ্যাদেশে ১৮টি ধারা থাকলেও নতুন আইনের খসড়ায় আরও চারটি ধারা যোগ হয়েছে।
×