ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মিত হচ্ছে শক্ত অবকাঠামো

যমুনার ভাঙ্গনরোধে তিন শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১২ জুলাই ২০১৬

যমুনার ভাঙ্গনরোধে তিন শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

সমুদ্র হক ॥ যমুনা পাড়ের মানুষের ভাঙ্গন ও বন্যার শঙ্কা দূর হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ি থেকে রৌহদহ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে তিনশ’ দুই কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি (একনেক) এই কাজের অনুমোদন দিয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর (নেভি) তত্ত্বাবধানে জরুরী ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নেভির ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। সহযোগিতা দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবোর বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ২০১৮ সালের ৩০ জুন এই কাজ শেষ করার সময়সীমা দেয়া হয়েছে। এই শক্ত কাঠামোটি হবে দীর্ঘস্থায়ী। গত মৌসুমে চন্দনবাইশা-রৌহদহ পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা ভেসে যায়। কুতুবপুর চন্দনবাইশা কামালপুর ইউনিয়নের পাকা সড়ক ব্রিজ কালভার্ট কয়েক হাজার ঘরবাড়ি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়। এই অবস্থায় যমুনা পাড়ের হাজারো মানুষ যখন অনিশ্চয়তার উৎকণ্ঠায় দিন গুজরান করে মাথায় হাত তুলে বসেছিল, সেই সময়ে এগিয়ে আসেন ওই এলাকার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান। তিনি বিষয়টি নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং প্রকল্পটি একনেক বৈঠকে তোলার সার্বিক তদারকি করেন। শেষ পর্যন্ত একনেক বৈঠকে তা অনুমোদিত হয়। সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় ২শ’ ৬৩ কোটি টাকারও বেশি অর্থের দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১২ এপ্রিল এই কাজ বাস্তবায়ন করার অনুমোদন পায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। ১৭ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু হয়। মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ে বর্ষার এই মৌসুমে ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে তীর সংরক্ষণের জন্য প্রায় ১৪ লাখ বস্তা জিওটেক্স বরাদ্দ দিয়ে তা নির্দিষ্ট স্থানে বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ভাঙ্গনের পয়েন্টগুলো এবং বন্যার পানি প্রবেশ করাতে পাড়ে এমন জায়গাগুলোতে সিসি ব্লক বসানো হচ্ছে। এই ব্লক নৌকা করে বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়ে জড়ো করে রাখা হচ্ছে। সূত্র জানায়, এই সিসি ব্লক দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে নদী তীর সংরক্ষণের মূল কাজ ও রিভেটমেন্ট নির্মিত হবে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন রোধে প্রতিটি আড়াইশ’ কেজি ওজনের বালি ভর্তি জিওটেক্স বস্তা ফেলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্দিষ্ট তীরে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার বস্তা ডাম্পিং করে ভাঙ্গন ও বন্যা প্রোটেকশন দেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, জিওটেক্স ডাম্পিংয়ের মূল কাজ শেষ হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ জিওটেক্স ফেলা হয়েছে। এখন পয়েন্ট মনিটরিং করে বস্তা ফেলা হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে সেটেলাইট ইমেজ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে তীর সংরক্ষণের প্রতিটি কাজই হবে সেটেলাইট থেকে ডিজিটাল ইমেজ নিয়ে এবং তা পর্যালোচনা করে। ভাঙ্গন ঠেকাতে যমুনার তীরে এমন কর্মযজ্ঞ এবং তোড়জোড়ে দশ গাঁয়ের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। চন্দনবাইশা বাজারের কয়েকজন বললেন, বংশ পরম্পরায় যমুনার ভাঙ্গন দেখে এসেছেন। গত শতকে ৯০’র দশকের মধ্যভাগে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার হাইউন্দাই কোম্পানি কালিতলা হার্ড পয়েন্ট গ্রোয়েনসহ কিছু শক্ত কাঠামো নির্মাণ করলে এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তবে তা বেশিদিন থাকেনি। ভুল নক্সার কারণে এক বছরের মধ্যে হার্ড পয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়ে ধসে পড়লে তা মেরামত করা হয়। পরে সারিয়াকান্দি থেকে ধুনট হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বেশ কিছু স্থাপনা নির্মিত হয়। তারপরও আনপ্রেডিক্টেবল যমুনা নদীকে বশ মানানো যায়নি। এবার যে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা যমুনার গতিবিধি দেখে।
×