ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসেছে ১,৪৯২ কোটি ৬২ লাখ ডলার

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ভাটা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১২ জুলাই ২০১৬

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ভাটা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে ভাটা পড়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৯ কোটি ডলার (প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা) বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। একদিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানিতে ‘স্থবিরতা’, অন্যদিকে মার্কিন মুদ্রা ডলারের তুলনায় টাকার মান শক্তিশালী হওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ কম এসেছে। ফলে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীরা এক হাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিটেন্স কমেছে ৩৯ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর ২০১৩-১৪ সালে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। তবে বিগত চার বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে; এ সময় রেমিটেন্স অতিক্রম করেছিল দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিন যুগেরও বেশি সময়ের পর প্রথমবারের মতো ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে। তবে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কিছুটা ইতিবাচক হলেও সদ্য বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবারও ধস নামল প্রবাসী আয়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া জুন মাসে ঈদের কেনাকাটার জন্য প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স বেশি পাঠিয়েছে। ফলে মে মাসের তুলনায় জুনে বেড়েছে রেমিটেন্স প্রবাহ। জুন মাসে ১৪৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার বা ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩৯ কোটি ডলারের রেমিটেন্স আসে। আগস্টে আসে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১৩৫ কোটি ডলার আসে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবর, নবেম্বর ও ডিসেম্বরে আসে যথাক্রমে ১১০ কোটি, ১১৪ কোটি ২৫ লাখ এবং ১৩১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছিল ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিল ১১৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার। মার্চ মাসে ১২৮ কোটি ১১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এপ্রিলে এসেছিল ১১৯ কোটি ১১ লাখ ডলার। মে মাসে ১২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার এবং সর্বশেষ জুন মাসে ১৪৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। রেমিটেন্স আশানুরূপ হারে না বাড়লেও রফতানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি আগের বছরের তুলনায় বাড়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গেল অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রিজার্ভের এ পরিমাণ দ্বিতীয়। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে দেশের ৮ মাসের বেশি আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। রেমিটেন্স কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে একমাত্র রিজার্ভ তথা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।’ কয়েকটি কারণে রেমিটেন্স কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে। এতে আমদানিকারকদের সুবিধা হলেও রেমিটেন্স ও রফতানিতে প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। অর্থাৎ ইনকাম কমে যাওয়ায় রেমিটেন্স পাঠানো কমে গেছে।’ দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রফতানিতে ‘স্থবিরতা’ চলছে। সরকার নানা দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এর দৃশ্যমান কোন ফল দেখা যাচ্ছে না। সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসীদের অনেকে জমি কেনা ও ব্যবসা করার জন্য রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু এখন জমি কিনতে রেজিস্ট্রেশনের সময় নানান সমস্যার কারণে প্রবাসীদের আগ্রহ কমেছে। এছাড়াও দেশে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগ মন্দা, বিদেশ থেকে শ্রমিক ফিরে আসা, হুন্ডির তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে গেছে।’ উল্লেখ্য, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন।
×