ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জরায়ুর প্রদাহের চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১২ জুলাই ২০১৬

জরায়ুর প্রদাহের চিকিৎসা

এ্যান্ডোমেট্রাইসি শব্দটি ইংরেজী শব্দ, যার বাংলা অর্থ জরায়ুর অন্তর বেষ্টকের প্রদাহ। এ্যান্ডোমেট্রাইসি সাধারণত মাসিকের সময় অসহনীয় ব্যথা। কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে দংশেনি যারে ব্যথার জ্বালা না দেখান যায়, না বোঝান যায়। এমনকি আধুনিক মেশিনের সাহায্যেও দেখান যায় না। মহিলারা চাপা স্বাভাবের হওয়ায় শরীরের সমস্যা লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে এবং ওষুধও খেতে চায় না। এমনও মহিলা আছে যে, নিজের সমস্যার কথা মনের মানুষ তথা স্বামীকে পর্যন্ত বলতে চায় না। মহিলাদের অনেকে তলপেটে ব্যথায় ভোগেন। বিশেষ করে মাসিক হওয়ার আগে তলপেটে প্রচ- ব্যথা শুরু হয়। মাসিক হওয়ার সময় ব্যথা খুব বেড়ে যায় এবং মাসিক শেষে ব্যথা কমে যায়। এ ব্যথার সঙ্গে কিশোরী বয়সের মাসিকের সূচনার মিল থাকে না। যৌন মিলনের সময় বা পরে তলপেটে প্রচ- যন্ত্রণা হয়। জরায়ুর ভেতরে যে লাইনিং থাকে অর্থাৎ যাকে প্রাচীর বলা যায় ‘লাইনিং’ তথা জরায়ুর ভেতরকার ঝিল্লি জরায়ুর বাইরে যোনি দেশের বিভিন্ন অংশে ঢুকে যায়। ওভারি বা ডিম্বাশয়েও পেরিটোনিয়মে ঢুকতে পারে। উল্লেখ্য, পেরোটিনিয়াম হলো এক ধরনের ঝিল্লি যা পেটের ভেতরের সব অঙ্গকে ঢেকে রাখে। সেই ঝিল্লি জরায়ুর বাইরের অংশে ঢুকে পড়তে পারে। পায়ু ও জরায়ুর মধ্যের অংশে ঢুকে যেতে পারে। আবারও বৃহদান্তের গায়ে লেগে যেতে পারে। ফলে মাসিক ঋতুচক্র জরায়ুর বাইরেও হতে পারে। কিন্তু সেই রক্তস্রাব বাইরে বের হওয়ার পথ না পেয়ে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে বা সিস্ট তথা ছোট ছোট রক্তপূর্ণ থলির মতো হয়ে যায়। পরবর্তীকালে রক্ত থেকে জলীয় অংশ শোষিত হয়ে যায়। সেই জমা রক্তের রং চকোলেটের মতো গাঢ় হয়। তাই একে চিকিৎসকরা চকোলেট সিস্ট বলে। এই সিস্ট শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সিস্ট হয় ডিম্বাশয়ের জরায়ুর পেছন দিকে এবং জরায়ুর ধারে। এই রোগের ওভারি, ফ্যালোপিয়ান টিউব। পেরিটোনিয়াম আক্রান্ত হলে এটি জট পাকিয়ে সন্তান ধারণের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। সাধারণত সন্তান জন্ম দেয়ার বয়সের (১৮-৪৫) বছর পর্যন্ত এ্যান্ডোমেট্রাইসি দেখা যায়। মনে রাখতে হবে জরায়ুর অন্তর বেষ্টকের প্রদাহ এ্যান্ডোমেট্রাইসির মূল সমস্যা হলো ব্যথা। এ্যান্ডোমেট্রাইসি লক্ষণ : ১. অনিয়মিত মাসিক। ২. মাসিকের সময় তীব্র যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা। ৩. বেদনায় সহবাসের সময় স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেয় না। ৪. মল-মূত্র ত্যাগ কালে যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত বের ও ব্যথা হয়। ৫. হাত, পা, শরীর আগুনে পোড়ার মতো জ্বালা করে। ৬. প্রসাবের সময় ও পরে তীব্র যন্ত্রণাদায়ক বেদনা। ৭. জরায়ুর গ্রিক ফোলা ও শক্ত থাকে। ৮. জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন ও কপাটি ব্যবহার করার কারণে এ্যান্ডোমেট্রাইসি হতে পারে। তলপেটে, কোমরের নিচে ব্যথা হয় এবং সে ব্যথা লাগাতার চলতে থাকে। মূত্রথলি এবং পায়ুদার লাগোয়া এলাকাতেও ব্যথা হয়। এ সময় জীবনে ক্লান্তি, হতাশা, বিষণœতায় যেন স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে থাকে এবং মানসিক অবসাদ কুরে কুরে খায়। মন লাগে না কোন কাজেই। আগে অপারেশন হয়েছে সেই কাটা এলাকা থেকেও কারও কারও এ্যান্ডোমেট্রাইসি হয়। এ্যান্ডোমেট্রাইসি কেন হয় : আমরা সোজাভাবে বলে থাকি, মাসিকের সময় জরায়ুর এ্যান্ডোমেট্রিয়াম তথা জরায়ুর ভেতরকার ঝিল্লির পর্দা পুরু হয়ে যায়। শুক্রাণু বা ডিম্বাণু যাতে জরায়ুর দেয়ালে গেঁথে যেতে পারে সেজন্যই এই প্রাচীর পুরু হয়ে থাকে। কিন্তু গর্ভযোগ না ঘটলে অর্থাৎ ডিম্ব না তৈরি হলে পুরু হয়ে যাওয়া এই প্রাচীর খসে পড়ে। কারণ এসব জরায়ুর অন্তর বেষ্টকে প্রদাহ কোষ ফ্যালোপিয়ান টিউব দিয়ে পেটের মধ্যে ঢুকে গেল এই এ্যান্ডোমেট্রিয়াল কোষ সেখানে বাড়তে থাকে এবং পরবর্তীকালে মাসিকের সময় সেখান থেকে পেটের ভেতরে রক্তস্রাব হয়। সেই রক্তস্রাব জমে জমে এ্যান্ডোমেট্রাইসি হয়। যারা অনেক দিন ধরে গর্ভরোধ করে থাকেন তাদেরই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্তরা অনেকেই পায়খানা করার সময় ব্যথা টের পান। কারও কারও শরীরে জ্বর জ্বর ভাবও দেখা যায়। বার বার প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়ে। জরায়ু বা ওভারি অপারেশনের পর পেটের কাটা জায়গায় বা নাভিমূলে এই রোগ নীল রঙের পিত্ত তৈরি করে। প্রতিবার মাসিকের সময় এসব পিত্ত তথা সিস্ট থেকে রক্তস্রাব হওয়ার ফলে সে জায়গায় ফুলে ওঠে ও চামড়ার ওপর থেকে তা নীলবর্ণ দেখতে হয়। সিজারিয়ান সেকশন, টিউবেকটামির অস্ত্রোপচারের দাগ। এপিসিয়েটমির দাগ থেকেও এ্যান্ডোমেট্রাইসি হয়। কিছু মহিলার শরীরে জিনগত কারণেও এ্যান্ডোমেট্রাইসি হয়। ডিম্বাশয় (ওভারি) যদি আক্রান্ত হয় তাহলে ডিম্বাণুর ব্যাহত হবে। ভ্রƒণ তৈরি হবে না। জরায়ুতে এ্যান্ডোমেট্রাইসি হলে সেখানে ভ্রƒণ হতে পারে না। রোগ বাড়তে থাকলে ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ওভারি জট পাকিয়ে ফ্যালোপিয়ান টিউব অবরুদ্ধ হয়ে যায়। ডিম্বাণু প্রবেশ ও নির্গমন বন্ধ হয়ে যায়। কখনও কখনও ফ্যালোপিয়ান টিউব ও ওভারি জট পাকিয়ে যায়। বড় সিস্ট হলে অন্ত্রনালি, পায়ু, মলাশয় সব জট পাকিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসক ভেতরটা পরীক্ষা করে সিস্টের অবস্থান অনুভব করতে পারেন। রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা আল্ট্রাসনোগ্রাফি, সিটিস্ক্যান, এমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমে এ্যান্ডোমেট্রাইসি শনাক্ত করা যায়। হোমিও চিকিৎসায় এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ডাঃ এস এম আবদুল আজিজ মোবাইল : ০১১৯৫ ৪৩ ৫৮ ৪৮ ০১৯১১ ০২০ ৬৬৪
×