ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

দ্য কিং অব পপ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১২ জুলাই ২০১৬

দ্য কিং অব পপ

বিংশ শতাব্দীর সাড়া জাগানো সঙ্গীত তারকা ‘দ্য কিং অব পপ’ মাইকেল জ্যাকসন চির বিদায় নেন সাত বছর আগে। পপসঙ্গীতের ইতিহাসে তিনি সূচনা করেছিলেন এক নতুন অধ্যায়। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই সঙ্গীত জগতে মাইকেল জ্যাকসনের সফল অগ্রযাত্রা। ষাট দশকে তিনি ও তাঁর চার ভাই-এর ‘দ্য জ্যাকসন ফাইভ’ সঙ্গীতগোষ্ঠী পেয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। মাইকেল ছিলেন এই গোষ্ঠীর প্রধান গায়ক। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার গ্যারি শহরে ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট এক আফ্রো-আমেরিকান পরিবারে জন্ম হয় মাইকেল জ্যাকসনের। তাঁর বাবা জো জ্যাকসন পেশায় ছিলেন ইস্পাত শ্রমিক ও মুষ্টিযোদ্ধা। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় একটি ব্যান্ডদলে গিটার বাজাতেন তিনি। জ্যাকসনের মা ক্যাথরিন জ্যাকসন বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। পিয়ানো বাজানোতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন ক্যাথরিন। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। অবশ্য তাঁর যমজ দুই ভাই জন্মের কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। শৈশবে ভাই-বোনদের সঙ্গে দুরন্তপনা করেই কেটেছে জ্যাকসনের সময়। বোন লা টয়াকে জ্বালাতন করতে প্রায়ই তার বিছানায় মাকড়সা ছেড়ে দিতেন জ্যাকসন। তিনি পাঁচ ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে একটি কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিক এলাকায় বড় হন। এরপরেও অবশ্য সাফল্যের শিখরে উঠেছিলেন জ্যাকসন। পেয়েছিলেন সঙ্গীত জগতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ‘গ্র্যামি’, তাও আবার ১৩ বার। বাবা জো জ্যাকসন খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর সন্তানদের তারকা হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাই ১৯৬৪ সালে, পাঁচ ছেলে জেরমাইন, জ্যাকি, টিটো, মেরলন ও মাইকেলকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য জ্যাকসন ফাইভ’ সঙ্গীতগোষ্ঠী। ১৯৬৯ সালে কিংবদন্তি সোল-লেবেল রেকর্ড কোম্পানি ‘মোটাউন’-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় এই গ্রুপ। ২০০৯ সালের ২৫ জুন ‘কিং অব পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুসংবাদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ তার ঠিক কিছুদিন আগেই ‘দিস ইজ ইট’ নামের বেশ কয়েকটি সঙ্গীত কনসার্ট করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। পপসঙ্গীতের ইতিহাসে জ্যাকসন সূচনা করেছিলেন এক নতুন অধ্যায়। সারা জীবনে ৭৫ কোটিরও বেশি এ্যালবাম বিক্রি হয় তাঁর। ১৯৮২ সালে মাইকেল জ্যাকসনের প্রথম একক এ্যালবাম ‘থ্রিলার’ বের হয়, যার দশ কোটি ৮০ লাখ কপি বিক্রি হয়। এ্যালবামটির ব্যবসায়িক সাফল্য সঙ্গীত জগতে সৃষ্টি করে এক নতুন রেকর্ড আর মাইকেল জ্যাকসনকে বলা হতে থাকে ‘পপ সম্রাট’। পরবর্তীতে ‘ব্যাড’-র ৩ কোটি আর ‘ডেঞ্জারাস’-এর দেড় কোটি কপি বিক্রি হয়। ১৯৭৯ সালে মাইকেল জ্যাকসন তাঁর প্রথম কসমেটিক অপারেশনটি করান। এবং তার পরপরই একটি এ্যাক্সিডেন্টে তাঁর নাক ভেঙে যায়। তিনি ত্বকের সমস্যায়ও ভুগছিলেন। নিজে কৃষ্ণাঙ্গ ত্বকের জন্য গর্বিত হলেও, ক্রমশই তাঁর ত্বক সাদা হতে থাকে। এর পর থেকে প্রায়ই তাঁকে মুখোশ পরা অবস্থায় দেখা যেত, ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে। ১৯৯৪ সালে পপ সম্রাট বিয়ে করেন এলভিস প্রেসলির কন্যা লিসা মারি প্রেসলিকে। এ বিয়ে মাত্র ২০ মাস টেকে। তাই এটা কি শুধুই লোক দেখানো না অভিনয়? প্রশ্ন উঠেছিল মিডিয়ায়। এমনকি প্রকাশ্যে তাঁদের প্রথম চুম্বনটিও নাকি ছিল ম্যানেজারের শিখিয়ে দেয়া? এর উত্তরে লিসা অবশ্য বলেছিলেন, ‘আমি গভীরভাবে মাইকেলের প্রেমে পড়েছিলাম’। লিসার সঙ্গে ডিভোর্সে পর মাইকেল জ্যাকসন তাঁর ডাক্তারের সহকারী ডেবি রোকে বিয়ে করেন। এই দাম্পত্য নাকি ছিল ব্যবসায়িক কারণে, অর্থাৎ মাইকেল জ্যাকসন সন্তানের পিতা হতে চেয়েছিলেন বলেই বিয়ে করা। ডেবি দুই সন্তানের জন্ম দেন। তবে তৃতীয় সন্তানটির জন্ম হয়েছিল ‘আর্টিফিশিয়াল ইনসেমিনেশান’-এর মাধ্যমে। ১৯৯৬/৯৭ সালে মাইকেল জ্যাকসন শেষবারের মতো কনসার্ট করতে ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’-এ বের হন। ‘হিস্টরি’ এ্যালবামটি নিয়ে ৫৮টি শহরে ৮২টি কনসার্ট করেন, মাতিয়ে রাখেন প্রায় ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ভক্তকে। সে সময় দারুণ সফল জ্যাকসন ভারতেও আসেন। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুয়ায়ী তিনিই ছিলেন সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী।
×