ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমন্বয়হীনতা রোধে

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১২ জুলাই ২০১৬

সমন্বয়হীনতা রোধে

যে কোন সময় যে কোন রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি, ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা রাখা, নর্দমার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে পড়ে রাস্তাজুড়ে উপচে পড়া, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার ঢিবি, খানাখন্দপূর্ণ প্রধান সড়ক যুগ যুগ ধরে এমনই দৃশ্যের সঙ্গে বসবাস এবং বেড়ে ওঠা ঢাকা মহানগরবাসীর। সহ্য ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত আজ বাসিন্দারা। অবস্থা এমন যে একবার যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা কাঁটাছেঁড়া হয়েছে, তার মেরামতে বছর গড়িয়ে যায়। মাসের পর মাস ধরে চলে নানা সংস্থার কথিত উন্নয়নের কাজ। মনে হয়, এসব কাজ চলবে অনন্তকাল ধরে। মানুষ দুর্ভোগ, যাতনা, যন্ত্রণা, কষ্ট যতই পোহাক, তাতে কিছু যায় আসে না সংশ্লিষ্টদের। আর এসব দেখার কোন দায়ভারও যেন নেই তাদের। এই এক বিড়ম্বনা পোহাতে পোহাতে দিবস-রজনী পার করেন নাগরিকরা। একই রাস্তা এক বছরে বার বার খোঁড়াখুঁড়ির নজির রয়েছে। আজ ওয়াসা, কাল টিএ্যান্ডটি, পরশু বিদ্যুত, গ্যাস, তার পরদিন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল প্রভৃতি সংস্থা নির্বিকারভাবে কেটে চলছে রাস্তা, করছে খোঁড়াখুঁড়ি। উৎপাত আর আপদ-মুসিবতের মিশেলে তারা নিরন্তর একই কাজ করে যাচ্ছে। কারও সঙ্গে নেই কারও সমন্বয়; যে যার খেয়াল খুশিমতো যখন তখন খুঁড়ছে সড়ক। এর থেকে পরিত্রাণ বা নিস্তার নেই কারও। একই রাস্তা একবার ওয়াসা কেটে মাটি ভরাট করে, তো পরদিন আসে গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এভাবে বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। রাজধানীতে সরকারের সর্বমোট ২৬টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বছরের যে কোন সময়ই উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নামে কাজ শুরু করে। এসব কাজ শুরু ও শেষ করতে কয়েক মাস থেকে বছরও গড়ায়। বর্ষাকালে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে বিধায় নাগরিকদের রাস্তায় চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় একটি সংস্থার কাজ শেষে ওই স্থানে মাটি চাপা দিতে না দিতেই একই স্থানে পুনরায় অপর একটি সেবাদানকারী সংস্থার কোদাল-শাবলের ঘা পড়তে শুরু করে। এর বাইরে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করা, ওয়াসার নালা, নর্দমা, খাল খনন, পানি সরবরাহের লাইন চালু করা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন নতুন রাস্তা তৈরিসহ অন্যান্য কর্মযজ্ঞ, বিটিআরসির কেবল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প সারা বছর চলমান থাকে। উন্নয়নের নামে এক রাস্তাই বার বার খোঁড়াখুঁড়ি করছে বিভিন্ন সংস্থা। কাজ শেষে কোন রকমে মাটি ভরাট দিয়েই উন্নয়ন কাজ সাঙ্গ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সড়কে খানাখন্দ, কাদা জল ও জলাবদ্ধতা ভোগান্তির সীমা ছাড়ায় নগরবাসীর। ঢাকায় দুই সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অবস্থাও একই। সবখানেই সেবা সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এসব সেবা সংস্থার ওপর সিটি কর্তৃপক্ষের কোন কর্তৃত্ব নেই। সাধারণ কোন সিদ্ধান্তও এসব সংস্থাকে দিতে পারে না সিটি কর্তৃপক্ষ। মেয়ররা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে, সংবাদপত্রগুলোও লেখালেখি করছে, কিন্তু টনক তাতে নড়ে না কারও। কারণ এখানে আর্থিক সুবিধা মেলে। অর্থশ্রাদ্ধের এমন বিপুল যজ্ঞ হতে পকেট ভারি করার মওকা কেউ হারাতে চায় না। তাই কোন সংস্থাই আগ্রহী নয় সমন্বয় সাধনে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে। জারি করতে হয়েছে কঠোর নিষেধ। বলা হয়েছে, সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কাজের অগ্রগতি বিষয় কর্পোরেশনকে অবহিত করতে হবে। কাজে আনতে হবে গতিশীলতা। কিন্তু সমন্বয় সাধনের এ সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টরা কতটা মানবেন, তা প্রশ্নবোধক থেকে যায়। অতীতেও প্রধানমন্ত্রীর অনেক নির্দেশ মানা হয়নি। এ জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয়েছে বলে জানা যায় না। নাগরিক স্বার্থে নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় জরুরী। এ জন্য আইন প্রণয়ন জরুরী। উন্নয়ন প্রকল্প দীর্ঘসূত্রতা হ্রাসে জরুরী তাই সমন্বয় সাধন। জনগণকে দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করা হোক দেশ, জাতি ও জনগণের জন্য।
×