ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

জঙ্গীর উন্মত্ততা ও এক নেত্রীর নীরবতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১২ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীর উন্মত্ততা ও এক নেত্রীর নীরবতা

এই কিছুদিন আগে দিয়াবাড়ির খালে ৭-৮টি ট্রাভেলব্যাগ ভর্তি অতি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ পাওয়া গেল। তার মাত্র এক সপ্তাহ আগে পুলিশের জঙ্গী গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হলো, যদিও আমরা জানতাম ঢাকঢোল পিটিয়ে আর যাই হোক জঙ্গী দূরে থাকুক চোর-পকেটমারও ধরা যায় না। ফল তেমনই হয়েছে। যদি কেউ নৈতিকতা ও ঔচিত্যবোধ হারায়, পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণ করে তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিচারবোধ দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই ফাঁক দিয়ে অপরাধীরা অপরাধ সংঘটিত করতে সক্ষম হয় সহজেই। চট্টগ্রামের জঙ্গীদমনে, সন্ত্রাসী নির্মূলে যে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার সুনাম অর্জন করেছিল, সেই দক্ষ ও তরুণ কর্মকর্তার স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হলো। এরপর এই তরুণ পুলিশ কর্মকর্তাকে হয় জেলে যেতে হবে নতুবা পদত্যাগ করতে হবে বলে যারা প্রচার করেছেন তারা আর যাই হোক বাবুলের জঙ্গীদমনে সন্তুষ্ট ছিল কিনা এমন প্রশ্ন করা যায়। তারা জঙ্গীদমনের জন্য যদি কাউকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে বুঝতে হবে তারা জঙ্গীপ্রেমী পুলিশ। এদের নাকের গোড়ায় জঙ্গীরা বিশজন কেন, এক শ’ জনকেও হত্যা করে নির্বিঘেœ চলে যেতে পারত, যদি না জঙ্গীদমনে আন্তরিক পুলিশ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন, রবিউল হোসেন এবং তাদের মতো অনেক সেনা, পুলিশ, র‌্যাব কর্মকর্তা না থাকত। এবার প্রশ্ন উঠেছে, গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় যেখানে বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য সরকার নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, সেখানে এই জঙ্গীরা পরিকল্পিত হামলা সংঘটিত করতে সক্ষম হলে এর দায়ভার প্রথমত কাদের ওপর বর্তায়? এতবড় মাপের ইন্টেলিজেন্স ফেইলিওরের দায় কাদের ওপর বর্তায়? গুলশানে একটি জঙ্গী হামলা হবে। এটি গোয়েন্দারা জানে না, এটি অবিশ্বাস্য! কেননা জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেদিনই জাপানী নাগরিকদের রাতে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করে নির্দেশ জারি করেছিল। তারা জানল আর বাংলাদেশী গোয়েন্দারা এটা জানবে না, তথ্য আদান-প্রদান হয়নি, এটা কিভাবে বিশ্বাস করবে জনগণ? জঙ্গীরা পরিকল্পকদের সহায়তায় বিপুল অস্ত্রের মধ্যে অল্প পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, দা, কিরিচ নিশ্চয় অনেক দিন ধরে আশপাশের জামায়াত, বিএনপিপন্থী ফ্ল্যাটের মালিকদের কোন ফ্ল্যাটে জমা করেছে বা করার সম্ভাবনা আছে। ঐ এলাকার নিরাপত্তাদানকারী পুলিশ যদি জামায়াত-বিএনপিপন্থী হয় অথবা অর্থের কাছে বিক্রি হয় অথবা ভালভাবে চেক করার কাজটি না করে থাকে, তাহলে এসব অস্ত্র জমা করা, মাসখানেক ধরে অবশ্যই সম্ভব। মনে রাখতে হবে ঐ রেস্টুরেন্টের বেশ কাছে পাকিস্তানের দূতাবাস এবং বিএনপি নেত্রীর কার্যালয় অথবা বাসভবনও রয়েছে। এ ধরনের জঙ্গী হামলা পশ্চিমা ইন্টারেস্টের ওপর সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনার তথ্য বিদেশী দূতাবাস সূত্র জানতে পেরছিল বলে বেশকিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সে রাতে বলা হয়। সুতরাং এটিকে একটি বড় মাপের গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলেই গণ্য করতে হবে যখন হামলাটি সাধারণ কোন স্থানে না হয়ে বিদেশী দূতাবাসগুলোর অবস্থান গুলশানে সংঘটিত হয়। এখনকার এসব জঙ্গী হামলায় জঙ্গীরা জিম্মিদের সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করে, ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। প্যারিস, তুরস্ক, বেলজিয়াম, স্পেন, আমেরিকায় তাই হয়েছে। কেননা এদের বড় কোন দাবি আদায়ের বিষয় থাকে না, বরং এদের লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশি মানুষ মুহূর্তের মধ্যে খুন করা যায়। তাই, ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ট্র্যাডিশনাল নিয়মে জিম্মিদের প্রাণ রক্ষার জন্য সময় ক্ষেপণকারী সংলাপ করার চিন্তা বাদ দিতে হবে। এটি এখন অচল হয়ে গেছে। বর্তমান জঙ্গীর হাত থেকে জিম্মিদের প্রাণ রক্ষা করতে দ্রুততম সময়ে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করাই বেশি কাজ দেবে। এতে অধিক সংখ্যক জিম্মির প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হবে। ধরে নিতে হবে জিম্মিদের অনেকে হামলায় মারা যাবে, কিন্তু দ্রুত আক্রান্ত হলে, জঙ্গীরা হামলার মুখে পড়ে প্রতি হামলা করত এবং ফলে অনেক জিম্মি নানা পথে ও উপায়ে আত্মরক্ষা করতে পারত। যে জঙ্গীদের জীবিত গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মাধ্যমে পুরো ষড়যন্ত্র এবং তাদের নির্দেশদাতা ও প্রকৃত পরিকল্পকদের পরিচয় সম্পর্কে তথ্য উদ্ঘাটন দ্রুত করা সম্ভব হবে। এদের প্রাণ রক্ষা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুনীদের আশ্রয়, প্রশ্রয়দাতাদের গ্রেফতার করতে হবে। কেননা, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ম্লান করেছে এ ঘটনা। প্রধানমন্ত্রীর জঙ্গীদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে কারা পরিহাস করল, কারা দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করে বর্তমান সরকারের প্রতি ভারত, চীন ও জাপান এবং পশ্চিমাদের ক্ষুব্ধ করতে চাইছেÑ সেটিও এবার বের করা প্রয়োজন। বিপরীতে, দেখা গেল জামায়াতমিত্র, পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাকারী নেত্রী পরপর দুদিন বিবৃতি দান ও সংবাদ সম্মেলন করল, যা করতে আগে তাকে কখনও দেখা যায়নি। এমনকি বিডিআর হত্যাকা-েও নয়, পেট্রোলবোমায় হত্যার পর তো নয়ই। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল ও ঝলমলে। শোকের কোন চিহ্নমাত্র তার মুখে ছিল না। এসব কিছু তদন্ত করে দেখতে হবে। ইংরেজী মাধ্যম স্কুল এবং মাদ্রাসায় চধৎবহঃরহম ধহফ ঠধষঁব বফঁপধঃরড়হ পড়ানোর অনুরোধ অনেক আগে এক ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে করেছিলাম। এখন আবারও স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়টি পড়াতে অনুরোধ করব। প্রয়োজনে আমি নিজে হ্যান্ড আউট তৈরি করে সহযোগিতা দেব। নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে এবং সে দায়িত্বটি সবার।
×