ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে ফ্রান্স পরাজিত ১-০ গোলে

ইউরোর নতুন চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১১ জুলাই ২০১৬

ইউরোর নতুন চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ একটি দলের সুযোগ নতুন ইতিহাস গড়ার, আরেকটি দলের ১৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরা হওয়ার সুযোগ। তবে অতীতে যাই ঘটুক, শিরোপা জয়ের অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে রবিবার রাতে সেইন্ট ডেনিসের স্টেড ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স-পর্তুগাল। অতিরিক্ত সময়ে এডারের গোলে স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পর্তুগাল। ম্যাচটি নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য (০-০) থাকে। এরপর ১০৯ মিনিটের সময় মটিনহোর পাস থেকে ২৫ গজ দূর থেকে তীব্র শটে লক্ষ্যভেদ করেন এডার (১-০)। ওই গোলেই প্রথমবারের মতো ইউরো তথা কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ে পর্তুগাল। যদিও বলের নিয়ন্ত্রণ স্বাগতিক ফ্রান্স নিজেদের পায়েই রেখেছিল বেশিরভাগ সময়। আর ম্যাচের ২৫ মিনিটের সময়ই অন্যতম ভরসা ও অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোবিহীন হয়ে যায় পর্তুগীজরা। হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন সিআর সেভেন। নিজেদের মাটিতে দাপটের সঙ্গে খেলেও দুর্বল হয়ে পড়া পর্তুগালের বিরুদ্ধে গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় ফ্রান্স। পর্তুগাল কখনও শিরোপা জিততে পারেনি বড় কোন টুর্নামেন্টের। ফ্রান্স ১৯৮৪ ও ২০০০ সালে হয়েছিল ইউরো চ্যাম্পিয়ন। শেষ পর্যন্ত দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে ১-০ গোলে জিতে শিরোপা ঘরে তুলল পর্তুগাল। আর স্বাগতিক ফ্রান্স হলো রানার্সআপ। স্টেড ডি ফ্রান্স স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৮২ হাজার। স্বাগতিক ফ্রান্সের দিকেই সিংহভাগ সমর্থন থাকলেও এবার নতুন ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল পর্তুগীজদের। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সবেমাত্র দ্বিতীয়বার কোন ফাইনাল খেলতে নেমেছে তারা। ২০০৪ সালের ইউরো ফাইনাল খেলেও গ্রীসের কাছে হেরে গিয়েছিল তারা। সেটা ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর প্রথম ইউরো। তখনকার ১৯ বছর বয়সী রোনাল্ডোকে কেউ সেভাবে না চিনলেও এখন তিনি এই ৩১ বছর বয়সে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। পরিচয়টা ‘সিআর সেভেন’ বললেই সারাবিশ্বের ফুটবল ভক্তরা চেনে। তার দিকে যেমন নজর ছিল, তেমনি স্বাগতিক ফরাসিদের ৭ নম্বর জার্সিধারী তরুণ এ্যান্টোইন গ্রিজম্যানের দিকেও দৃষ্টি ছিল সবার। কিন্তু লড়াই শুরুর পর বলের নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ সময় নিজেদের পায়েই রাখল স্বাগতিক ফ্রান্স। ১৯৭৫ সালের পর পর্তুগালের বিরুদ্ধে কোন হারের রেকর্ড যেমন নেই, তেমনি ১৯৮৪ আর ২০০০ এর পর আরেকবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মোক্ষম সুযোগ তাদের ঘরের মাটিতে। তাই উজ্জীবিত হয়ে খেলে শুরু থেকেই চেপে ধরে পর্তুগালকে। ৯ মিনিটের সময়ই বাঁ-প্রান্ত থেকে আসা ক্রসে দুর্দান্ত এক হেড নিয়েছিলেন গ্রিজম্যান। কিন্তু পর্তুগীজ গোলরক্ষক প্যাাট্রিসিও কর্ণারের বিনিময়ে এ যাত্রা রক্ষা করেন পর্তুগালকে। ১৪ মিনিটের সময় এরচেয়েও বড় দুঃসংবাদ হানা দেয় পর্তুগীজ শিবিরে। পায়েটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে হাঁটুতে আঘাত পান রোনাল্ডো। দীর্ঘক্ষণ তাকে সাইড লাইনের বাইরে শুশূষা করে সুস্থ করার চেষ্টা হলেও আর নামতে পারেননি তিনি। অধিনায়ক এবং দলের অপরিহার্য ফরোয়ার্ড রোনাল্ডোকে বদলে ২৫ মিনিটের সময় রিকার্ডো কারিসমাকে নামাতে বাধ্য হয় পর্তুগাল। আর ফ্রান্সের মুহুর্মুহু আক্রমণ চলছিলই। ৩৩ মিনিটের সময় পায়েটের পাস থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত শট নিয়েছিলেন মুসা সিসোকো। কিন্তু এবারও গোলরক্ষক প্যাট্রিসিওর দক্ষতায় বেঁচে যায় পর্তুগাল। ৩৮ মিনিটের সময় রেনাটো সানচেস ও ন্যানি যৌথ প্রচেষ্টায় একটি আক্রমণ শাণিয়েছিলেন। কিন্তু রাফায়েল গুয়েরেরো বল পেয়ে ২০ গজ দূর থেকে একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট শট খেলে সম্ভাবনাময় আক্রমণটিকে নষ্ট করেন। শেষ হয় গোলশূন্য প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধেও নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখে ফরাসিরা। রোনাল্ডোবিহীন পর্তুগীজদের ওপর আরও চেপে বসার প্রয়াস চালায়। ৫০ মিনিটের সময় পায়েটের একক প্রচেষ্টা কাঁপন তোলে পর্তুগীজ রক্ষণভাগে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সেটাকে সফল করতে পারেননি। ৫৮ মিনিটের সময় বক্সের কিছুটা বাইরে বল পেয়েছিলেন গ্রিজম্যান। কিন্তু ভালভাবে শট নেয়ার সুযোগ পাননি। তার দুর্বল শট সরাসরি প্যাট্রিসিওর হাতে চলে যায়। তবে পুরোটা সময় দুর্ভেদ্য প্যাট্রিসিও ৬৫ মিনিটের সময় পরাস্ত হতে পারতেন। বাম প্রান্ত থেকে আসা হঠাৎ ক্রসে গ্রিজম্যানের দুর্দান্ত হেড সবাইকে পরাস্ত করেছিল এবং চমকেও দিয়েছিল। কিন্তু সেটি গোলবারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়। ৭৪ মিনিটের সময় আরেকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে গোল পেয়েই যাচ্ছিল ফরাসিরা। অলিভিয়ের গিরড বক্সের মধ্যে বল পেয়ে তীব্র শট নিয়েছিলেন, কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে তা রুখে দেন পর্তুগীজ গোলরক্ষক প্যাট্রিসিও। ৮০ মিনিটের সময় পুরো ম্যাচের সবচেয়ে ভাল সুযোগটা পেয়েছিল পর্তুগাল। ন্যানির শট লাফিয়ে উঠে রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস। ফিরতি বলে নেয়া কারিসমার শটটাও রুখে দিয়ে লরিস বাঁচিয়ে দেন ফ্রান্সকে। ৮৩ মিনিটে সিসোকোর দূরপাল্লার তীব্র শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন প্যাট্রিসিও। ইনজুরি টাইমের একেবারে শেষভাগে ভাগ্যের কারণে বেঁচে যায় পর্তুগাল। ছোট বক্সের ভেতরে বল পেয়ে আন্দ্রে পিয়েরে গিগন্যাক পরাস্ত করেছিলেন সবাইকে। কিন্তু শটটি সাইডবারে লেগে প্রতিহত হয়। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের খেলা গোলশূন্যভাবেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে গোল পেয়ে যায় পর্তুগাল। ১০৯ মিনিটের সময় ২৫ গজ দূর থেকে গোল করেন এডার (১-০)।
×