ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্প্রেড বেড়েছে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ

চিঠি দেয়ার পরও নির্দেশ মানেনি ২৩ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১১ জুলাই ২০১৬

চিঠি দেয়ার পরও নির্দেশ মানেনি ২৩ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার। সর্বশেষ মার্চ মাসে ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, আগের মাসেও যা ছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের সুদহার মে মাসে কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও সরকারী, বেসরকারী ও বিদেশী ২৩ ব্যাংকের স্প্রেড এখনও ৫ শতাংশের উপরে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। এর পরে রয়েছে বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের। জানা গেছে, গত ২১ জুন ২৪টি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি দিয়ে স্প্রেডের হার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে স্প্রেড কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্প্রেড প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এপ্রিলে ব্যাংকগুলোর স্প্রেডের গড় হার ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ থাকলেও মে মাসে তা দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে মার্চে ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড হার ছিল ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক স্প্রেড কমিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও গত চার মাসে স্প্রেড বেড়েছে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল পর্যন্ত স্প্রেড ৫ শতাংশের উপরে ছিল ২৫টি ব্যাংকের। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা আমলে নিয়ে মে মাসে স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে বেসরকারী খাতের এক্সিম ব্যাংক ও বিদেশী কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন। আর নির্দেশনা এখনও আমলে নেয়নি ২৩টি ব্যাংক। একই সময়ে দেশের মোট ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৬টি ব্যাংকেরই স্প্রেড বেড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কমিয়ে দেয়া দুঃখজনক, অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। যারা নির্ধারিত আয় করে কিংবা অবসর ভাতা ব্যাংকে জমা রাখে, তাদের সুদের হার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর একটি সিন্ডিকেট আছে, যারা কারসাজি করে আমানতের সুদের হার কমাচ্ছে। তিনি বলেন, স্প্রেড কমানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে লাভ নেই। বরং এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে পরিচালনা খরচ, বাহুল্য খরচ ও কুঋণ কমাতে বাধ্য করতে হবে। এগুলো কমালেই প্রভিশন কস্ট কমে যাবে, কস্ট অব ফান্ড কমে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলোর সম্পদ ও মুনাফা দুই-ই বাড়বে। এগুলো করতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র অগ্রণী ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি। গত এপ্রিলে ব্যাংকটির স্প্রেড ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ থাকলেও মে মাসে তা ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার দশমিক ১১ শতাংশ কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে ঋণের সুদহার ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। ব্যাংকটির স্প্রেড হার ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্প্রেড এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া মে মাসে ওয়ান ব্যাংকের ৬ দশমিক ২৫, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৯৩, উত্তরা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৯০, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৩, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪২, পূবালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৩, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৪, সিটি ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৯, এবি ব্যাংকের ৫ দশমিক শূন্য ৩ ও ব্যাংক এশিয়ার ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ স্প্রেডের তথ্য পাওয়া গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায়। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে মধুমতি ব্যাংকের স্প্রেড ৫ দশমিক ৮৪, মেঘনা ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭৬, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৬ দশমিক ৫৯, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৫ ও এনআরবি ব্যাংকের ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। বিদেশী খাতের ব্যাংকের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বর্তমান স্প্রেড ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ব্যাংকটির ঋণের সুদহার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। দেশের ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে আমানতে সবচেয়ে কম (শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ) সুদ প্রদানকারী সিটি ব্যাংক এনএর স্প্রেড ৬ দশমিক ২৯ ভাগ। এছাড়া বিদেশী এইচএসবিসির ৫ দশমিক ৪৯ ও উরি ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ স্প্রেড রয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণে সুদহার সবচেয়ে বেশি দি ফারমার্স ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া ঋণের বিপরীতে ইউনিয়ন ব্যাংক ১৪ দশমিক ১৪, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ১৩ দশমিক ৭৯, ব্র্যাক ব্যাংক ১৩ দশমিক ৩৭ ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ সুদ নিয়ে থাকে।
×