ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১২-২১ জুলাই পাড়া মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন

রাজধানীতে কাল ১৪ দলের জঙ্গীবিরোধী শোডাউন

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১০ জুলাই ২০১৬

রাজধানীতে কাল ১৪ দলের জঙ্গীবিরোধী শোডাউন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়াসহ দেশজুড়ে গুপ্তহত্যা, জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে আগামীকাল সোমবার রাজধানীতে বড় ধরনের শো-ডাউন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। পতাকা হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটিয়ে প্রতিরোধ সমাবেশ করবে আদর্শিক এই জোটটি। এছাড়া আগামী ১২ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দশ দিনব্যাপী ১৪ দলের নেতারা দেশের পাড়া-মহল্লায়, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা ও মহানগরীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সন্ত্রাসী বিরোধী কমিটি গঠন করবে। আগামীকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশ সফল করতে শুক্র ও শনিবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকাসহ আশপাশের জেলার ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ১৪ দলের পৃথক যৌথসভায় সারাদেশে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ এবং তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে শক্ত অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। পেশাজীবী-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক ॥ শনিবার সন্ধ্যায় ধানম-ির কার্যালয়ে পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠকেও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে জঙ্গী-সন্ত্রাস মোকাবেলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলসহ পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেন, জনগণের শক্তির কাছে সাম্প্রদায়িক দানবীয় শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। সরকার জনগণের শক্তিতে বলিয়ান হয়েই জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ রুখবে, রুখেছে। পেশাজীবী সংগঠনের অনেক নেতাই যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দ-াদেশ ত্বরান্বিত করার দাবি জানান। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক দল। আমরা যদি জনগণের কাছে উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র নিয়ে কাছাকাছি যেতে পারি তাহলেই আমরা সফল হব। ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মারলাম এখানে লাশ পড়ল শ্মশান ঘাটে। ঘটনা ঘটল গুলশানে, আর আমরা প্রোগ্রাম করছি শহীদ মিনারে। প্রতিটি জায়গায় আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামলে ওদের দিন শেষ হয়ে যাবে। জনগণের দিন আরও উজ্জ্বলতর হবে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জনগণ জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছে। সরকার জনগণের শক্তিতে বলিয়ান হয়েই জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ রুখবে, রুখেছে। জঙ্গীবাদের কোন স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। ১৪ দলের মুখপাত্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু আগামী ১১ জুলাই সন্ত্রাস প্রতিরোধ সমাবেশ নয়, যতদিন এই দেশে জঙ্গী-সন্ত্রাস আছে, চক্রান্ত আছে- ততদিন অনবরত একের পর এক কর্মসূচী দেন। শান্তিপ্রিয় দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। বৈঠকের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ভয়কে জয় করেই আমরা একাত্তর সালে পাকিস্তানীদের পরাজিত করেছিলাম। ভয়কে জয় করেই আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা এনেছিলাম। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছি। তিনি আজ ডাক দিয়েছেন খুনী-জঙ্গীদের প্রতিহত করতে। তাই আশা করি, আগামী ১১ জুলাই শহীদ মিনারের সমাবেশে সবাই উপস্থিত হয়ে জঙ্গী-সন্ত্রাস মোকাবেলায় তাঁর হাতকে শক্তিশালী করবেন। তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি এরা কাপুরুষের মতো মানুষকে হত্যা করেছে। এখনও তাই করছে। আমরা অবশ্যই আবারও এদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হব। জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জঙ্গীরা বৈশ্বিক উৎপাতে পরিণত হয়েছে। গুলশান ও শোকালিয়ার ঘটনা বাংলাদেশে কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। এর অতীত হলো হেফাজতী তা-বের পরাজয়, আগুন সন্ত্রাসের পরাজয়। তবে আমরা এদের কাছে হেরে যেতে পারি না। এরা গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে চায়। আমরা আগুন সন্ত্রাসীদের পরাজিত করেছি। আমরা জঙ্গীদের ধ্বংস করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথ্য উদঘাটন করেছে। এখন ওদের গুরুদের পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, বাংলাদেশে আইএস বলে কিছু নেই। এখানে জামায়াত-শিবির আইএসের প্রক্সি দিচ্ছে। যেখানে জামায়াত-শিবির আছে, সেখানে আইএসের প্রয়োজন পড়ে না। তিনি বলেন, তারা জানে এভাবে সরকারের পতন সম্ভব নয়। তাদের এখন মূল লক্ষ্য জাতিকে আতঙ্কিত করে তোলা। বুঝতে পারছি না জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে এত ভয় কেন? তিনি বলেন, ইসলামের বিকৃত ব্যবহার করে বিকৃত ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে- হত্যা বা মৃত্যুদ- দিলেই বেহেস্তে যাবার পথ সহজ হয়ে যাবে! তাই আমাদের বুদ্ধিভিত্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে বিপথগামীদের সুপথে ফেরাতে হবে। আর এটা পারেন আমাদের দেশের ওলামায়ে কেরামরা। এক্ষেত্রে আলেমদের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি। এই সকল আত্মঘাতীদের কাছে পৌঁছাতে হবে, তাদের বুঝাতে হবে ইসলাম মানেই হচ্ছে শান্তি, ভালবাসা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, যখন গুলশান হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটল তখন তিনি (খালেদা জিয়া) ঐক্যের ডাক দিলেন। কিন্তু ঈদের দিনই বললেন বর্তমান সরকার জঙ্গী দমনে ব্যর্থ, তাই পদত্যাগ করে নির্বাচন দিতে হবে! এই কথার অর্থ কি? বাংলাদেশে যত গুপ্তহত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে তা তাঁর নির্দেশেই হচ্ছে। ওনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই জামায়াতকে দিয়ে বিভিন্ন নামে এসব করাচ্ছেন। যা তাঁর কথার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নেতা চিত্রনায়ক ফারুখ বলেন, যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী আয় নাকি হাজার হাজার কোটি টাকা! ওই যুদ্ধাপরাধী এত টাকা দিয়ে কি করবেন? সামনে তো তার ফাঁসি হবে। তাহলে কি তিনি ওই টাকা নিয়ে বসে থাকবেন? তিনি কি তার শেষ চেষ্টা করবেন না? মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুছ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, উদীচীর মাহমুদ সেলিম প্রমুখ। এ সময় ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার আশপাশের জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক ॥ কর্মসূচী সফল করতে শুক্রবার ধানম-ির কার্যালয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ১৪ দলের যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের অভিযোগ করেছেন, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আর এজন্য তিনিই দেশ ও সরকারবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কর্মসূচী সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এই যৌথসভায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
×