ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ টাকা কেজি

ভিজিএফের তিন শ’ টন চাল কালোবাজারে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৫ জুলাই ২০১৬

ভিজিএফের তিন শ’ টন চাল কালোবাজারে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৪ জুলাই ॥ কলাপাড়ায় ঈদের বিশেষ ভিজিএফের তিন শ’ টন চাল লোপাট হয়ে গেছে। কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। এসব চালের সঙ্গে কালোবাজারে চলে গেছে ভিজিডি ও মৎস্যজীবীদের বিশেষ ভিজিএফের আরও শতাধিক টন চাল। সরকার দরিদ্র, দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত চাল বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সরকারের নিয়োজিত তদারকি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জনপ্রতিনিধিরা যেন লুটপাটের বাতাসায় পরিণত করেছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও চলে যাচ্ছে এসব লুটেরার পেটে। মোট কথা গরিব মানুষের জন্য সরকারের দেয়া এ চাল লুটেরাদের হরিলুটে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার থেকে এ চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকার কলাপাড়ার জন্য ৬৪ হাজার ৫১৬ পরিবারের প্রত্যেকের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে রমজান ও ঈদের খাদ্য সহায়তার জন্য। কিন্তু এসব পরিবারের এক-পঞ্চমাংশ এক ছটাক চালও পায় না। শুধু ভুয়া মাস্টাররোল সাবমিট করা হয়। ফলে জনস্বার্থে নেয়া সরকারের পদক্ষেপ বিফলে যাচ্ছে। উল্টো ঘাড়ে জুটছে বদনামের ভাগ। আর সরকারের দেখভালের প্রশাসনও অবস্থাদৃষ্টে নেই বলে মনে হচ্ছে। জানা গেছে, ২৯ জুন থেকে কলাপাড়ার খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল উত্তোলন শুরু হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে নীলগঞ্জ এবং চাকামইয়া ইউনিয়নের চাল এখন (সোমবার দুপুর) পর্যন্ত গোডাউন থেকে উত্তোলন করতে পারেনি। চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ গোডাউন থেকে বস্তাপ্রতি কমপক্ষে দুই কেজি চাল কম দেয়া হয়। এছাড়া পরিবহন খরচ পান না। এ ব্যয় মেটাতে চাল ঠিকমতো দেয়া যায় না। ধুলাসার ইউনিয়নে ঈদ-উল-ফিতরে দুস্থ ও অতিদরিদ্র মানুষকে বিতরণের জন্য ২৯ জুন খাদ্য গুদাম থেকে নেয়া হয়েছে ৯২ টন। ২৮ জুন দুই মাসের ভিজিডির চাল নেয়া হয়েছে ৪৫০ বস্তা। একই দিনে দুই মাসের জেলেদের বিশেষ ভিজিএফ এর চাল নেয়া হয়েছে ৫৬ টন। ধুলাসার ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত এসব চাল কলাপাড়া খাদ্যগুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। চাল বিতরণের আগেই ২০ টন চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, আবুল হোসেন নামের এক মেম্বার টমটমে বোঝাই করে ১৪/১৫ বস্তা চাল গঙ্গামতি নিয়ে গেছে। মেম্বারের দাবি জনগণকে সহজে পৌঁছে দিতে তিনি এ চাল নিয়েছেন। ধানখালী ইউনিয়নের চাল বিতরণে ছিল না কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা। ছয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলেছেন, রবিবার বিকেলে চালের ট্রাক পৌঁছলে সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি যে যেভাবে পেরেছে চাল নিয়ে গেছে। তদারকি কর্মকর্তারা এখানে ছিল নীরব। তাদের অনেককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এভাবে লালুয়াসহ অধিকাংশ ইউনিয়নে বিভিন্ন ধরনের বরাদ্দকৃত চাল একই সঙ্গে উত্তোলন করে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব চাল বিতরণে ঈদ-উল-ফিতরের ২০ কেজির বদলে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি। আবার দুই মাসের মৎস্যজীবীদের ভিজিএফের ৮০ কেজি বদলে সর্বোচ্চ ৬০ কেজি এবং ভিজিডির ৬০ কেজির বদলে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ কেজি। বাকিটা লোপাট। শুধু রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১২৯০ টন চাল। এভাবে ২৮ জুন থেকে খাদ্যগুদাম থেকে ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় দেড় হাজার টন চাল উত্তোলন করা হচ্ছে। যার এক-পঞ্চমাংশ হরিলুটের বাতাসায় পরিণত হয়েছে। আর এ মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিচক্র মাত্র ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চোরাই চাল কিনে অন্যত্র চালান করে দিচ্ছে। ফলে গরিব ও দুস্থ মানুষের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত অর্ধ কোটি টাকার চাল লোপাট হয়ে গেছে। এসব চাল বিতরণের জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে তদারকি কর্মকর্তা রয়েছেন। গোডাউন থেকে চাল উত্তোলনের পরে ইউনিয়ন পরিষদ বিতরণস্থলে স্টক করবে। যা তদারকি কর্মকর্তা চেক করবেন স্টক ঠিক আছে কি না। তারপরে বিতরণ কাজ শুরুর কথা। কিন্তু এসব চাল গোডাউন থেকে উত্তোলনের পরেই এক-চতুর্থাংশ বিক্রি করে দেন জনপ্রতিনিধিরা। পরে ভুয়া মাস্টাররোল সাবমিট করা হয়। আবার যাদের দেয়া হয় তাদের চার-পাঁচ থেকে ১৫-২০ কেজি পর্যন্ত কম দেয়া হয়। স্থানীয় লোকজনের দাবি প্রত্যেকটি ইউনিয়নের চাল বিতরণের মাস্টাররোল যাচাইবাছাই করলে দেখা যাবে ঈদের বিশেষ ভিজিএফের চাল বিতরনে কলাপাড়ায় কী কী অনিয়ম দুর্নীতি আর লুটপাট হয়েছে। এ ব্যাপারে একাধিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে সবার এক কথা কোন অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি। প্রত্যেকের পাল্টা অভিযোগ গোডাউন থেকে চাল বস্তাপ্রতি ওজনে কম দেয়া হয়। আর পরিবহন বিল না দেয়ায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, বরাদ্দ অনুসারে সকল চেয়ারম্যান তার চাল সঠিকভাবে বুঝে নেন। কম দেয়ার সুযোগ নেই। কলাপাড়া উপজেলা নির্বহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) দীপক কুমার রায় জানান, বঞ্চিত কোন ব্যক্তি অভিযোগ দিলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×