ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টুপি আতর সুরমা ও তসবির দোকানে এখন ভিড় বেশি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৪ জুলাই ২০১৬

টুপি আতর সুরমা ও তসবির দোকানে এখন ভিড় বেশি

রহিম শেখ ॥ উৎসব সন্নিকটে। দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদের বার্তা। রাজধানীসহ দেশবাসীর ঈদের কেনাকাটা প্রায় শেষের দিকে। এখন বাকি টুকিটাকি কিছু প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এর মধ্যে অন্যতম আতর, টুপি, জায়নামাজ। ঈদের নামাজের জন্য এসব অনুষঙ্গ যেমন প্রয়োজন, তেমনি এসব ছাড়া ঈদের নামাজের পরিপূর্ণতাও অনেকটা না হওয়ার মতো। আর সেজন্য ঈদের বাজারে এখন ভিড়টা বেশি দেখা যাচ্ছে টুপি, আতর, সুরমা, তসবিহ, মেসওয়াক ও জায়নামাজের দোকানগুলোতে। এই কেনাকাটা চলবে ঈদের দিন নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। রবিবার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, জিপিওসংলগ্ন ফুটপাথ, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, চকবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দারুণ জমে উঠেছে আতর, টুপি ও জায়নামাজ বেচাকেনা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আকর্ষণীয় নকশা আর নানা কারুকার্যে সুসজ্জিত টুপির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। দেশি টুপির পাশাপাশি বাহারি নক্সা আর আকৃতির বিদেশী টুপিও পাওয়া যাচ্ছে দোকানে। নক্সার সঙ্গে মিল রেখে এসব টুপির চমকপ্রদ সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা। কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, কাজ ও মানভেদে এসব টুপি ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে চীনা টুপি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, পাকিস্তানী টুপি ১৫০ থেকে ৬৫০, ভারতীয় টুপি ৫০ থেকে ৬০০ এবং দেশে তৈরি টুপি ২০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে চীনের ওয়ানি ৬৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০, পাঠান ৪৫০ এবং ছোট পুঁতির সঙ্গে সোনালী কাজ করা প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া নেটের তৈরি চীনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কি ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছে দোকানিরা। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের টুপি বিক্রেতা রউফ বলেন, রোজার শুরু থেকে টুপি বিক্রি ভাল হচ্ছে। এই সময়টায় ভাল লাভ হয়। মানুষ ঈদ ও রোজার মধ্যে তারাবির নামাজের জন্য টুপি বেশি কিনে থাকে। ঈদ বাজারে নিজের চাহিদা অনুসারে এসব পণ্য কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারাও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে টুপি ও জায়নামাজ কিনতে আসা এক ক্রেতা আসাদুজ্জামান আকন বলেন, গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। তাই নিজের এবং ছেলেদের জন্য টুপি কিনছি। গুলবাহার, গুল রেডরোজ, লায়লা, বেলি, অ্যারাবিয়ান, জুঁই, বকুল, মর্নিং কুইন, চামেলি, জেসমিন, গোলাপ বাহার, শাহি দরবারসহ দেশী-বিদেশী আতর পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকানগুলোতে। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড রোডে দেশের সবচেয়ে বড় আতর মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দামের দেশী-বিদেশী আতর। অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, বারিধারার যমুনা ফিউচার পার্কে পাওয়া যাচ্ছে বিদেশের নামীদামী ব্র্যান্ডের আতর ও পারফিউম। বড় বড় দোকানে মিলছে বিশ্ববিখ্যাত আজমল কোম্পানির আতর ‘দিহান-আল-উদ’। পাওয়া যাচ্ছে বুলগেরিয়ান গোলাপ আতর, কস্তুরি, হোয়াইট উদ, মরিয়াম, সুলতান, সাস, গুচি, হোয়াইট আম্বর, মুখাল্লাত এ্যারাইস, মেশ্ক আম্বর, সৌদির আবদুস সামাদ আল কোরাইশি কোম্পানির সাফারি ও আকাবি, আজমল, সুইস এ্যারাবিয়ান, উদ-আল-আনফার ইত্যাদি ব্র্যান্ডের আতর। মান ভেদে এসব আতরের দাম তোলাপ্রতি এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। রবিবার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট থেকে আতর কিনছিলেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাহার উদ্দিন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের দিন বিশেষ দিন। আর ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আতর ব্যবহার করা সুন্নত। এ কারণেই আতর কেনা। এক দোকানে সবচেয়ে ভাল মানের আতর চাইতেই সৌদি আরবের ‘উদ’ আতরের ছোট্ট শিশি হাতে তুলে দিলেন দোকানি। দাম হাঁকালেন এক তোলা ২০ হাজার টাকা। দোকানদার নাজমুল হাসানের দাবি ‘উদ’ এবারের ঈদে আসা সবচেয়ে ভাল আতর। ঈদের সকালে নামাজে যাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ জায়নামাজ। রোজার শেষ দিনগুলোতে জায়নামাজের বিক্রিও বেশ বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে যেসব জায়নামাজ পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই বিদেশে তৈরি। এসব জায়নামাজেও যুক্ত নক্সা আর কারুকাজ। বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন বিক্রেতারা বলছেন, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কাশ্মীর, জর্ডান, ইয়েমেন, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে এখানে। দাম ২৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। জায়নামাজ বিক্রেতা মোঃ ইয়াছিন জানান, বিদেশী জায়নামাজই বেশি বিক্রি হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম ও চকবাজারে কয়েকটি দোকানে তসবিহ ও পাগড়ি বিক্রি হতে দেখা গেছে রবিবার। ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজ সংলগ্ন আতর-টুপি বিক্রেতা আনিস জানান, এখানে জাপানী, পাকিস্তানী, সৌদি তসবিহ চাহিদা বেশি। অনেকে জায়নামাজ কেনার জন্য ভিড় করছেন বায়তুল মোকাররম, চকবাজার, নিউমার্কেট এলাকার স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানগুলোতে।
×