ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এদের কর্মস্থল পৃথক হলেও কিলিং মিশনে এরা ঠিকই হাজির হয়

বহু প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরিচয়ে ঘাপটি মেরে আছে ছদ্মবেশী জঙ্গী

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৪ জুলাই ২০১৬

বহু প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পরিচয়ে ঘাপটি মেরে আছে ছদ্মবেশী জঙ্গী

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা অনেক জেএমবি ও আরএসও ক্যাডার ছদ্মবেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, পড়ালেখা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তারা যে যেখানে থাকুক না কেন, জঙ্গীপনায় কিলিং কর্মকা-ে নির্ধারিত সময়ে ঠিকই হাজির হয়ে থাকে। বড় ধরনের কিলিং ও নাশকতায় আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আল কায়েদা, জেএমবি একসঙ্গে কাজ করে থাকে বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের একজন নিবরান ইসলাম বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল বলে সূত্রে জানা গেছে। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টে অন্যদের সঙ্গে নিহত হয় ওই জঙ্গীও। জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে বেসরকারী কেজি স্কুল, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, অর্ধশতাধিক কওমি মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় গোপন করে নিয়মিত পড়ালেখা ও শিক্ষকতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গী যুবকরা। এমনকি বিভিন্ন দফতরেও অলিখিতভাবে রোহিঙ্গাসহ জঙ্গীরা চাকরি করে যাচ্ছে। বিদেশী এনজিও সংস্থার মদদ ও আর্থিক সহায়তায় এক শ্রেণীর লোভী শিক্ষকের কারণে কৌশলে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওরা অনায়াসে ভর্তি হচ্ছে। রোহিঙ্গা জঙ্গী আরএসও’র অর্থায়নে পরিচালিত একাধিক কওমি মাদ্রাসার বহু রোহিঙ্গা ছাত্র এবং বিদেশী এনজিও সংস্থার মদদ ও আর্থিক সহায়তায় নির্ধারিত শিক্ষার্থীরা জঙ্গীপনায় জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকা-ে ভাড়ায় গিয়ে থাকে ওই সব শিক্ষার্থী। স্কুল ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে এসএসসি, এইচএসসি পাস করে রোহিঙ্গারা নির্বিঘেœ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। ওরা নিজেদের বাংলাদেশী দাবি করে পরীক্ষা পাসের সনদ দেখিয়ে জাতীয় সনদও হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয়দের মেয়ে বিয়ে করে শক্তি সঞ্চার করেছে রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীর অনেকে। মিয়ানমারে নিপীড়িত মুসলিম হিসেবে সহানুভূতি দেখিয়ে মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থান দেয়া হলেও ওসব রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী একদিন এ দেশের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ। সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) ক্যাডাররা ইতোপূর্বে বিভিন্ন নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণ ছাড়াও জঙ্গীদের সঙ্গে বোমা হামলায়ও যোগ দিয়েছে- এমন অভিযোগ আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। রোহিঙ্গা জঙ্গীরা পার্বত্য বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় আরএসও’র অর্থায়নে মাদ্রাসা-মক্তব ও এতিমখানা গড়ে তুলতে বেশি আগ্রহী কেন? তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অভিজ্ঞজনরা মতপ্রকাশ করেছেন। কক্সবাজার সরকারী কলেজের পেছনে সরকারী জায়গা দখল করে রোহিঙ্গা জঙ্গী বিভিন্ন মামলার আসামি হাফেজ ছলাহুল ইসলাম পরিচালনাধীন ইমাম মুসলিম ইসলামিক সেন্টার (র) ও পিএমখালী পাহাড়ে গড়ে ওঠা জামিনে মুক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গী আবু ছালেহ পরিচালনাধীন মাদ্রাসায় বহু রোহিঙ্গা এবং আরএসও ক্যাডার রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন ওসব রোহিঙ্গা আস্তানায় অভিযানে যাওয়ার আগেই আগাম খবর পৌঁছে যায় রোহিঙ্গা জঙ্গীগোষ্ঠীর কাছে। ফলে তারা সতর্ক হয়ে পড়ে। সূত্র আরও জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী জাতিসংঘের কতিপয় প্রতিনিধির সহায়তা পেয়ে রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরএসও, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর এবং জেএমবির সহযোগিতায় মিয়ানমারের বংশোদ্ভূত রোহিঙ্গা যুবকরা স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার, রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বহু কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং অরএসও অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কওমি মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বহু জঙ্গী সন্তান ছদ্মবেশে দায়িত্ব পালন করছে। অনেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অথবা দালালের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ নিয়ে প্রথমে কেজি বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
×