ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে কার্যত অচল থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৪ জুলাই ২০১৬

ঈদের ছুটিতে কার্যত অচল থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে গত শুক্রবার থেকে দেশে শুরু হয়েছে টানা ৯ দিনের সরকারী ছুটি। কিন্তু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে ৫, ৬ ও ৭ জুলাই। ফলে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রাখতে বন্দর ও কাস্টমসে ৯ দিনের সরকারী ছুটি কার্যকর হচ্ছে না। ঈদের দিন, ৮ ও ৯ জুলাই কাস্টমস বন্ধ রাখতে নির্দেশনা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে পণ্য খালাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রেইট ফরোয়ার্ডের শিপিং এজেন্ট, সিএ্যান্ডএফসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। ঈদের জন্য সরকার ঘোষিত ৯ দিনের ছুটিতে এসব প্রতিষ্ঠান খোলা না থাকলে আমদানিকারকরা বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারবেন না। এতে কার্যত অচলই থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর। ফলে সমস্যায় পড়তে পারেন আমদানি-রফতানিকারকরা। টানা ৯ দিনের ছুটি চলাকালে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস এবং ব্যাংক খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার, বিজিএমইএ এবং সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সাধারণত ঈদের ছুটিতে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ থাকলেও বন্দরের অভ্যন্তরে ও বহির্নোঙ্গরে জাহাজ থেকে পণ্য ও কন্টেনার ওঠানামা বন্ধ থাকে না। ঈদে টানা ৯ দিনের সরকারী ছুটির সময় আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটিতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বন্দর ও কাস্টমসে আলাদা ডেস্ক খুলে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি জানান তিনি। মাহবুবুল আলম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ছুটির সঙ্গে বাংলাদেশের ছুটি মিলবে না। ফলে টানা ৯ দিন বন্দর-কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। ব্যবসায়ীরা জানান, লাইটার জাহাজ মালিক ও শ্রমিকদের টানা ১৫ দিনের ধর্মঘট এবং সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সৃষ্টি জাহাজ ও কন্টেনার জট এখনও কাটেনি। এর মধ্যে ঈদের ছুটিতে বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে জট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে বন্দর। গত বুধবার থেকে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের পাশে ডক লেবার কলোনি এলাকায় ‘খালি কন্টেনার সংরক্ষণ ইয়ার্ড’ চালু করা হয়েছে। এই ইয়ার্ডে তিন স্তরে প্রায় ১ হাজার ৮০০ একক খালি কন্টেনার রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে কন্টেইনার জটের সমাধানে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী সংস্থাগুলোর অফিস খোলা না থাকলে পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে না। এতে বন্দরের কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হবে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার হোসেন আহমদ বলেন, শুধু ঈদের দিন কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। তবে এ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড পদ্ধতির আপগ্রেডেশনের জন্য ৮ ও ৯ জুলাই কাস্টম হাউজের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ.কে.এম. আকতার হোসেন বলেন, দেশে ঈদের ছুটিতে শুধু বন্দর ও কাস্টম হাউজ খোলা রেখে সুফল পাওয়া যাবে না। কারণ, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী রফতানিসহ জরুরী পণ্য ছাড়া ঈদের আগে ও পরে ৬ দিন মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পণ্য পরীক্ষা ও আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসও বন্ধ থাকবে। ফলে শুল্কায়নের পর বন্দরেই থাকবে পণ্য। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ একক। এর মধ্যে গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার কন্টেনার সেখানে ছিল; যা ধারণক্ষমতার ৮৮ শতাংশ। দুই-তিন দিন পণ্য খালাস বন্ধ থাকলে বন্দরে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বন্দর ও কাস্টমস খোলা থাকলেও আসন্ন ঈদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে অনেক শ্রমিক বাড়ি যাবে। তখন লোকবল সংকট দেখা দেবে। এছাড়া ব্যাংকও বন্ধ থাকবে। ফলে খালাস বন্ধ থাকায় আমদানি-রফতানি জাহাজগুলো বহির্নোঙ্গরে আটকা পড়বে।
×