ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের কেনাকাটা

এখন সবাই ছুটছে গহনা, প্রসাধনীর দোকানে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩ জুলাই ২০১৬

এখন সবাই ছুটছে গহনা, প্রসাধনীর দোকানে

রহিম শেখ ॥ রমজান প্রায় শেষের পথে। হাতেগোনা ক’দিন পরই ঈদ-উল-ফিতর। সর্বত্রই বইছে ঈদের আনন্দের বার্তা। ঈদ আনন্দে যোগান দিতে কেনাকাটার যুদ্ধে ক্লান্তিহীন ছুটছেন নগরবাসী। এখন নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনতে সবাই ছুটছেন গহনা ও প্রসাধনীর দোকানে। কেউ নিজের জন্য, আবার কেউ উপহার দেয়ার জন্য গহনা কিনছেন। নতুন ডিজাইনের পুঁতি, কড়ি, শেল, সুতা, কাঠ ও পিতলের তৈরি গহনার প্রতিই তরুণীরা বেশি আগ্রহী। তবে এবার স্টোনের গহনাও বেশ চলছে। তবে উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশি আগ্রহ ডায়মন্ডের গহনায়। এছাড়া রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেয়া গহনা ও ইমিটেশনের গহনায়ও চাহিদা মেটাচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। রাজধানীর চাঁদনী চক, নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি ও বায়তুল মোকাররম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গহনার দোকানগুলোতে বেশ ভিড়। শপিংমলগুলোতে গহনার দাম নির্ধারিত থাকলেও ছোট দোকানগুলোতে তা থাকে না এবং এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি। এখন খুব বেশি কালার ম্যাচিং গহনার চল নেই বললেন মিতু ইসলাম। তিনি বলেন, যে কোন একটা মোটামুটি মানানসই হাতের ব্রেসলেট পরলেই পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। এখন খুব একটা গহনা পরে না মেয়েরা। তারপরও কানের দুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে টপ বলে জানান বসুন্ধরা সিটির বিক্রেতা নাজমুল হক। তিনি বলেন, স্টোনের ছোট টপই মেয়েরা কিনছে বেশি। তবে অনেকে আবার অনেক লম্বা দুল মিলিয়ে পরছেন। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পুঁতি ও পিতলের সমন্বয়ে তৈরি একসেট লহরী গহনা কিনেছেন ধানম-ি থেকে আসা গৃহিণী আফরিন সুলতানা। বসুন্ধরা সিটির বৃষ্টি ইমিটেশন জুয়েলারি এ্যান্ড জেমসের বিক্রেতা জুয়েল রানা জানালেন, বড়দের কানের দুল ছোট-বড় সাইজের ইমিটেশন ও পাথরের পাওয়া যাবে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। হাতের ব্রেসলেট ২০০ থেকে ৪০০, চুড়ি গোল্ডেন এ্যান্টিক, সুতার কাজ করা সেটসহ ২০০-৪৫০, পায়েল ১০০-২০০, থাই কাঁকড়া নর্মাল ৫০, স্টোন বসানো ১৫০, স্টোন বসানো সাইড কিপ ১০০-১৫০, রিং ১০০-৩০০, লকেট ১০০ ও স্টোন বসানো গলার সেট ৬০০ টাকার মধ্যে ইত্যাদি। বাজার ঘুরে দেখা গেল এর পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে হ্যান্ডমেড কাঠের, মেটাল, পিওর সিলভার, অক্সি-সিলভার, গোল্ড পলিশ, গোল্ড প্লেটেড ইত্যাদির গহনা। এসব গহনার মধ্যে নেকলেস, মাদুলি, ঝুমকা, কানের দুল, ফিঙ্গার রিং, খোঁপার কাঁটা, বাজু, পায়েল, ব্রেসলেট, পায়েল ইত্যাদি রয়েছে। ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ফোরাল, জিওমেট্রিক ইত্যাদি মোটিফ। অভিজাত পোশাক প্রতিষ্ঠান আড়ং, কে ক্রাফট, অঞ্জন’স, ওজি, রঙ, দেশাল, নগরদোলা প্রভৃতি দোকানেও গহনার বিক্রি বেশ ভাল। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মার্কেটেই রয়েছে গহনার দোকান। তবে গাউছিয়া মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর বসা ইমিটেশন গহনার দোকানগুলো হচ্ছে কমদামে গহনা কেনার সবচেয়ে ভাল জায়গা। ফুটপাথের এসব দোকানে এখন ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এসব দোকানে কানের দুল, মালা, চুলের ক্লিপ হিজাবের ব্রুজ প্রভৃতির বিক্রি বেশি। মৌচাক মার্কেটের পাশ ঘেঁষেও বসেছে এসব ইমিটেশনের গহনার দোকান। সেখানেও ক্রেতাদের লক্ষণীয় ভিড় দেখা গেছে। সেট চুড়ির দাম ১০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। কানের টপ ২০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভাল স্টোনের দুল কিংবা মালার দাম ৫৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন ধরনের লকেটসহ চিকন চেন পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ক্লিপ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের চুড়ির বিক্রিও বেশ ভাল। রাজধানী অধিকাংশ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সোনার গহনার দাম মধ্যবিত্তের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় বর্তমানে রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেয়া গহনা বেশি কিনছেন মধ্যবিত্ত নারীরা। এসব দোকানে তাই ভিড়ও বেশি। মৌচাক মার্কেটে রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেয়া গয়না বানাতে এসেছেন মুনিরা ইসলাম। তিনি বলেন, স্বর্ণের গয়না তো আছেই কিন্তু সেটা থাকা আর না থাকা সমান। কেননা এসব গয়না পরে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। তাই এবার একসেট রুপার গয়না বানাতে এসেছি। নিউমার্কেট গাউছিয়া ও চাঁদনীচক মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পাথরের সেটগুলো ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, কুন্দন সেট ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, এডি (পাথর) সেট ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইমিটেশনের মালার সেট সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, কানের দুল ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, চুড়ি ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, হাতের ব্রেসলেট ৭০ টাকা থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা, আংটি ১০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদের কেনাকাটায় স্বর্ণ কিংবা রুপার মধ্যে সন্তুষ্ট থাকলেও উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশি আগ্রহ ডায়মন্ডের গহনায়। আল হাসান ডায়মন্ড গ্যালারি, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, অলংকার নিকেতন, ভেনাস ডায়মন্ড কালেকশন, আফতাব জুয়েলার্স, ডায়মন্ড গার্ডেন, ডায়মন্ড হ্যাভেন, সঙ্গিনী ডায়মন্ডসহ প্রতিটি শোরুমে শোভা পাচ্ছে হীরার গহনা। এসব শোরুমে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উচ্চবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তদের মধ্যেও কেউ কেউ হীরার গহনা কিনছেন। বসুন্ধরার ডায়মন্ড গার্ডেন, গুলশানের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, বেইলি রোডের ডায়মন্ড গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে এক ক্যারেট মানের বোম্বে কাট হীরার দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আর একই মানের বেলজিয়াম কাট হীরার দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। ডায়মন্ডের কানের দুলের দাম পড়বে ১৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, নাকফুল ২ হাজার ৯০০ থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকা, আংটির দাম পড়বে সাড়ে ১১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, লকেট ৭ হাজার থেকে ৫০ হাজার, ব্রেসলেটের দাম ৮৪ হাজার থেকে ৯৮ হাজার টাকা। এছাড়া হীরার গলার সেটের দাম পড়বে ৬০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। ঈদের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়েরা কিনছেন লিপস্টিক, নেইলপলিশ, আইশ্যাডো, আইলাইনার, মেকআপ বক্স ইত্যাদি। এর পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ফাউন্ডেশন, প্যান কেক, বডি স্প্রে, পারফিউম, প্যানস্টিক ইত্যাদি। দেশী-বিদেশী সব ধরনের কোম্পানির পণ্যই বাজারে রয়েছে। লিপস্টিক ও নেইলপলিশ বেশি বিক্রি হচ্ছে জর্ডানা, লরিয়াল, জ্যাকলিন, র‌্যাভলন, মেবেলিন ইত্যাদি কোম্পানির। পারফিউম পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানিভেদে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, বডি স্প্রে ২০০ থেকে ৫০০, মেকআপ ও ফেস মেকআপ ৩০০ থেকে ৩ হাজার, আইলাইনার ৫০ থেকে ৩০০, আইশ্যাডো ৩০ থেকে ২০০, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ১৫০ থেকে ৪০০, কাজল ৫০ থেকে ৩০০, গিটার ৫০, আলতা ৪০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতারা জানালেন, পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন উজ্জ্বল শেড যেমন : লাল, গোলাপি ইত্যাদি রঙের লিপস্টিক চলছে বাজারে বেশ। নেইলপলিশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না, তবে অন্যবারের মতো এবারও বিভিন্ন রঙের কন্ট্রাস্টেও নেইলপলিশ পরতে পছন্দ করছেন তরুণীরা। তবে ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে কম মূল্যের বিভিন্ন প্রসাধনী।
×