ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবেদন ফুরোয়নি ঈদকার্ডের

ভাব-ভালবাসা আদান প্রদানের শৈল্পিক মাধ্যম, প্রিয়জনের স্পর্শ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ জুলাই ২০১৬

ভাব-ভালবাসা আদান প্রদানের শৈল্পিক মাধ্যম, প্রিয়জনের স্পর্শ

মোরসালিন মিজান ॥ ঈদ কার্ডের আলাদা সৌন্দর্য। প্রিয়জনের আবেগ অনুভূতিগুলোকে বিশেষ এই কার্ড সযতেœ ধারণ করে। গায়ে লেখা ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। এখন আধুনিক সময়। উন্নত প্রযুক্তি। এর পরও ঈদ কার্ড পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। মহা আনন্দের উপলক্ষ সামনে রেখে শৌখিন মানুষ ঠিকই খুঁজছেন পছন্দের কার্ড। হরেক রকমের ডিজাইন থেকে বেছে নিয়ে দূরের প্রিয়জনকে পাঠাচ্ছেন। এভাবে বিচ্ছিনতার কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছে ঈদ কার্ড। ব্যক্তিগত ভাব ভালবাসা আদান-প্রদানের পাশাপাশি, বিভিন্ন অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ কার্ডের মাধ্যমে মূলত দূরের প্রিয়জনদের স্মরণ করার চেষ্টা করা হয়। ব্যাপারটা চিঠির-ই মতো। চিঠিতে অনেক কথা লেখার সুযোগ থাকে। ঈদ কার্ডে অল্প কথা। কিন্তু মনের ভাব এত চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে যে, মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না! অধিকাংশ কার্ডের গায়ে আগে থেকেই কিছু কথা লিখে রাখা হয়। পড়লে মনে হয় নিজের কথাটি! এবারের ঈদেও প্রিয় পরিচিতজন স্বজন-সুহৃদরা গ্রিটিংস কার্ডের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার টানাপোড়েনের সম্পর্কটিও অনায়াসে ভুলিয়ে দিচ্ছে শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনন্য এ মাধ্যম। শত মতপার্থক্যের মধ্যেও দুই নেত্রী পরস্পরকে ঈদকার্ড পাঠিয়েছেন। পরস্পরের জন্য শুভ কামনা করেছেন। আনন্দঘন ঈদ প্রত্যাশা করেছেন। এখানেই ঈদ কার্ডের আসল সৌন্দর্য। একই কারণে হারিয়ে যায়নি ঈদকার্ড। ঢাকার বিভিন্ন গিফটশপ ঘুরে আর সব কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকেই ঈদ কার্ড কিনছেন। দোকানগুলোও সাজিয়েছে ঈদের পসরা। রাজধানীর পুরানা পল্টন, নিউমার্কেট, ধানম-ি, বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুলসহ বিভিন্ন এলাকার গিফটশপ ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। কার্ডের গায়ে নানা রকম লতা পাতা ফুলের নকশা করা। পাখি প্রজাপতি ইত্যাদি আঁকা। ফুলের গায়ে, প্রজাপতির ডানায় উজ্জ্বল পাথর পুঁতি জরি বসিয়ে নতুন মাত্রা যোগ করা হয়েছে। কোন কোন ঈদকার্ডে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী ভাষায় লেখা হয়েছেÑ ঈদ মোবারক। কোনটির গায়ে আঁকা আছে মসজিদের ছবি। শক্ত কাগজ কেটে চমৎকার নকশা করা হয়েছে কিছু কার্ডে। আকারও তিনটি। ছোট বড় এবং মাঝারি। বিশাল আকারের কিছু কার্ড আছে। দুই হাতে মেলে ধরতে হয়। কোনটি থেকে সুগন্ধ ছড়ায়। কোনটিতে হাত ছোঁয়ালে আলো জ্বলে। মিষ্টি সুর বেজে ওঠে কোন কোনটির বেলায়। ঈদ কার্ডের জন্য একসময় বিখ্যাত ছিল পুরনো পল্টনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখন সেই রমরমা অবস্থা নেই। বেশিরভাগই বিয়ের কার্ড। এর পরও ঈদ কার্ডগুলো আলাদা আবেদন নিয়ে সামনে এসেছে। আজাদ প্রোডাক্টসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ইকবাল হোসেন জানান, কিছুকাল আগেও তাদের মূল ব্যস্ততা ছিল ঈদ কার্ড নিয়ে। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত ছাপার কাজ। এখন সেই অবস্থা নেই। তবে ঈদ কার্ডের আবেদন ফুরোয়নি। শৌখিন মানুষ কার্ডের খোঁজে এখানে আসছেন। তাদের কথা ভেবেই ঈদকার্ড করা হয়েছে। এবার ২০টির মতো নতুন ডিজাইন। দাম ১৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। আইডিয়াল প্রোডাক্টসের শোরুমেও দেখা গেল ঈদকার্ড। ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, বিগত দিনের ঐতিহ্য মেনে ঈদ কার্ড করেছেন তারা। ১৫টির মতো নতুন ডিজাইন। আছে পুরনো ডিজাইনগুলোও। বিকেলে এখানে ঈদ কার্ড কিনতে এসেছিলেন রিমা ও রিতা দুই বোন। রিমা বললেন, প্রতি ঈদেই এখানে গ্রিটিংস কার্ড কিনতে আসতাম। সেই পুরনো অভ্যাস থেকেই আজ এসেছি। অনেকগুলো কার্ড দুজন কিনে বললেন, কাকে কাকে দেব এখনও ঠিক করিনি! আর্চিস গ্যালারি, হলমার্কসহ কিছু শপের আছে আলাদা খ্যাতি। শনিবার হলমার্কের হাতিরপুল শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, হরেক রকমের গ্রিটিংস কার্ড। একটি কার্ডে জড়ি বসানো। লতাপাতা আঁকা। মাঝখানটায় ইংরেজীতে লেখাÑ ‘ঈদ ইজ টাইম টু ওয়েলকাম ব্রাইট এন্ড সানি ডেউজ দ্যাট উইল ফুলফিল অল ইওর ফেভারিট ড্রিমস এন্ড ফিল ইওর লাইফ উইথ ওয়ান্ডারফুল মোমেন্টস।’ লাল গোলাপের প্রচ্ছদে আরেকটি ঈদ কার্ড। এখানে বলা আছে এরকমÑ ‘ফ্লাউয়ারস শ্যাল স্পিক অল দৌজ থিংস হুইচ মিয়ার ওয়ার্ডস আর আনএ্যাবল টু এক্সপ্রেস।’ এভাবে ছোট ছোট কথা। মিষ্টি উচ্চারণ। প্রিয়জনের জন্য। শোরুমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঈদে ২০টির মতো নতুন ডিজাইন এসেছে। দাম ১০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। আউটলেটটির ম্যানেজার শুভ বলেন, ঈদে কার্ড বিনিময় তো অনেক কাল আগের সংস্কৃতি। এর প্রতি একটি দুর্বলতা এখনও আছে। রমজানের এক সপ্তাহ পর থেকেই ঈদ কার্ড বিক্রি শুরু হয়ে যায়। মুখে যে কথাটি বলা যায় না তা কার্ডের মাধ্যমে বলা হচ্ছে। আগের তুলনায় বিক্রি কমলেও, আবেদন অটুট আছে বলে জানান তিনি। উল্টো পাশে আর্চিসের একটি শোরুম। এখানেও নানা ডিজাইনের ঈদ কার্ড। বেশ কয়েকটি কার্ডের গায়ে লতাপাতা ফুল। হ্যান্ড মেড কিছু ঈদ কার্ডও দেখা গেল এখানে। প্রতিটি কার্ডের দাম ২৮৫টাকা। দাম একটু বেশি মনে হলেও, মুগ্ধ হয়ে কিনছিলেন ক্রেতা। কেউ কেউ ছুঁয়ে দেখছিলেন। হ্যাঁ, ঈদ কার্ড ছুঁয়ে দেখাতেও আনন্দ!
×