ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ জুলাই ২০১৬

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের প্রতিশ্রুত মাস মাহে রমজান আমাদের নিকট থেকে বিদায় নিতে চলেছে। আজ ২৭ রমজানুল মোবারক। মাঝখানে আর ২/৩টি রোজা। বাকি থাকল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। এক মাসব্যাপী মুমিনগণ সিয়াম পালন করেছেন। এখানে ছিল শব-ই-ক্বদর ও জুমাতুল বিদার মতো পুণ্যময় দিবস। এ সবের মাধ্যমে মুমিনগণ নিষ্পাপ জীবন লাভ করে ধন্য হয়। কিন্তু একটা কথা। রমজানের শেষে যখন ঈদের দিন ঘনিয়ে আসে তখন কতিপয় মুসলমানদের কাছে আবার নেমে আসে আলস্য, খেয়ালিপনা। তারা ঈদের আনন্দে হারিয়ে বসে নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য, কৃত সংকল্প ও মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শিক্ষা। আমাদের মনে রাখতে হবে হুজুর (স)-এর উপদেশ ও হাদিস : ইন্নামাল আ’মালু বিল খাওয়াতিনÑ পরিসমাপ্তির উপর প্রত্যেকটি কাজের ভালমন্দ নির্ভর করে।’ তাই আমাদের সিয়ামের মাসের শেষ সময়গুলো, এর সাথে সংশিষ্ট ঈদ-উল-ফিতরের ইবাদত ও আহকাম পালনের মনোযোগী ও আন্তরিক হতে হবে। সহীহ হাদিস শরিফসমূহে বছরের যে পাঁচটি রাতকে অতি মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তন্মধ্যে ঈদ-উল-ফিতর পূর্ববর্তী রাত অন্যতম। হাদিস শরিফে এসেছে রমজানের ইফতারের সময় প্রত্যেক দিন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এক হাজার জাহান্নামীকে নরকমুক্ত করেছেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য দোযখে যাওয়া অবধারিত ছিল। আর রমজান মাসের শেষ দিন যখন আসে আল্লাহ সেদিন রমজানের প্রথম থেকে ঐ দিন পর্যন্ত যত পাপী তাপীকে ক্ষমা করেছেন তার সমসংখ্যক অপরাধীকে ক্ষমা করে দেন। (সুবহানাল্লাহ...)। তাই দেখা যায়, নেককার মানুষ শব-ই-ক্বদরের ন্যায় ঈদপূর্ব রাতেও ইবাদতে মশগুল হয়। নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়তে দুই ঈদের রাতে জেগে জেগে ইবাদত করবেÑ যেদিন সকলের অন্তর মরে যাবে সেদিন তার অন্তর মরবে না। আমরা সকলে চাই কবরে হাশরে অমর আত্মার অধিকারী হতে। আমরা যেন এ পবিত্র রজনীর ক্বদরদানী করি। এমনিতেই প্রিয় নবী হুজুর পুর নূর (সা) মাহে রমজানের শেষ দশকে নিজে এবং পরিবার পরিজন সকলকে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে ইবাদত বন্দেগী ও রিয়াজতে শামিল করাতেন, কোমর বেঁধে নামতেন খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি সাধনায়। তিনি বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাতসমূহে পবিত্র শব-ই-ক্বদর তালাশ কর। এ রজনীগুলোর মধ্যে কোন রজনীটি পবিত্র শব-ই-ক্বদর তা আল্লাহ আমাকে বলেছেন। আবার তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তোমরা প্রত্যেক বিজোড় রাতকে ক্বদর রাত প্রাপ্তির মর্যাদায় অতিবাহিত কর। বুজুর্গানে দ্বীন ও আশেকে রাসূলগণ হুজুর (সা) এর এ বাণীকে অমিয় সুধা মনে করতেন। তাই তারা ২৯ রমজান পর্যন্ত পবিত্র শব-ই-ক্বদরের ফযিলত পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে রাত্রি জাগরণ ও রোনাজারিতে অংশ নিতেন। কিন্তু আজ আমাদের দুর্ভাগ্য মহান পুণ্যাত্মাদের ইবাদত ও রিয়াজতের এ সমাপনী রজনীটি আমরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কেনাকাটা, মার্কেটিং ও হৈ-হুল্লোড়ে অতিবাহিত করি। ভাবটা এমন তারাবিহর নামাজ নেই, সুতরাং অন্য ইবাদতও নেই। আসুন, জড়বাদ বস্তুবাদ খেয়ালিপনা লোক দেখানো ধর্মচর্চা পরিহার করে ইখলাস ইহতিসাব ও ন্যায়নিষ্ঠ পথে পরওয়ার দিগারের সন্তুষ্টি খুঁজি আর পরিজনকেও সে পথে পরিচালিত করি।
×