ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গার্ডিয়ানের দৃষ্টিতে গুলশান হামলা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৩ জুলাই ২০১৬

গার্ডিয়ানের দৃষ্টিতে গুলশান হামলা

বাংলাদেশে গত এক বছরে বিদেশী ও স্থানীয় লোকজনের ওপর বেশ কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে। উগ্র ইসলামপন্থীরা যাকেই শত্রু মনে করেছে তাকেই হামলার নিশানা বানিয়েছে। এসব হামলা প্রতিরোধে দৃশ্যমান উদ্যোগ তেমন একটা চোখে পড়েনি। শুক্রবার রাতে রাজধানী ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন উগ্রবাদীরা যে এরকম একটি ঘটনা ঘটাতে পারে সেটি তারা অনুমান করতে পেরেছিলেন। গত বছরজুড়ে উগ্রবাদীদের শত্রু হিসেবে বিবেচিত দেশী-বিদেশী ব্যক্তিদের ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে। যাদের মধ্যে ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, মৌলবাদের সমালোচক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সাধারণ মানুষ। তবে এসব সহিংসতার অধিকাংশ ছিল ‘ছোটমাপের’ হামলা। হামলাকারীরা ছিল জঙ্গীদের ছোটখাটো কোন জঙ্গী গ্রুপের। ছোরা বা ছোটখাটো অস্ত্র দিয়েই তারা এসব করেছে। তবে শুক্রবার রাতে গুলশানে চালানো হামলাটি এদিক দিয়ে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। হামলার পরিসর ছিল বিশাল। হামলাকারীদের কাছে যথেষ্ট স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড ছিল বলে প্রাথমিক খবরে জানা যায়। বাংলাদেশে বড়মাপের সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে আগে থেকেই পশ্চিমা গোয়েন্দাদের আশঙ্কা ছিল। ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় হামলার পরিকল্পনা চলছে, বছর দেড়েক আগে এমন খবর প্রকাশের পর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারের ওপর পশ্চিমা পক্ষদের ওপর থেকে চাপ ছিল। আইএস শুক্রবার রাতে গুলশান হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। আইএসের তৎপরতার কেন্দ্রস্থল মধ্যপ্রাচ্য। সেখান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক দূরে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় আইএসের কখনই দৃঢ় উপস্থিতি দেখা যায়নি। ২০১৪ সালে আলকায়েদা নেতা আয়মান আলজাওয়াহিরি দক্ষিণ এশিয়ায় তার সংগঠনের নতুন শাখা খোলার ঘোষণা দেন। আলকায়েদার তৎপরতা আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার কথা বলেন তিনি। আলকায়েদা ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হলেও গুলশানের হামলা তাদের দ্বারা অসম্ভব নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সংঘটিত সহিংসতা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেও নীতি নির্ধারকদের মনোযোগ খুব কমই আকৃষ্ট করেছে। ওয়াশিংটন, লন্ডন বা অন্য কোথাও বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পায়নি। এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু খুব কম লোকই রাজনৈতিক ভিন্নমত, বহুত্ববাদ বা আইনের মানদ- ক্রমেই রুদ্ধ করার বিষয়ে যথেষ্ট নজর দিয়েছেন। এই হামলার ঘটনা যেভাবেই শেষ হোক না কেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদীদের উত্থান প্রতিহত করা না হলে এটি দেশটির সঙ্গে বহির্বিশ্বের সুসম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন করে তুলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
×