ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বসম্মত বাজেট পাস

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩ জুলাই ২০১৬

সর্বসম্মত বাজেট পাস

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। এ বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ আগামী ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছে। লক্ষণীয় হলো সংসদ সদস্যদের মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন এবং ছাঁটাই প্রস্তাব উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এই বাজেট পাসের পর্বটি বেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। মত-দ্বিমতের প্রকাশ এবং বিতর্ক ও আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বিষয়টি গণতান্ত্রিক রীতিনীতিরই অংশ। স্বস্তিকর দিক হলো সর্বসম্মতভাবেই বাজেট পাস হয়েছে। অর্থ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীবর্গ সংসদে প্রশ্নবিদ্ধ হন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আলোকে সেই সব মন্ত্রী মহোদয় তাদের প্রত্যুত্তরও পেশ করেছেন। বাজেট পাস প্রক্রিয়ার এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। এর ফলে মন্ত্রণালয়ের সক্রিয়তা যেমন বাড়বে, তেমনি অঙ্গীকার রক্ষায় সচেতনতারও প্রকাশ ঘটবে বলে আমরা আশাবাদী হতে পারি। এবারের বাজেটে সরকারের রাজস্ব আদায়, আয়, উন্নয়ন ও ব্যয়ের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে এ বাজেট বাস্তবায়ন হয়ত কঠিন হবে না। বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়টি নির্ভর করে মূলত কর নীতির ওপর। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে শুল্ক আদায় সম্ভব হলে বাজেট অনুযায়ী অর্থের সংস্থান করা কঠিন হয় না। রাজস্ব বোর্ডকে আরও সক্রিয় করা গেলে এক্ষেত্রে সক্ষমতা না বাড়ার কোন কারণ নেই। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, দেশের অগ্রযাত্রার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা গেছে। এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাস্তবানুগ কার্যক্রম। দেশবাসীও তাই চায়। অন্য বারের তুলনায় এবার বাজেটের আকার বড় হলেও এটি বিগত সাতটি বাজেটের ধারাবাহিকতারই অংশ। ইতোপূর্বে প্রতিটি বাজেটেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আকার বেড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। আমাদের জাতীয় আয় বাড়ছে, বাড়ছে অর্থনীতির আকারও। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। তাই প্রতিবছরই বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। বাজেট হচ্ছে কোন সরকারের উন্নয়ন কৌশলের বাস্তবায়নের ভিত্তি। অতীতে দেখা গেছে বাজেট প্রণয়ন করা হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বাজেট মানেই একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে শঙ্কা। আশা আর স্বপ্ন হাত ধরাধরি করে চলে। বাজেটে আশার জায়গা তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে, আর তাতে ভর করেই মানুষ স্বপ্ন দেখে উন্নতি ও সমৃদ্ধির। অন্যদিকে নতুন করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কিংবা মূল্যস্ফীতির সঙ্কেত মিলবে কিনা এমন শঙ্কাও মানুষের মনে উঁকি দিয়ে যায়। একজন সফল অর্থমন্ত্রী উভয় দিক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তার প্রচেষ্টা থাকে নিঃসন্দেহে জনকল্যাণকর কিছু করার। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি সরকারের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়। সরকারের রূপকল্প এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্য সম্পর্কেও ধারণা মেলে। সরকার ও বিরোধী দল-উভয়পক্ষ থেকে বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানানোর বিষয়টি প্রশংসনীয়। দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এ বাজেট একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করুকÑএটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×