ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদমেলা বসে গ্রামের বটতলা হাটখোলায়

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২ জুলাই ২০১৬

ঈদমেলা বসে গ্রামের বটতলা হাটখোলায়

ঈদ মেলা! ঈদ মেলা! ঈদ মেলা। সিরাজগঞ্জে ঈদের আগে-পরে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বসে মেলা। মাইকের আওয়াজে কান ঝালা-পালা হয়ে ওঠে। মেলার আয়োজকরা আকর্ষণীয় পুরস্কার ও আয়োজনের কথা বলে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মনকাড়া পসরা সাজিয়ে মেলায় দোকানিরা খদ্দেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শুধু ঈদকেন্দ্রিক নয়Ñ মেলা বসে বিভিন্ন পার্বণে। গ্রামের এই মেলা কবে, কোথায় কীভাবে চালু হয়েছে এর কোন জোরালো তথ্য উপাত্ত নেই। তবে মেলার উৎপত্তি হয়েছে মূলত গ্রামেই। গ্রাম থেকে তা ছড়িয়েছে শহরে এবং শহরতলীতে। এখন শহরে মেলার চালচিত্র বদলেছে, রকমফেরে শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটালাইজড হয়েছে। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্য লেছ ফিতার বা বায়োস্কোপের পাশাপাশি শর্ট ফিল্মও দেখানো হয়। গ্রামে যাত্রা পালার প্রচলন যখন শুরু হয়েছে, তখন থেকেই মেলার আবহ লক্ষ্য করা গেছে। প্রবীণরা বলেছেন- সন্ধ্যার পর পুরুষ অভিনীত ঘেঁটুযাত্রা শুরু হতো, সে সময় বাদাম, কালাই, খাজা, কদমাসহ নানা মুখরোচক খাবারের দোকান বসেছে। এর পর শুরু হয়েছে বিন্দুবাসিনী যাত্রা দলের মূল যাত্রানুষ্ঠান। সে সময় চায়ের দোকানসহ মুখরোচক খাবারের দোকানও বসেছে। এই ব্যবসাকেন্দ্রিক নানা আয়োজন ধীরে ধীরে প্রসার ঘটে মেলায় রূপ নিয়েছে। সাধারণত পূজা পার্বণে গ্রামে মেলা বসানো হতো। মেলা থেকে যা আয় হতো তা ক্লাবে কিংবা নানা আচার অনুষ্ঠানের জন্য গ্রামের মুরব্বিরা খরচ করতেন। এ ধরনের মেলা মূলত একদিনই বসত। এ মেলায় কামার পারিবারিক প্রয়োজনের নানা ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র, কুমার মাটির তৈরি তৈজষপত্র, জেলেরা জাল, কারিগরেরা কাপড় চোপড়। এ ছাড়াও নানা পেশাদার মানুষে তাদের উৎপাদিত পণ্য মেলার তুলে বিক্রি করে। মেলায় নেচে গেয়ে, নানা সাজে সেজে শিশু-কিশোরদের মনোযোগ আকর্ষণ করে তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করায় এক ধরনের পেশাজীবী মানুষ মেলার আকর্ষণ হয়ে ওঠে। যেমন- বাঁশিওয়ালা নানা রঙের টুকরো কাপড় দিয়ে সাত তালিতে তৈরি পাজামার সঙ্গে কোর্তা পরে, মাথায় রং-বেরঙের কাগজের লম্বা টুপি জড়িয়ে বাঁশিতে সুর তুলে যখন গান গেয়ে ওঠে, তখন মেলার সব মানুষ বাঁশিওয়ালার সুরে এক বৃত্তে বাঁধা পড়ে। এমনকি নানা ঢঙে বায়োস্কোপওয়ালা মেলার এক পাশে বসেই পুরো মেলা দখল করে নেয়, তার জাদুটোনা যন্ত্রের মাধ্যমে। ওই যে দেখা যায় রূপবান, এবার এলো মধুলতাÑ এভাবে সুর তুলে মেলায় আগত শিশু-কিশোরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মেলায় থাকে নাগরদোলা। লেছ ফিতা, চুড়ি-আলতাসহ নানা বিলাসী দ্রব্য। যা শিশু-কিশোরদের মূল আকর্ষণ। এমন নানা আয়োজন ঈদ মেলাকে সমৃদ্ধ করে তোলে। সিরাজগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে ঈদ মেলা বসে। মেলা বসে বটতলায়, কড়ি তলায়, গ্রামের খোলা মাঠে, খেলার মাঠে। কোথাও তিন দিন ধরে চলে ঈদ মেলা। শহর এবং শহরতলীতে প্রতিটি ঈদে পাড়ায় মহল্লায় বসে ঈদ মেলা। সাজানো হয় রাস্তা, অনেকের বাড়িঘরও। তবে এসব মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্য থাকে না। শুধু আনন্দ উল্লাসের জন্য মেলা বসানো হয়। সেখানে স্থান করে নেয় ওয়েস্টার্ন মিউজিক, ডিজে পার্টি, ঠা-া পানীয়, খাওয়া হয় খিচুড়ি-মাংস। একই সঙ্গে থাকে লারে লাপ্পা মার্কা খিচুড়ি-ডান্সও। আবার মেলাকে কেন্দ্র করে উঠতি বয়সী যুবকদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষও বাধে। অনেক সময় পুরো মহল্লায় তা ছড়িয়ে পড়ে। আবার দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। বর্তমান সময়ে এই মেলা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটালাইজড হয়েছে। ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে মেলার উদ্বোধন হয়। রাজনৈতিক দলের বড় মাপের নেতা বা অনেক ক্ষেত্রে এমপিও ঈদ মেলার উদ্বোধন করেন। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্য লেছ ফিতার বা বায়োস্কোপের পরিবর্তে এখন শর্ট ফিল্ম দেখানো হয়। Ñবাবু ইসলাম সিরাজগঞ্জ থেকে
×