ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে প্রতিনিধিত্বের জন্য ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগকে এ্যাটর্নি জেনারেলের চিঠি

রিজার্ভ হ্যাক ॥ চুরির অর্থ ফিরে পেতে ম্যানিলাকে সহায়তার অনুরোধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ জুলাই ২০১৬

রিজার্ভ হ্যাক ॥ চুরির অর্থ ফিরে পেতে ম্যানিলাকে সহায়তার অনুরোধ

আরাফাত মুন্না ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের (ডিওজে) কাছে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের পালেরমো কনভেনশন অনুযায়ী পারস্পরিক আইনী সহায়তার আওতায় এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে ম্যানিলায়। সম্প্রতি পাঠানো এ চিঠিতে বাংলাদেশের পক্ষে ফিলিপিন্সের আদালতে প্রতিনিধিত্বের জন্য দেশটির বিচার বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। এর আগে ফিলিপিন্সের সহায়তা চাওয়ার জন্য এ্যাটর্নি জেনারেলকে অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ্যাটর্নি জেনারেলের ওই চিঠিতে সরকারের পক্ষে ফিলিপিন্সের আদালতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি ফিলিপিন্সের এ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের কাছে এরই মধ্যে উদ্ধার করা রক্ষিত অর্থ ফেরত পাঠানোর বিষয়েও আইনী পদক্ষেপ নিতে বলা হয় চিঠিতে। একই চিঠিতে ফিলিপিন্সের আদালতে উত্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ ও নথিপত্রের অনুলিপি চেয়ে অনুরোধ করা হয়, যাতে বাংলাদেশের আদালতে চলমান মামলার ক্ষেত্রেও তা উপস্থাপন করা যায়। ফিলিপিন্সের আইন অনুযায়ী যে দেশ সহায়তার অনুরোধ করবে, সে দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলা থাকতে হবে। উল্লেখ্য, অর্থ চুরির ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে একটি মামলা করা হয়েছে। গত ৪ মে রিজার্ভ চুরির শুরু থেকে ওই সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ স্বাক্ষরিত অনুরোধপত্র পাঠানো হয় এ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে। তার পরপরই জরুরী ভিত্তিতে ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের কাছে সহায়তা চেয়ে অনুরোধ পাঠানো হয়। পালেরমো কনভেনশন অনুযায়ী ‘অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন-২০১২’ প্রণয়ন করে সরকার। পরের বছর করা হয় এ সম্পর্কিত বিধিমালা। এর আগে ২০০৮ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী কার্যালয় থেকে একটি কূটনৈতিক বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানানো হয়, অর্থপাচার বিষয়ে সহায়তার ক্ষেত্রে এ্যাটর্নি জেনারেল হবেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, পারস্পরিক সহায়তার যে আইন রয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বিষয়টি গোপন রাখতে হবে। কারও সঙ্গে কথা বলা যাবে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র অনুযায়ী আইনগত সহায়তা চেয়ে ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দেখভাল করছে। আমরা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আশাবাদী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতিসংঘের পালেরমো কনভেনশন অনুযায়ী অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক আইনী সহায়তার আওতায় এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে সহায়তা চাইতে হয়। ওই কনভেনশনের ১২ অনুচ্ছেদে টাকা ও সম্পদ জব্দ এবং ১৮ অনুচ্ছেদে পারস্পরিক আইনী সহায়তার কথা বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১২ অনুযায়ী অনুরোধের ভিত্তিতে অপরাধের সঙ্গে জড়িত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, জব্দ ও চিহ্নিত করা যাবে। এছাড়া পরিবর্তিত মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর হলে রূপান্তরিত ওই সম্পত্তিও জব্দ বা বাজেয়াপ্ত করা যাবে। ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির বক্তব্য, বিচারিক নথিপত্র, পাচারকৃত সম্পত্তি অনুসন্ধান, জব্দ এবং বিভিন্ন বস্তু ও স্থান পরীক্ষার অনুরোধ করা যাবে। এছাড়া তথ্যপ্রমাণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক রেকর্ড চাওয়ার বিধানও রয়েছে এ ধারায়। তবে এ কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশের পাঠানো অনুরোধ ফিলিপিন্সের নিজস্ব আইনের পরিপন্থী হলে তারা তা প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিনিধিত্বের অনুরোধ করলেও তারা মামলার পক্ষ হচ্ছে না আপাতত। সরাসরি আমরা প্রতিনিধি পাঠালে প্রচুর খরচ হবে। তাই প্রথমে দেখতে চাই তারা কী সহায়তা করে। পরে না হয় অন্য ব্যবস্থা নেয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রবেশ করে ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি)। পরে কয়েক হাত ঘুরে তা দেশটির আর্থিক খাত থেকে বেরিয়ে যায়। এ অর্থ চুরির ঘটনা তদন্ত করছে দেশটির একাধিক সংস্থা। একই ঘটনায় মতিঝিল থানায়ও একটি মামলা রয়েছে। মামলা হয়েছে ফিলিপিন্সেও। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত ৯৮ লাখ ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, যা এখন ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেন্ট্রাল এনজি পিলিপিনাসে (বিএসপি) রক্ষিত আছে। ওই অর্থসহ চুরি যাওয়া পুরো অর্থের মালিকানা দাবি করে তা ফিরে পাওয়ার আবেদন করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল ম্যানিলায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জন গোমেজের একটি প্রতিবেদন পায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর ও ডিওজের স্টেট কাউন্সিলের প্রধান রিকার্ডো ভি পারাসের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে তিনি এ প্রতিবেদন পাঠান। প্রতিবেদনে রাষ্ট্রদূত জানান, ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষ দু’দেশেরই স্বাক্ষরকৃত পালেরমো কনভেনশন অনুযায়ী পারস্পরিক আইনী সহায়তার আওতায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। এক্ষেত্রে ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দেশটির বিচার বিভাগ।
×