ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপাজয়ে মেরিনারের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২ জুলাই ২০১৬

শিরোপাজয়ে মেরিনারের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এক দল ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হবে। আরেক দলের চ্যাম্পিয়ন হতে জেতার বিকল্প নেই। যাদের ড্র দরকার, তারা টানা দুই গোল করে এগিয়ে, এখন বলুন, দ্বিতীয় দলটির কি কোন আশা আছে? অনেকেই বলবেনÑ না, নেই। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভুল প্রতিপণœ করে কিনা দ্বিতীয় দলটিই টানা তিন গোল করে জিতে নিল ম্যাচটি! হ্যাঁ, শুক্রবার মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে পড়ন্ত বিকেলে এমন দৃশ্যের অবতারণাই দেখা গেছে। লীগের (সুপার সিক্স-এর শেষ ম্যাচ) ‘অলিখিত ফাইনালে’ ঊষা ক্রীড়া চক্রকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপাটা নিজেদের করে নিল ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব। এই হারে টানা শিরোপা জিততে ব্যর্থ হলো দেশীয় হকির অন্যতম পরাশক্তি ঊষা। আর প্রথমবারের মতো লীগ শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল মেরিনার্স। ঘরোয়া হকিতে এর আগে তারা কখনই কোন শিরোপা জেতেনি (প্রথম বিভাগ, ক্লাব কাপ হকি, বিজয় দিবস হকি, স্বাধীনতা দিবস হকি, শহীদ স্মৃতি হকি)। কেবল ২০০৩ সালে রানার্সআপ হয়েছিল ক্লাব কাপ হকিতে। প্রিমিয়ার লীগে ঊষা এ পর্যন্ত শিরোপা জিতেছে চারবার (২০০৪, ০৬ ও ০৮ ও ১৪)। এর আগে মেরিনার দু’বার রানার্সআপ হয়েছিল ২০০৬ ও ২০১০ সালে। মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ প্রিমিয়ার লীগের ২০০৬ সালের মতো এবারও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয় ঊষা এবং মেরিনার। সেবার ঊষা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর রানার্সআপ হয়েছিল মেরিনার। আর এবার ঘটল ঠিক উল্টোটা। ১৬ ম্যাচে ঊষার পয়েন্ট ৩৮, মেরিনারের ৪৩। এর আগে এই লীগের প্রথম পর্বের খেলায় ঊষা ৪-১ গোলে হারিয়েছিল মেরিনারকে। এবার তাদের হারিয়ে প্রতিশোধটা কড়ায়-গ-ায় নিয়ে নিল মেরিনার্স। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয় করে ইতিহাস গড়ার সুবর্ণ সুযোগটাও কাজে লাগাল। ম্যাচ শেষে মেরিনারের হকি কমিটির চেয়ারম্যান একেএম মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘আমরা ক্লাবের ফ্যানদের আবেগকে সম্মান করি, আশা করি তারা এমন করবে না।’ পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ক্লাবের সবাইকে ২ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।’ দলের জার্মান কোচ গেরহার্ড পিটার বলেন, ‘ড্র পেলেই খুশি ছিলাম। ছেলেরা যখন ২ গোল খেল, আমি তাদের উজ্জীবিত করলাম। তারা ঠিকই ফিরে এলো। আর জিতেও গেল।’ দলের অধিনায়ক মামুনুর রহমান চয়ন বলেন, ‘মেরিনার্স খেলেছেই শেষের ২০ মিনিট। আমরা যখন ২ গোল খেলাম, তখন সতীর্থদের বললামÑ খেলা এখনও অনেক বাকি। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেললে জিতবই। ঊষা হেরেছে তাদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে। তারা ২ গোল করে এই উল্লাস করছিল, আমি তো ভেবেছিলাম, এরা বুঝি জিতেই গেছে!’ ঊষার কোচ মামুন উর রশীদ বলেন, ‘খেলাটা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের মতো করেই সব চলছিল। আসলে এটা একটা সন্ত্রাসী কাজ। জেতার জন্য ... দুই গোল খাওয়ার পর আপনি গ্যালারি ভাঙছেন, তাহলে আর এক গোল হলে কি হতো; আরও ভাংচুর হতো। ওই সময় আমাদের পাকিস্তানী খেলোয়াড়রা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এভাবে আসলে খেলার উন্নতি হয় কি না সন্দেহ।’ খেলার ১৩ মিনিটে ঊষার পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড আলি শানের তীব্র হিট ঠিকমতো বিপদমুক্ত করতে পারেননি মামুনুর রহমান চয়ন। পেছনে দাঁড়ানো আশরাফুল আর নিলয়ের বল নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে হেরে যান আশরাফুল। কয়েক পা সামনে গিয়ে তীব্র হিটে মেরিনার গোলরক্ষক মেহরাব হোসেন কিরণকে পরাস্ত করেন হাসান যুবায়ের নিলয় (১-০)। ১৫ মিনিটে পুষ্কর খিসা মিমো, নিলয়ের কোনাকুনি হিট বক্সের উপরে আয়ত্তে নেন। জায়গা করে নিয়ে নেন একটি রিভার্স হিট। আর তাতেই গোল। ব্যবধান দ্বিগুণ করে উষা (২-০)। এরপরই মেরিনার্স সমর্থকদের ভংচুরের ঘটনায় খেলা বন্ধ থাকে ২০ মিনিট। খেলা শুরু হলে ঊষার যেমন মনোসংযোগে চিড় ধরে, তেমনি ফাটল ধরে আত্মবিশ্বাসেও। ২৬ মিনিটে বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে রিভার্স হিট বাতাসে উঠিয়ে মারেন আরশাদ হোসেন। গোললাইনের ওপর দাঁড়ানো ওয়াকাস শরিফ সোজা স্টিকে বল পোস্টের ঠেলে দিয়ে ব্যবধান কমান মেরিনারের পক্ষে (১-২)। প্রথমার্ধের শেষদিকে মেরিনার্সের ইশতিয়াক একটি গোল করলেও পরে ভিডিও রিভিউতে এটি বাতিল হয়। ৫০ মিনিটে মোঃ ইশতিয়াকের সঙ্গে বল দেয়া-নেয়া করে মাঝ স্টিক দিয়ে বল গোললাইন অতিক্রম করান আরশাদ। সমতায় ফেরে মেরিনার (২-২)। খেলা শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে মেরিনারের ইশতিয়াক আহদেম গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
×