ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের কেনাকাটা

বাহারি ডিজাইনের জুতা স্যান্ডেলের খোঁজে তরুণ-তরুণীরা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৩০ জুন ২০১৬

বাহারি ডিজাইনের জুতা স্যান্ডেলের খোঁজে তরুণ-তরুণীরা

রহিম শেখ ॥ কয়েক দিন বাদেই ঈদ। চলছে তুমুল কেনাকাটা। পোশাকের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক পণ্য কিনতে ধনী-গরিব সবাই এখন মহাব্যস্ত। এর মধ্যে অন্যতম নতুন জুতো। সেটা হোক ব্র্যান্ড বা নন-ব্র্যান্ডের। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নানা রঙ আর বাহারি ডিজাইনের এসব জুতো-স্যান্ডেলের খোঁজে ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণী ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছুটছেন মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিং মলে। এবার বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় বৃষ্টি, কাদা এবং আর্দ্রতার বিষয়টি মাথায় রেখে জুতোর ডিজাইন করা হয়েছে। দামী ব্র্যান্ডের শোরুমের পাশাপাশি ফুটপাথের দোকানেও এসেছে জুতো-স্যান্ডেলের নতুন নতুন কালেকশন। রোজার ঈদকেই সবচেয়ে বড় বিক্রি মৌসুম হিসেবে গণ্য করেন জুতো ব্যবসায়ীরা। তাই সারা বছরের মোট বিক্রির প্রায় অর্ধেকই হয় এ উৎসবে। এবারও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদবাজারে বড় বড় ব্র্যান্ডের জুতোর দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলক বেশি। তবে এবারের ঈদে দেশীয় ব্র্যান্ডের চেয়ে খানিকটা এগিয়ে আছে চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জুতো-স্যান্ডেল। বড় বড় শপিং মল থেকে ছোট আকারের মার্কেটগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে এসব জুতো। জুতো-স্যান্ডেলের ক্রেতার তালিকায় এগিয়ে শিশু-কিশোর ও তরুণীরা। এক শ্রেণীর ক্রেতা দেশীয় ছোট ও মাঝারি মানের কারখানায় উৎপাদিত জুতো-স্যান্ডেলও কিনছে বেশ। আর নামকরা ব্র্যান্ডের দোকানগুলোয় ভিড় জমাচ্ছে বিশেষ এক শ্রেণীর ক্রেতা। বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকান এমনকি ফেরিওয়ালারাও মাস দুয়েক আগে থেকেই ঈদবাজারের প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের বেশি বিক্রি অধিক মুনাফার লক্ষ্যটা পূরণ হচ্ছে বেশ। সরেজমিন বসুন্ধরা সিটি, বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, জেনেটিক প্লাজা, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিভিন্ন শোরুম ঘুরে দেখা যায় চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জুতো-স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে বেশি। বড় বড় শপিং মল আর নামীদামী বিপণিবিতানের বাইরে ফুটপাথের দোকানগুলোতেও আমদানিকৃত স্যান্ডেল-জুতোর আধিক্য। এসবের দাম গড়ে আড়াই শ’ থেকে পাঁচ হাজার টাকা। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও চৌরঙ্গীতে হাজার-বারো শ’ টাকায় মোটামুটি ভালমানের আমদানি করা স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম এক হাজার পাঁচ শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে এমন স্যান্ডেলের চাহিদা বেশি। আমদানি করা কেডসের চাহিদাও কম নয়। এসবের দাম এক হাজার থেকে ছয়-সাত হাজার টাকা বা এরও বেশি। ফুটপাথে আমদানি করা স্যান্ডেল, জুতো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ঈদের ভিড় সামলে একটু বেশি লাভের আশায় ফুটপাথের দোকানিরাও এক দরে পণ্য বিক্রি করছে। ঈদ সামনে রেখে বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে দেশীয় ব্র্যান্ডের জুতো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। নতুন নতুন ডিজাইনের জুতো-স্যান্ডেল বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। ব্র্যান্ডের ভালমানের স্যান্ডেল-জুতো বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এপেক্স, বাটা, লোটোর জুতো-স্যান্ডেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানে ঈদ উপলক্ষে ছাড় দেয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে আছে এসব ব্র্যান্ডের শোরুম। ক্রেতারাও কিনছে যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে। তবে এসব পণ্যের বেশির ভাগ ক্রেতা মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের। দেশের জুতা উৎপাদনকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে নতুন নতুন ডিজাইনের স্যান্ডেল ও জুতো আনা হয়েছে। ক্রেতাও বাড়ছে। এবারের ঈদে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফ্যাশনেবল এবং আরামপ্রদ ৫০০টি নতুন ডিজাইনের জুতো এনেছে ওরিয়ন ফুটওয়্যার। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, ছোটরা ঈদের নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বাহারি ডিজাইনের জুতো কিনছে বেশি। আর অভিভাবকরা একটু বেশি খরচ পড়লেও সন্তানের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে নিজেদের জুতো-স্যান্ডেল কেনার ক্ষেত্রে তা টেকসই কিনা, সে বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। সুযোগ থাকলে দোকানির সঙ্গে কষে দরাদরিও করছেন। বিশেষত কিশোর ও তরুণেরা ব্র্যান্ডের কেডস, হাল ফ্যাশনের স্যান্ডেল কিনছে বেশি। অনেকে আবার ব্র্যান্ডের চামড়ার জুতোও কিনছে। হাল ফ্যাশনের টেকসই জুতো, স্যান্ডেল কিনতে একা বা বন্ধুদের নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরছে অনেকে। উচ্চবিত্তের ক্রেতারা নির্ধারিত দামের দোকান থেকেই কিনছে। নিউমার্কেটে জুতো কিনতে আসা হেলাল আহমেদ জানান, পরিবারের সবার জন্যই কিনব ভাবছি। সেক্ষেত্রে আমদানি করা জুতো বা স্যান্ডেল কেনার পরিকল্পনা আছে। আর দরাদরি করে কেনার সুযোগ আছে বলে এখানে এসেছেন। স্বল্প আয়ের মানুষেরাও পিছিয়ে নেই। তবে সামর্থ্যরে দিক বিবেচনা করে তারা ঝুঁকছেন ফুটপাথের দোকানের দিকে। সেখানে কম দামে ঝুড়ি থেকে বেছে নিচ্ছেন পছন্দের জুতো-স্যান্ডেল। এলিফ্যান্ট রোডে প্রায় দুই শতাধিক দোকানে পাওয়া যাচ্ছে দেশী ও বিদেশী জুতো। এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোতে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে। এলিফ্যান্ট রোডের জুতো-স্যান্ডেলের এক দোকান থেকে থাইল্যান্ডের তৈরি স্যান্ডেল কিনেছেন একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্র্থী সামিয়া। ঢাকা কলেজের ছাত্র মিজবাহ-উল হক জানান, এখানে কম টাকায় স্টাইলিশ জুতো পাওয়া যায়। তাই দেখতে এসেছি, মার্কেটে কী ধরনের জুতো এসেছে। এলিফ্যান্ট রোডের জুতোর দোকানগুলোতে চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা জুতো বিক্রি হচ্ছে বেশি। এসব জুতো বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথেও পাওয়া যাচ্ছে। দাম গড়ে ৪০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় ক্রেতারা এসব কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান দোকানিরা। ফুটপাথেও আমদানিকৃত জুতো-স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউমার্কেট, মিরপুর, ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথ এখন বেশ জমজমাট। এসব ফুটপাথের দোকানগুলোতে জুতো-সেন্ডেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। তবে দামের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর গুণগত মানও কিছুটা নিম্ন।
×