ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্ন রওশন এরশাদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির দায় কে নেবে ?

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ জুন ২০১৬

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির দায় কে নেবে ?

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা ও রিজার্ভ চুরির ঘটনার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে রিজার্ভ চুরি হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এত বড় রিজার্ভ চুরির ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনও ঘটেনি। চুরির টাকা ক্যাসিনোতে পাওয়া গেছে। সেটি ফিরিয়ে আনার এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেই। আর এই রিজার্ভ চুরি কার সাহায্যে হয়েছে, কে করল, এর দায় কে নেবে? অর্থমন্ত্রীকে তার জবাব দিতে হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সমাপনী দিনে বাজেটের ওপর আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, অর্থমন্ত্রীও আক্ষেপ করে বলেছেন দেশের ব্যাংকিং খাতে পুকুর চুরি নয়, সাগরচুরি হয়েছে। সরকারী ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এই টাকা লুট করল কেÑ এই চুরির দায়-দায়িত্ব কার? এই টাকা ফিরিয়ে আনার কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, আমরা তা জানি না। এই টাকা কার? এই টাকা দেশের জনগণের। রওশন এরশাদ বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নয়, সামাজিক অস্থিরতা রয়েছে। এ সামাজিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে রাস্তায় মেরে ফেলা হলো। গুম, শিশু-নারী হত্যাÑ এগুলো চলছে। কর্মসংস্থানের অভাবে রয়েছে। আমরা এর শেষ দেখতে চাই। দেশে শান্তি দেখতে চাই। তিনি বলেন, পুলিশ দিয়ে এগুলো বন্ধ করা যাবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বন্ধ করতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই আলোচনায় বসে উপায় খুঁজতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। মিটিং-মিছিল-ইফতার-বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা অন্য দলের লোকদের সঙ্গে কথা বলি না; মুখ দেখি না, এড়িয়ে যাই। এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মিলে-মিশে সমাধান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আমরা ছিলাম ২৫ বছর আগের সরকার। এখন আমরা দেখতে পারছি আপনাদের সরকারের কর্মকা-। আপনি বলতে পারেন- আমাদের সময় কী ছিল? আমাদের সময় কী করেছি, সেগুলো হয়ত ২৫ বছর আগে ঠিক ছিল। ২৫ বছর পরে হয়ত ঠিক নাও হতে পারে। আমরা যদি অধম হই আপনি উত্তম হবেন না কেন?’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের সমালোচনা করে রওশন এরশাদ বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যদি বিশেষজ্ঞ না থাকে তাহলে এটা করা যাবে না। এটা চালাবে কারা? এ বিদ্যুতকেন্দ্র রাশিয়া সহায়তা দিচ্ছে। আমরা জানি রাশিয়া চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের দুর্ঘটনার কথা। সেখানে শ্মশান হয়ে গেছে, কোন মানুষ নেই। রাশিয়া হয়ত ১০ বছর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে চালানোয় সহায়তা দেবে, এরপর কি হবে? তিনি বলেন, জাপানে সুনামির কারণে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে লিকেজ দেখা দিয়েছিল। পরে তারা সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের এ পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে লিকেজ দেখা দিলে কে দেখবে? এটি হলে মানুষ আস্তে আস্তে মারা যাবে। এই বিদ্যুতকেন্দ্রের বর্জ্য কোথায় রাখা হবে? এ বর্জ্য কে নেবে? এ জন্য কী কোন চুক্তি করা হয়েছে? এটি না করলে রূপপুর বিদ্যুতকেন্দ্র করা যাবে না। সময়োপযোগী বাজেট পেশের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, আমরা বিরোধী দলে আছি। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হোক। এই লক্ষ্যে এবার যে বাজেট দেয়া হয়েছে, তা দেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ও বিশাল বাজেট। তবে বাজেটের ঘাটতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এত ঘাটতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী কী ভাবে স্বপ্ন দেখলেন? গত বাজেটে সমৃদ্ধির সোপানে উঠতে চেয়েছিলেন। সেটি কতটুকু উঠতে পেরেছিলেন? তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে তো আর স্বপ্ন দেখি না। অর্থমন্ত্রী অনেক কিছু গোপন করলেও উচ্চাভিলাষ গোপন করতে পারেননি। সমস্যা হচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়ন কী ভাবে হবে? বাজেটে কৃষকদের করের আওতায় আনার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে রওশন এরশাদ বলেন, এত নিচুতলার লোক কী ভাবে কর দেবে? কৃষক তো এমনিতেই কর দিচ্ছে, পরোক্ষ কর দিচ্ছে। আবার কেন কর দিতে হবে? দেশের ১৬ কোটি লোকের মধ্যে এক কোটি লোক কর দিতে পারে। তাদের কেন ধরছেন না? মোটর মালিক সমিতি, এফবিসিসিআই-বিজিএমইএ অনেক কিছু আছে। তাদের আয়-ব্যয় কী? হিসাব নেন। তিনি বলেন, কৃষক ন্যায্যমূল্যে পায় না। সামান্য ঋণ নিয়ে মামলা হয়। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মামলা হয় না। এই কৃষকদের মামলা প্রত্যাহার করা হোক। আর এ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হোক। প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতার আহ্বান সংসদ উপনেতার ॥ এর আগে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কাজে সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন। আসুন, আমরা সকলে মিলে প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করি। আন্তরিকতার সঙ্গে তার কাজের সঙ্গী হই। শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করলে তাঁর নেতৃত্বে আমাদের আগামী দিনগুলো আরও উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুন্দর হবে। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্র চ্যালেঞ্জ নিয়ে না চললে সমৃদ্ধ হয় না। চ্যালেঞ্জ না থাকলে এগোনোও যায় না। বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। এদেশে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। তবে দেখতে হবে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি কি না, দেশের উন্নয়নে কাজ করছি কি না। গত সাত বছরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ও বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক মধ্যম আয়ের দেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়ন একটি দীর্ঘ ও চলমান প্রক্রিয়া। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যে আমাদের উন্নয়ন অগ্রসর হয়নি।
×