ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্র্যাজেডির নায়ক মেসি

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৩০ জুন ২০১৬

ট্র্যাজেডির নায়ক মেসি

লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। তবে মেসি নামেই সমধিক পরিচিত বিশ্বব্যাপী। দুদিন আগেও ছিলেন হিরো। ফুটবল বিশ্বের মহানায়ক। বর্তমানে জিরো। ট্র্যাজেডির নায়ক। ধ্রুপদ সাহিত্যে বিয়োগান্তক নাটক কিংবা উপন্যাসে নায়কের ভাগ্য বা পতন থাকে অনিবার্য, পূর্বনির্ধারিত। সেমির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে এমনটি প্রত্যাশা করা বাতুলতা। অথচ মেসির অতীত রেকর্ড তা বলে না। ২৯ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় আর্জেন্টিনা ও বার্সিলোনার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেন নিয়মিত। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট এবং ৫ বার সেরা বর্ষসেরা ফুটবলার ব্যালন ডি’ অর অর্জন করেছেন। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ১১২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মেসি। ৫৫টি গোল করেছেন জাতীয় দলের হয়ে। আর্জেন্টিনা যুব দলের হয়ে জিতেছেন দুটো বিশ্বকাপ। অলিম্পিক শ্রেষ্ঠও করেছেন দলকে। একটি বিশ্বকাপ ও তিনটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে টেনে তুলেছেন জাতীয় দলকে। এহেন একজন কৃতী খেলোয়াড়কে ভালবেসে ফুটবল প্রেমিকরা বলবে ফুটবলের জাদুকর অথবা ভিনগ্রহের ফুটবলার, তাতে আর বিচিত্র কি? এসব দেখেশুনেই ইদানীং তাকে ডাকা হতো কিং লিও অথবা সম্রাট লিও নামে। সেই সম্রাটের বিদায় অথবা পতন ঘটল নিউজার্সিতে ২৮ জুন ভোররাতে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির বিপরীতে। টাইব্রেকারে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হলো আর্জেন্টিনার। সেই সঙ্গে পেনাল্টি শূট আউটে মেসির পদাঘাতে বল গোলপোস্টের ওপর দিয়ে উড়ে চলে গেল আকাশে। রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, লজ্জা, অভিমান, হাহাকার সর্বোপরি ব্যর্থতার গ্লানি ও তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে জার্সি টেনে মুখ ঢেকে ফেললেন তিনি। এ যে একেবারে অভাবিত নক্ষত্রের পতন। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনার সুদীর্ঘ ২৩ বছরের শিরোপা খরা। গত তিন বছরে তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেও অশ্রুসিক্ত নয়নে শূন্য হাতে বিদায় নিতে হলো সর্বকালের সেরা অন্তত রেকর্ডের দিক থেকে লিওনেল মেসিকে। মেসি এতসব দুঃখ-কষ্ট সন্তাপ ও গ্লানি রাখবেন কোথায়? আর তাই আবেগতাড়িত হয়েই হোক অথবা হোক না তীব্র যন্ত্রণায় নিজেকে গুটিয়ে নিলেন ফুটবলের আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে। বিশ্ব গণমাধ্যমে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ‘আমার জীবনে জাতীয় দলের পর্ব এখানেই শেষ হলো। আর চেষ্টা করব না, আর ফিরে আসব না।’ একেই বুঝি বলা হয়ে থাকে ট্র্যাজেডির মহানায়কের নায়কোচিত প্রস্থান! মেসির এই আকস্মিক ঘোষণায় অবশ্য গোটা ফুটবল বিশ্ব হতবাক, হতবিহ্বল। আর্জেন্টিনার ক্রীড়ামোদীরা অবশ্য বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে নাও পারেন। কেননা, তাদের রয়েছে পর পর তিনবার শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও হাতছাড়া হওয়ার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। মেসি নিজেও এবার ঘোষণা করেছিলেন যে, আমরা অবশ্যই কোপা জিততে চাই। চ্যাম্পিয়ন হতে চাই এবং ইতিহাস পরিবর্তন করতে চাই। তবে দুঃখ এই যে, সেই ইতিহাস গড়া মেসির পক্ষে এবারও সম্ভব হলো না। চিলি যোগ্যতর দল হিসেবেই ছিনিয়ে নিয়েছে কোপা ট্রফি। মেসি না হয় বল উড়িয়ে দিয়েছেন গোলপোস্টের ওপর দিয়ে। আর্জেন্টিনার বিগলিয়ার শট কিন্তু ডানে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন চিলির অধিনায়ক ও গোলরক্ষক ব্রাভো। সেই ব্রাভোই কিন্তু এগিয়ে এসে কাঁধে হাত রেখে সান্ত¡না দিলেন মেসিকে। ট্র্যাজেডির শেষ দৃশ্যই বটে! ফুটবল ইতিহাসে এ পর্যন্ত সর্বকালের সর্বসেরা দুজন খেলোয়াড় পেলে ও ম্যারাডোনা কোপা আমেরিকা জিততে পারেননি। এবার মেসির সুযোগ ছিল দুই গ্রেটকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। পারলেন না মেসি। নিদারুণ ব্যর্থতার জন্য এখন থেকে আমৃত্যু নিজেকেই দায়ী করতে হবে মেসিকে। পরাজয়ের এই গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন। তাই বলে সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি একেবারে। মেসির যা বয়স, তাতে তিনি আরও কয়েক বছর খেলতে পারবেন বিশ্ব ফুটবলের আঙ্গিনায়। তবে বীরের মহিমা তো শুধু বিজয়ের মধ্যেই নিহিত থাকে না। সেদিক থেকে চিন্তা করলে হয়ত মেসির সিদ্ধান্তই সঠিক। তবে খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, গল্ফ ইত্যাদি বর্তমানে বাণিজ্যিক বিষয়ও বটে। মেসির অবর্তমানে ২০১৮ সালে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে সমস্যায় পড়তে পারে বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফা। সুতরাং মেসির তাৎক্ষণিক আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বৈকি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে লিওনেল মেসির বাংলাদেশ সফর ও খেলার কথা স্মরণ করে আমরাও বলতে চাই, তোমাকে ফিরতেই হবে মেসি।
×