ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফেডারেশন কাপ ফুটবল

সাত কারণে আলোচিত দল আরামবাগ

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৯ জুন ২০১৬

সাত কারণে আলোচিত দল আরামবাগ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাধারণত বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম শুরু হয়ে থাকে ‘ফেডারেশন কাপ’ দিয়ে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। শুরুটা হয় ‘স্বাধীনতা কাপ ফুটবল’ দিয়ে। তারপর ফেডারেশন কাপ, যা শেষ হলো সোমবার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ফুটবলের ১২ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, যা এই আসরে দীর্ঘ ছয় বছর পর তাদের নবম শিরোপা। পক্ষান্তরে রানার্সআপ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ এই আসরে ফাইনালে খেলল তার চেয়েও বেশি সময় পর, হিসেব করলে পাক্কা ১৫ বছর পর! আরামবাগ টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগ পর্যন্ত তারাই ছিল একমাত্র অপরাজিত দল। আসরের সবচেয়ে আলোচিত দল ছিল তারাই। আবাহনী শিরোপা জিতলেও এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া দল ছিল আরামবাগই। এই আসরে গ্রুপ পর্বে আরামবাগের কাছেই ০-১ গোলে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছিল আবাহনী। তাই ইতিহাস বদলাতে পারেনি তারা। পারেনি রূপকথা রচনা করতে। তাদের রূপকথার অভিযান থামিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় দেশীয় ফুটবলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও ফুটবল পরাশক্তি আবাহনী। শক্তিতে পিছিয়ে থাকলেও আবাহনীর চেয়ে অনেক পুরনো ক্লাব আরামবাগ। তাদের জন্ম সেই ১৯৫৮ সালে। তাদের বড় শিরোপা জয় একটিইÑ ১৯৯৫ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত ‘আনফা কাপ’-এ। এছাড়া তারা রার্নাসআপ হয় ১৯৯৭ সালে সিকিমে অনুষ্ঠিত চিফ মিনিস্টার গোল্ড কাপ এবং ভারতে অনুষ্ঠিত নাগজি গোল্ড কাপে। ফুটবলপ্রেমীরা বলছেন, এই আসরে আরামবাগের উত্থান কোন দৈব ঘটনা বা ‘ফ্লুক’ ছিল না। তারা রীতিমতো যোগ্যতা প্রমাণ করেই এই আসরের ফাইনালে উন্নীত হয়েছিল। আরামবাগের এই সাফল্যের রহস্য বা কারণ কি? প্রথমত তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত ভালমানের খেলোয়াড় সংগ্রহের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয়। তৃতীয়ত জাতীয় দলের সহকারী ও অভিজ্ঞ কোচ সাইফুল বারী টিটুকে আরামবাগের কোচ হিসেবে নিয়োগ দান, চতুর্থত ভাল বিদেশী ও স্থানীয় ফুটবলার সংগ্রহ। পঞ্চমত খেলোয়াড়দের টানা অনুশীলন করানো। ষষ্ঠত খেলোয়াড়দের সাফল্যের জন্য উজ্জীবিত করা এবং সপ্তমত খেলোয়াড়দের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের লড়াকু হিসেবে তৈরি করা। এই টুর্নামেন্টে তাদের ছিল ঘানার ডিফেন্ডার ইসা ইউসুফ, ক্যামেরুন মিডফিল্ডার ইয়োকো স্যামনিক ও নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড কেস্টার এ্যাকনের মতো দক্ষ ফুটবলার। কেস্টার চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, দলীয়ভাবে আরামবাগ করেছে আট গোল, যা আবাহনীর চেয়ে তিনটি বেশি! মোঃ আবদুল্লাহ, আবু সুফিয়ান সুফিল ও জাফর ইকবালÑ এই তিন তরুণ খেলোয়াড়কে নিয়ে গর্ব করতেই পারে আরামবাগ। এরা আরামবাগের তৃতীয় বিভাগের দল থেকে সরাসরি খেলেন সিনিয়র বা মূল দলে। অথচ এমন কোন আনকোড়া ফুটবলার দলে নেয়ার সাহসই দেখাতে পারেনি ঢাকা আবাহনী! আরামবাগ ভাগ্যের জোরে এই আসরের ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে ... এমনটা যারা মনে করেন, তাদের জন্য জবাব হচ্ছে আরামবাগ এই আসরে নিজেদের চেয়ে শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকা তিনটি বড় ক্লাবকে হারিয়েছে, যা অবিশ^াস্য। গ্রুপ পর্বে তারা ১-০ গোলে হারায় ঢাকা আবাহনীকে, কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে ৫-৪ (২-২) গোলে হারায় গত দুই আসরের টানা চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবকে। এখানেই শেষ নয়, সেমিতে তারা ৩-১ গোলে হারায় ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়ন টিম বিজেএমসিকেও। আরামবাগ যদি দল হিসেবে খারাপই হতো, তাহলে ফাইনালে এসেও খারাপ খেলত। কিন্তু এখানে তারা হেরে গেলেও যথেষ্ট ভাল খেলে, মাত্র এক গোল হজম করে এবং কমপক্ষে ৩/৪টি গোলের সুযোগ নষ্ট করে। আবাহনীর মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তি বার বার চেষ্টা করেও আরামবাগের রক্ষণদুর্গ ভেঙ্গে একটির বেশি গোল করতে পারেনি। বরং আরামবাগের রক্ষণভাগের সামনে আবাহনীর নামী ফরোয়ার্ডদের মনে হয়েছে অসহায়! আরেকটি বিষয় দিয়ে এই আসরে দারুণভাবে নজর কেড়েছে আরামবাগ। সেটা হলোÑ দুটি খেলায় তারা গোল শোধ দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়ে মাঠ ছাড়ে। সাত কারণে আরামবাগ ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ হয়ে সাফল্য লাভ করেছে এবং সবচেয়ে আলোচিত দল হিসেবে গণ্য হয়েছে, সেগুলোর চর্চা যদি তারা আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগেও করতে পারে, তাহলে সন্দেহাতীতভাবে তারা চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ না হোক, অন্তত তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ পর্যন্ত হবে। আর সেটা যদি হয়, তাহলে এটাই হবে আরামবাগের অনেক বড় সাফল্য।
×