ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে ঘরে ফেরা

সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস এক জুলাই যাত্রা করবে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৯ জুন ২০১৬

সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস এক জুলাই যাত্রা করবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঈদ উপলক্ষে আগামী এক জুলাই থেকে সদরঘাট নদী বন্দর থেকে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসের যাত্রা শুরু হবে। সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানাধীন লঞ্চগুলো একইদিনে যাত্রা শুরু করবে বলে জানা গেছে। এদিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার কোনভাবেই আনফিট লঞ্চ চলতে দেয়া হবে না। মঙ্গলবার লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির তৃতীয় দিনেও যাত্রীদের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। বিআরটিসির বাসের টিকেটের ক্ষেত্রে চিত্র একই রকম। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুরু হবে। টানা নয়দিন ছুটি হওয়ায় আগেভাগেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবেন সবাই। তাই এ বছর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ছাড়া অন্য হাইওয়েগুলোতে যানজটের খুব একটা আশঙ্কা করা হচ্ছে না। ঈদে আনফিট লঞ্চ চলতে দেয়া হবে না- নৌ মন্ত্রী ॥ ঈদ উপলক্ষে ফিটনেস ছাড়া কোন লঞ্চ চলতে দেয়া হবে না বলে আবারও সাফ জানিয়ে দিলেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। ঈদের আগে রং করে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নামানো হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেগুলো (লঞ্চ) নামবে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমরা ফিটনেস ছাড়া কোন লঞ্চ চলতে দেব না। এটা আমাদের পরিষ্কার সিদ্ধান্ত। নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আপনারা এ প্রশ্ন করেছেন এ প্রশ্নটি অমূলক নয়। বরং যৌক্তিক। পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। আগে নৌপরিবহন সেক্টরে কোন শৃঙ্খলা ছিল না। এর আগে কেন এত নৌ-দুর্ঘটনা হয়েছে? কারণ হলো, যেসব জাহাজ বা নৌযান নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো তাদের মতো করে নির্মাণ করেছে। তারপর ডিজি শিপিংয়ের কাছে আসছে যে এটা অনুমোদন দেন। ডিজি শিপিং অনুমোদন দিয়েছেন। ‘এখন আমরা নিয়ম করে দিয়েছি আগে ডিজাইন পাস করতে হবে। তাই পুরো প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসছে। নিজেদের ইচ্ছেমতো কোন কিছু করার সুযোগ থাকছে না। অনেক জাহাজ আটকে আছে, তারা নির্মাণকাজ শেষ করেছে কিন্তু আমরা তাদের এখনও পারমিশন (অনুমোদন) দেইনি’ বলেন শাজাহান খান। ঈদের আগে লঞ্চের রঙ করানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি শরীরে যদি সাবান-টাবান (না দেন) বা ভাল করে গোসল না করেন তবে ময়লা জমবে। এ ছাড়া ঈদ বা কোন না কোন সময় তো বাড়ি রং করান। একটু ভাংচুর হলে মেরামত করান। রং ও ইঞ্জিনের (লঞ্চের) কাজ করানোও এটা কোন অন্যায় নয়। এটা সঠিক। এটা না করালে আমরা ফিটনেস সনদ দেব না। এবার ঈদে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যাতে না চলতে পারে এ ব্যাপারে সরকার খুবই সতর্কতা জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, ওভারলোডিং (লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন) ঠেকাতে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে, পুলিশ, মন্ত্রণালয়ের অফিসাররা থাকবেন। তিনি বলেন, অনেকে আমরা আরামে ঈদ করি, কিন্তু আমাদের অফিসারদের অনেকের ঈদ করা হয় না। তারা থেকেই কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন। তারা ব্যস্ত থাকবেন যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটতে পারে। ঈদে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ও বেসরকারী মালিকানাধীন লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস ১ জুলাই থেকে শুরু হবে বলেও জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী। পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে সংস্থা প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব অশোকমাধব রায় স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির মাধ্যমে আগামী এক বছরের জন্য সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বছর শেষে লক্ষ্য অনুযায়ী সংস্থার বাস্তব কাজের মূল্যায়ন করা হবে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা নদী বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ১৪টি পয়েন্টে ৩০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়া সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল এলাকায় পকেটমার, অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী প্রতিরোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৩০টির বেশি জেলার যাত্রীরা নদীপথে যাতায়াত করে থাকেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে প্রায় ৩৫ লাখ যাত্রী বিভিন্ন জেলায় যান। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, নৌ-বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি পয়েন্টে এবং ৯টি গ্যাংওয়ে ও পন্টুনে এই ৩০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নদীবন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালকের দফতর থেকে একজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন। অতিরিক্ত যাত্রীদের বিষয়ে আগাম তথ্য দেয়া হবে। এছাড়া সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র টার্মিনাল ও পন্টুনে ২০টি মাইক স্থাপন করা হয়েছে। এ মাইকের সাহায্যে সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দেয়া হবে। রবিবার থেকে সদরঘাটের ২০টি কাউন্টার থেকে অগ্রিম লঞ্চের কেবিনের টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। সোমবারও টিকেট নিতে আসা যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পর্যাপ্ত টিকেট আছে বিআরটিসি কাউন্টারে ॥ টিকেট আছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। নেই ভিড়। অনেকটা অলস সময় পার করছেন বিআরটিসি কাউন্টার মাস্টাররা। সত্যিই অবাক হবার মতো ঘটনা। বেসরকারী বাসগুলোর টিকেটের জন্য এখনও কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরছেন যাত্রীরা। অথচ যাত্রী মিলছে না বিআরটিসির। কেন? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেবার মান ভাল না হওয়ার কারণেই যাত্রীদের কোন আস্থা নেই রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থাটির প্রতি। মূলত একারণেই যাত্রীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। বিআরটিসির জোয়ার সাহার ডিপো ম্যানেজার নায়েব আলী জনকণ্ঠ’কে জানান, অগ্রিম টিকেট বিক্রিতে গতবারের তুলনায় এবছর সাড়া মেলেনি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবছর ঈদের বন্ধ বেশি হওয়ার কারণে যাত্রীরা বিভিন্ন মাধ্যমে আগে ভাগেই চলে যাচ্ছেন। এই ডিপো থেকে বিভিন্ন রুটে ৭০টি বাস যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুর রুটে বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি চলছে। গত তিন দিনে ৫২ আসনের বাসের টিকেট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩০টির মতো। তবে অন্যান্য বাস ডিপোতে প্রায় ৬০ ভাগ টিকেট অবিক্রীত রয়েছে। তিনি জানান, চার জুলাই থেকে গার্মেন্টস ছুটি হবে। তাই বেশিরভাগ বাস সাধারণ যাত্রীদের অপেক্ষায়। আশাকরি গার্মেন্টস ছুটি হবার পর বিআরটিসির যাত্রীর অভাব হবে না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তিনটি ডিপো থেকে পাঁচ জুলাই রাত পর্যন্ত টিকেট বিক্রি হচ্ছে। দূরপাল্লার রুটে কিছু যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা। বিআরটিসির পরিচালক প্রশাসন মোঃ শামসুল আলম জনকণ্ঠ’কে জানান, ২৬ তারিখ থেকে ১-৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন রুটের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। তিনি জানান, বিশেষ করে বেশি দূরত্বের রুটগুলোতে অগ্রিম টিকেট বিক্রির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করতে ৫০টি গাড়ি ডিপোতে স্টেনবাই রাখা হবে। কোন রুটে যাত্রী বেশি হলে এসব গাড়ি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হবে। নিয়মিত গাড়ির বাইরে আরও ৪৫০টি বাস বিভিন্ন ডিপো থেকে ছেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
×