ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৯ জুন ২০১৬

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজান কৃচ্ছ্রসাধন ও সিয়াম ক্বিয়ামের কসরতের মাস হলেও এখানে আছে ইফতার সেহ্রির হৃদয় উত্তাপ ও ঈদ- আনন্দ। আর ক’দিন পরে ঈদের আনন্দে ভাসবে সমাজ; ভাসবে নগর-গ্রাম। মানুষ ছুটবে আপনজনদের কাছে। এ সময় আমাদের নামাজ কালামেও কিছু পরিবর্তন আসে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য সহজ জীবন প্রবর্তন করেছেন। কিন্তু না জানার কারণে মানুষ নিজেই নিজের জীবনকে কঠিন করে তোলে। কোন প্রয়োজনের তাগিয়ে দূরÑদূরান্তে সফর করা একটি কষ্টকর অভিজ্ঞতা। এ সময়ও তো খোদায়ী বিধিবিধান মানতে হবে। কিন্তু এ জন্য ইসলাম সহজতর ইবাদতের কর্মসূচী প্রণয়ন করেছে। সফরকালীন নামাজের সংক্ষিপ্ত রূপ ও নির্দেশনা রয়েছে, যাকে বলা হয় সালাতুল ক্বসর বা ক্বসর নামাজ। আসলে এটি নিত্য ভ্রমণকারী লোকজনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কুরআনুল কারীমের সূরা নিসার ১০১নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ক্বসর নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ মানা ফরজ। কিন্তু এক শ্রেণীর মুসল্লি মনে করেন কুরআনে ভ্রমণকালীন নামাজের ক্বসর বা সংক্ষেপে আদায় করার কথা বলা হয়েছে তো কি হয়েছে? আমরা অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের ন্যায় পরিমাণে বেশি পড়লে তো আর দোষ নেই। আসলে এমন ধারণা ভুল ও গোমরাহি। আরেক শ্রেণীর মুসল্লি ক্বসর নামাজের নিয়ম জানে না বলে এটি ত্যাগ করে। শরীয়ত মতে, এটি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয় বরং তা এক মারাত্মক গুনাহ ও অপরাধ। উল্লেখ্য, এক মঞ্জিল অথবা দুই মঞ্জিলের সফর যদি কেউ করে; তবে তাতে শরীয়তের কোন হুকুম পরিবর্তন হয় না। শরীয়ত অনুযায়ী তাকে মুসাফিরও বলা হয় না। সমস্ত পালনীয় বিধান তার জন্য হুবহু ঐরূপই থাকবে যেইরূপ বাড়িতে থাকে। যেমন: চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ চার রাকাতই পড়তে হবে। যে ব্যক্তি কমপক্ষে তিন মঞ্জিল স্থানে যাবার নিয়ত করে বের হবে এবং অনুর্ধ ১৫ দিন থাকার নিয়ত করবে তাকে শরীয়ত অনুযায়ী মুসাফির বলা হবে। যখন সে নিজ শহরের লোকালয় অতিক্রম করবে, তখন তার ওপর মুসাফিরের হুকুম বর্তাবে। এখন প্রশ্ন হলো, তিন মঞ্জিল কী? চলতে পথে খাওয়া দাওয়া, পাক সাফ, আরামÑবিশ্রামের সময় বাদ দিয়ে স্বাভাবিকভাব হেঁটে, নৌকায় বসে কিংবা উটের পিঠে চড়ে তিন দিনে যতদূর পৌঁছা যায় তাকে তিন মঞ্জিল বলে। আমাদের দেশে মোটামুটি হিসেবে এর দূরত্ব ৪৮ মাইল। এ নির্দিষ্ট দূরত্ব কোন দ্রুতযানের মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ের ব্যবধানে অতিক্রম করলেও মুসাফিরের বিধান প্রযোজ্য হবে। যে ব্যক্তি শরীয়ত অনুযায়ী মুসাফির, সে জোহর, আসর ও এশার ফরজ নামাজ দুই দুই রাকাত পড়বে এবং সুন্নত নামাজের হুকুম এই যে, যদি ব্যস্ততা থাকে তবে তা ছেড়ে দেয়া দুরস্ত আছে। এতে কোন গুনাহ হবে না। আর যদি ব্যস্ততা না থাকে তবে সুন্নতগুলোও ছাড়বে না। সফর অবস্থায় সুন্নত পড়লে তা পুরোপুরিই পড়তে হবে। সুন্নতের ক্বসর হয় না। আর ফজর, মাগরিব ও বিতরের নামাজে ক্বসর নেই। একইভাবে জোহর, আছর এবং এশা এই তিন ওয়াক্তের নামাজ সফরের হালতে ইচ্ছা করে চার রাকাত পড়লে গুনাহ হবে। যদি কারও মুসাফিরী হালতে নামাজ কাজা হয়ও সেই নামাজ মুক্কিমী হালতে কাজা পড়তে চায় অর্থাৎ বাড়িতে ফিরে আদায় করতে চায় তবে জোহর, আছর এবং এশার দু’রাকাত করেই কাজা পড়বে। এরূপ মুক্কিমী হালতে যদি নামাজ কাজা হয়ে থাকে এবং সে নামাজ মুসাফিরী হালতে আদায় করতে চায় তবে চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ চার রাকাতই পড়তে হবে, দুই রাকাত পড়বে না। মুক্কীম বা স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য মুসাফির ইমামের পেছনে ইক্তেদা করা জায়েজ আছে। তবে মুসাফির ইমাম (চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে) যখন ২ রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে অর্থাৎ উভয়দিকে সালাম ফিরিয়ে সারবে তখন মুক্কীম মুক্তাদিগণ আল্লাহু আকবর বলে দাঁড়াবে এবং অবশিষ্ট দুই রাকাত নিজে নিজে পড়ে নেবে। অবশ্য সালামের সঙ্গে সঙ্গে ইমামের বলে দেয়া উচিত তিনি মুসাফির। সকল মুক্তাদি যেন বাকি নামাজ নিজগুণে আদায় করে নেন। তবে জামাতের আগেই কথাটি বলে রাখা উত্তম। একইভাবে কোন স্থানীয় ইমামের পেছনে মুসাফির ইক্তেদা করতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে তাকে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। এ বিষয়ে আরও কিছু মাসলাÑমাসায়িল রয়েছে। এসব হুকুম আহকাম জানার মাধ্যমে আমরা আমাদের নামায কালাম আল্লাহর দরবারে আরো গ্রহণীয় করে তুলতে পারি।
×