ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবসরের হিড়িক আর্জেন্টিনা দলে

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৮ জুন ২০১৬

অবসরের হিড়িক আর্জেন্টিনা দলে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টানা ব্যর্থতা। ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বশেষ কোন শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। সেবার দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ খ্যাত ‘কোপা আমেরিকা’ জিতে নেয় তারা। কিন্তু গত তিন বছরে তিন শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে সুপারস্টার লিওনেল মেসি ও তার সতীর্থদের। ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ, ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকা এবং এবারের কোপায় ফাইনাল খেলেও শিরোপা খরা ঘুঁচল না। সেই ব্যর্থতার কষ্টে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরই নিয়ে ফেললেন মেসি। যদিও তিনি সেটা প্রত্যাহার করে ফিরে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা দলের গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর। কিন্তু মেসির সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক ম্যাচ খেলা জেভিয়ার মাশ্চেরানো ও সার্জিও এ্যাগুয়েরোও অবসরে যাওয়ার ঘোঘণা দিয়েছেন। অবসর নেয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে লুকাস বিজলিয়া, গঞ্জালো হিগুয়াইন, এভার বানেগা, এজেকুয়েল ল্যাভেজ্জি ও এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াদের। এবারই মোক্ষম সুযোগ ছিল আর্জেন্টিনার জন্য কোপা জিতে দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা কাটানোর। কারণ গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলা দলটির আসল প্রতিপক্ষরা বিদায় নিয়েছিল আগেই। উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল আগেভাগে বিদায় নেয়াতে সবাই ধরে নিয়েছিলেন পথ পরিষ্কার আলবিসিলেস্তেদের। সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল দলটি। সবাই মনে করেছিলেন আগের তিন বড় আসরের ফাইনালে না পারা মেসি এবার দেশকে শিরোপা এনে দিতে পারবেন। ২০০৭ সালের কোপা ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে যায় আর্জেন্টাইনরা, ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে এবং গত বছর অনুষ্ঠিত কোপায় চিলির কাছে হেরে রানার্সআপ হতে হয়েছিল। সবই মেসি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এবার পথটা পরিষ্কারই ছিল। ফাইনালে প্রতিপক্ষ চিলি হওয়ার কারণে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথ আরও সুগম বলেই মনে করেছিল আর্জেন্টাইন ভক্ত-সমর্থকরা। কারণ গ্রুপ পর্বে একতরফা খেলে এই চিলিকেই ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল মেসিরা। কিন্তু ফাইনালে যেন একেবারেই ভিন্ন দল চিলি। সেটা গত বছর কোপার ফাইনালেই বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা মেসিদের। এবারও সেই পুনরাবৃত্তি ঘটল। আবারও চিলির কাছে হেরে কোপা হাতছাড়া হল আর্জেন্টিনার। সেই আক্ষেপে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেয়ারই ঘোষণা দিলেন মেসি। অধিনায়ক মেসির পথ অনুসরণ করে একই ঘোষণা দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এ্যাগুয়েরো ও ৩২ বছর বয়সী মাশ্চেরানো। আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগের মেরুদ- মাশ্চেরানো ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত অধিনায়কও ছিলেন। নেতৃত্ব ছাড়ার পর ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৫ কোপা এবং এবারের কোপা এই তিন ফাইনাল খেলেও তিনি শিরোপা স্বাদ পেলেন না। শুধু এসব আক্ষেপই নয়, অবসর নেয়ার পেছনে আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে আর্জেন্টিনিয়ান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ফুটবলারদের মতপার্থক্য এবং শীতল সম্পর্ক। ফুটবল স্টাফদের সঙ্গেও তেমন বনিবনা হচ্ছিল না। সবকিছু মিলিয়ে হতাশায় এই তারকা ফুটবলারদ্বয় মেসির পথ অনুসরণ করলেন। আর এ্যাগুয়েরোর আরেকটি আক্ষেপ আছে নিয়মিত প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ না পাওয়ার জন্য। এ বিষয়ে এ্যাগুয়েরো বলেন, ‘আবারও ভাগ্য আমাদের বিরুদ্ধে গেল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সবচেয়ে হৃদয়ভাঙ্গা বিষয় হচ্ছে মেসির পেনাল্টি মিস করা। কোন খেলার পর ড্রেসিং রুমে এত খারাপ অবস্থায় আগে কখনও তাকে দেখিনি। এসব কারণে মেসি শুধু একাই নয়, এমন পরাজয় সবার জন্যই মেনে নেয়া অতীব কঠিন। আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেছি। এ কারণে অনেকেই জাতীয় দলের হয়ে আর খেলা চালিয়ে না যাওয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছে।’ এই তিনজন ছাড়াও অবসরের ঘোষণা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দিতে পারেন মারিয়া, হিগুয়াইন, বানেগা, ল্যাভেজ্জি ও বিজলিয়া। দলের গোলরক্ষক রোমেরো অবশ্য এমন কিছু ভাবছেন না। বরং তিনি মনে করেন মেসির অবসর ঘোষণা প্রত্যাহার করা উচিত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি আসলে মুহূর্তের উত্তেজনায় এমন ঘোষণা দিয়েছেন, কারণ অপূর্ব সুন্দর একটা সুযোগ আমাদের থেকে পালিয়ে গেছে। আমি মেসিকে ছাড়া জাতীয় দলের কথা চিন্তাই করতে পারি না। আমি মনে করি তিনি এটা পুনর্বিবেচনা করবেন।’
×