ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপা জিততে মরিয়া চিলি-আর্জেন্টিনা দু’দলই

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৬ জুন ২০১৬

শিরোপা জিততে মরিয়া চিলি-আর্জেন্টিনা দু’দলই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঠিক এক বছর আগে এই চিলির বিপক্ষে হেরেই শিরোপার খুব কাছে গিয়েও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল আর্জেন্টিনার। দীর্ঘ শিরোপা খরা কাটানোর সেই ম্যাচে পেনাল্টি শূটআউটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল স্বাগতিক চিলি। কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারার সেই দুঃস্মৃতিটা এখনও তরতাজা। লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকার আরেকটি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে সোমবার। বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এবারও প্রতিপক্ষ চিলি-আর্জেন্টিনা। গত বছরের ফাইনালে হারার প্রতিশোধ নিতে এবার মরিয়া মেসি-এ্যাগুয়েরোরা। কোপা আমেরিকার শতবার্ষিক আসরকে স্মরণীয় করে রাখতে পুরোপুরি প্রস্তুত লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ ২৩ বছর পর দেশকে বড় কোন শিরোপা উপহার দিতে মেসি বাহিনী দারুণভাবে মুখিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, এবার কোপার শিরোপা জয়ের মাধ্যমে এই প্রজন্মের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করতে চান এলএম টেন। যদিওবা মেসির কোটি কোটি ভক্ত অবশ্য একথা অকপটেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, পাঁচবারের বিশ্বসেরা এই খেলোয়াড় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দুই ফুটবলার পেলে ও দিয়েগো ম্যারাডোনার কীর্তি ইতোমধ্যেই ছুঁয়ে ফেলেছে। বার্সিলোনার সুপারস্টারের ক্যারিয়ারে এখন শুধু প্রয়োজন আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে একটি মেজর শিরোপা অর্জন। এতদিন পর্যন্ত সেটা যে কেন হয়নি সেটাকেও অনেকেই দুর্ভাগ্য বলেই মনে করতে চান। ইস্ট রাদারফোর্ডের এনএফএলে নিউইয়র্ক জায়ান্টসদের হোম গ্রাউন্ড মেটলাইফ স্টেডিয়ামে চিলির বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকার ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চিলিকে হারাতে পারলেই দুই যুগের শিরোপা খরা ঘুচাবে ম্যারাডোনার দেশ। গতবছরও কোপার ফাইনালে এই দুই দলই একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল যেখানে শেষ হাসি হেসেছিল স্বাগতিক চিলি। গত তিনবছরে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মেসি-এ্যাগুয়েরোরা বড় কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। তবে এবার বেশ সতর্ক জেরার্ডো মার্টিনোর দল। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানি আর গতবছর চিলির কাছে কোপা আমেরিকার স্বপ্ন ভঙ্গের পর এবার আর কোন ভুল করতে নারাজ তারা। ফুটবলের বড় দুটি আসরে ব্যর্থ হওয়ার পর সব সমালোচনার তীরই এসে বিদ্ধ করেছিল মেসিকে। দলের সেরা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বটা প্রকৃতপক্ষে তার ওপরই বর্তায়। সমালোচকরা একথা বলতেও ছাড়েনি, তার মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে, সে জাতীয় সঙ্গীত গায় না, জাতীর দলের জার্সির জন্য তার কোন ধরনের অনুভূতি নেই। দেশটির কিংবদন্তি ম্যারাডোনাও কোপা আমেরিকার শুরুতে মেসি সম্পর্কে বলেছিলেন, তার মধ্যে ‘ব্যক্তিত্ব’ ও ‘নেতৃত্বের’ অভাব রয়েছে। সেমিফাইনালে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করার পর ম্যারাডোনা মন্তব্য করেন, ফাইনালে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত। আর যদি আমরা জিততে না পারি তবে পুরো দলের দেশে ফেরা উচিত নয়। তবে লিওনেল মেসি এসব সমালোচনায় কখনই রাগান্বিত হননি। বরং তিনি সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘কোন ধরনের চিন্তা-ভাবনা না করেই যে সমস্ত মানুষ অন্যকে আক্রমণ করে তাদের নিয়ে আমি চিন্তিত। গত দুই বছরে আমরা দুটি ফাইনালে খেলেছি কিন্তু জিততে পারিনি। এখানে কি করার আছে, দল ফাইনালে তো খেলেছে। এমন নয় যে আমরা শেষ ১৬তেই পরাজিত হয়েছি।’ যুক্তরাষ্ট্রে চলমান কোপা আমেরিকার এবারের ম্যাচগুলোতে মেসির মধ্যে প্রত্যাশার কোন চাপ লক্ষ্য করা যায়নি। নিজের স্বাভাবিক ফর্ম ধরে রেখেই দলকে ফাইনালে খেলার নিশ্চয়তা দিয়েছেন এলএম টেন। চিলির বিপক্ষে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে জয়ী হয়ে কোপার মিশন শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি কাতালান সুপারস্টার। কিন্তু পরের ম্যাচেই পানামার বিপক্ষে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই হ্যাটট্রিক। তারপর কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ী ম্যাচে গোল করে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও দুর্দান্ত এক কার্লিং ফ্রি-কিকে গোল করে সর্বমোট ৫৫ গোলের রেকর্ড নিয়ে বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে যান। পরবর্তীতে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও দুই গোল। সব মিলিয়ে এবারের আসরে মেসির ফর্ম আর্জেন্টিনাকে শিরোপার স্বপ্নে বিভোর করে তুলেছে। আর মেসিও মনে করেন এই শিরোপাটা তাদেরই প্রাপ্য। তবে মেসি ফিট থাকলেও কোপার ফাইনালের আগে একের পর এক দুঃসংবাদ আর্জেন্টিনা শিবিরে। চোটের কারণে ছিটকে পড়েন ডি মারিয়া। তার বদলি হিসেবে যে দুই ফুটবলারকে ভাবা হচ্ছিল, সেই লাভেজ্জি আর নিকোলাস গাইতানও ইনজুরিতে! আর মার্কোস রোহো যে খেলবেন না, তা একরকম নিশ্চিতই বলা চলে। সেই তালিকায় নতুন করে যোগ হন মিডফিল্ডার আগুস্তো ফার্নান্দেজ আর পাস্তোরে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে কোচের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলছেন ডি মারিয়া। বৃহস্পতিবার অনুশীলনের মাঝ থেকেই বিদায় নেন মারিয়া। নতুন করে তাই তার বদলি হিসেবে ভাবতে হচ্ছে আর্জেন্টিনা শিবিরকে। দুই গোল করা ইজাকুয়েল লাভেজ্জি গত ম্যাচে পড়ে গিয়ে হাতই ভেঙ্গে ফেলেছেন। অস্ত্রোপচার করাতে হবে তার। আরেক উইঙ্গার নিকোলাস গাইতানও ইনজুরিতে। এদিকে কলম্বিয়ার বিপক্ষে চোট পাওয়ার কারণে ফাইনালে পাবলো হার্নান্দেজকে পাবে না চিলি। টুর্নামেন্টের সেরা মিডফিল্ডার মার্সেলো ডায়াজও চোটের কারণে সংশয়ে। তবে এই ম্যাচে খেলবেন আতুরো ভিদাল। আর্জেন্টিনার যেমন দুই যুগের শিরোপা খরা ঘুচানোর মিশন। তেমনি গত বছরই প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়া চিলি এবারও শিরোপা ধরে রাখতে মরিয়া।
×