ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োজনে গুলি...

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৬ জুন ২০১৬

প্রয়োজনে গুলি...

ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও চুরি ডাকাতির ভরমৌসুম এখন। বিশেষত ঈদকে সামনে রেখে এই পেশার লোকজন হয়ে ওঠে বেপরোয়া। দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য যেমন হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এরা, তেমনি ঈদের আনন্দ উপভোগের পথে হয় প্রতিবন্ধক। ঈদের কেনাকাটা ও ঘরমুখো মানুষদের জন্য এরা সাক্ষাত আতঙ্কসম। বাধা পেলেই অস্ত্রের ব্যবহার তাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদ উৎসব যতই এগিয়ে আসে, তার সঙ্গে তাল মেলাতেই বেড়ে ওঠে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি এবং চুরিও। সরাসরি অস্ত্র ঠেকিয়ে তো বটেই, এর বাইরেও অভিনব পদ্ধতিতে ছিনতাই-রাহাজানি চলে। অন্য সন্ত্রাসীদেরও দৌরাত্ম্য বাড়ে। এরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও পরোয়া করে না। সরব ও নীরব চাঁদাবাজিতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষরা হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। নাগরিকদের বাড়ে উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ। সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভয়ের সংস্কৃতিতে সেঁধিয়ে থাকে। তাদের কবলে যারা পড়েন, তারা জানেন নির্মম ও ভয়াবহ রূপ কী জিনিস। দোকানিরাও ভুক্তভোগী। ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমলে চাঁদা তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে একটি চক্র। ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় ভুক্তভোগী কেউই প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় না। চাঁদাবাজির পাশাপাশি চলে সন্ত্রাসী ও ছিনতাই ঘটনাও। পেশাদার ছিনতাইকারীর পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ অভিজাত পরিবারের সন্তানরাও এ সবে জড়িয়ে পড়ে। পরিবর্তন এসেছে ছিনতাইয়ের ধরনে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে অভিনব কৌশলেরও আশ্রয় নেয়। দেখা গেছে, ছিনতাইয়ের সিংহভাগ ঘটনায় জড়িত মাদকসেবীরা মাদকাসক্তি ও ছিনতাই, রাহাজানি, এই দুটিই একে অপরের অনুষঙ্গ আজ। প্রতিদিন এরা লুটে নেয় পথচারী বা যানবাহন যাত্রীদের সর্বস্ব। পুলিশের অভিযান, চারদিকে কড়া নিরাপত্তা আয়োজন, তল্লাশি চৌকি, টহল ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়তেই থাকে। রাজপথে রিক্সাযাত্রীর ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা থেমে নেই। অলিগলি, রাজপথে দিনের বেলায়ও অস্ত্রধারীদের মুখোমুখি হতে হয়। আর অর্থকড়ি খুইয়ে ফিরতে হয় বাড়ি। যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় ছাদ কেটে মুঠোফোন, জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ঢাকাসহ সারাদেশে গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল, মাদক, অস্ত্র ও জঙ্গীবিরোধী দুটি বিশেষ অভিযান শেষ করেছে পুলিশ। এ অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতার না হওয়া সন্ত্রাসীরা ঈদকে সামনে রেখে হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অপরাধী ছিনতাইকারীচক্র। এসব ছিনতাই চাঁদাবাজি ঠেকাতে প্রয়োজনে গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার চুরি ছিনতাই রাহাজানি চাঁদাবাজি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন বলা যায়। রাস্তায় সাদা পোশাকের বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকছে। পুলিশের এই সিদ্ধান্তে জনমনে স্বস্তি নিয়ে এসেছে বলা যায়। অজ্ঞান পার্টির কবল থেকে জনগণকে রক্ষা করা পুলিশের কর্তব্য। তবে পুলিশ নিরীহ লোকজনকে হয়রানি যেন না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ পুলিশ যদি যথাযথভাবে সন্ত্রাসী চিহ্নিত করতে না পারে, তবে হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। জনগণ চায়, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাক। আর তাতে অপরাধ কমবে এবং গুলিরও প্রয়োজন হবে না। ঈদে নিশ্চিত হোক সবার জন্য নিরাপত্তা।
×