ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বামী সংসার নিয়ে সুখী শারীরিক প্রতিবন্ধী আরেফা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৫ জুন ২০১৬

স্বামী সংসার নিয়ে  সুখী শারীরিক প্রতিবন্ধী আরেফা

অদম্য ইচ্ছা শক্তি প্রতিবন্ধী আরেফাকে পথচলা, স্বামী ও সংসারসহ সবকিছুতেই করেছে জয়ী। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তিনি এখন চাকরি করে সংসারের প্রধানে পরিণত হয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে এ্যাকশন অন ডিসিবিলিটি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এডিডি) ইন্টারন্যাশনাল নামের এনজিওতে সিরাজগঞ্জে জেলা সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন। আরেফা জন্মগত প্রতিবন্ধী নন। কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই ছোট বেলায় বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। তার বাড়ি নাটোর জেলার পালপাড়ায়। মা-বাবা, তিন ভাই ও তিন বোনের সংসারে তিনি ছোট। বাবা মৃত জাহিদুল ইসলাম ও মা আনোয়ারা বেগম। আরেফা তার প্রতিবন্ধী জীবনের কথা বলতে গিয়ে বর্তমান সমাজ, সামাজিকতা ও সমাজপতিদের আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন- তিনি যখন নাটোর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়েছিলেন, তখন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। তিনি মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। মেধা তালিকায় তিনি সব সময় পাঁচের মধ্যে থাকতেন। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঠিক চিকিৎসা না করার ফলে তিনি শারীরিক বিকলাঙ্গ হয়ে প্রতিবন্ধী হন। এত কম বয়সে শরীরে এত বড় ক্ষতি দেখে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। সে দূর্বলতাকে জয় করে ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাস করেন। নাটোর সরকারী এনএস কলেজে লেখাপড়া করা অবস্থায় কেউ তার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করেনি। এসব সহ্য করতে না পেরে সারাদিন ঘরের ভেতরে থাকতেন। কলেজেও যেতেন না। এরই ফলে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হন। পরে তিনি আবার সে বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৮৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। এ সময় আরেফার পরিবারের লোকজন ছেলে দেখে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু আরেফা বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রতিবন্ধী মেয়েরাও অনেক কিছু করতে পারে। আরেফার বাবা তাঁর অদম্য ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। রাজশাহীতে আরেফা বড় বোনের বাসায় থাকতেন। সময় কাটানোর জন্য তিনি বোনের বাড়িতে জামা ডিজাইন ও বুটিকের কাজও করতেন। সময়টাকে আরও ভালভাবে কাটানোর জন্য শিক্ষকতাও করতেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অভিযোগ ছিল যে, কোন প্রতিবন্ধী শিক্ষক স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারবে না। অভিভাবকদের মনে কুসংস্কার ছিল, আরেফা যদি তাদের ছেলেমেয়েদের স্পর্শ করে, তাহলে তাদের সন্তানেরাও এমন হয়ে যেতে পারে। এরপরেও তিনি দীর্ঘদিন সেই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন শিক্ষার্থীদের ভালবাসায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পর তিনি সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন, নতুন কুঁড়ি একাডেমিসহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছেন। প্রতিবন্ধীদের সেবা করার উদ্দেশ্যে তিনি এনজিওতে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের অমতে তিনি ২০০২ সালে চাকরিতে যোগ দেন। এরপর তিনি ২০০৩ সালে এডিডির চাকরিতে যোগ দেন। জাহাঙ্গীর আলম তাঁর স্বামী, বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করেন। আরেফা এক মেয়ে সন্তানের জননী। আরেফা এখন সুখী। -বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে
×