ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রিম টিকেট পেতে কমলাপুরে হাজারো মানুষের ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ জুন ২০১৬

অগ্রিম টিকেট পেতে কমলাপুরে হাজারো মানুষের ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুদিন টিকেট বিক্রির পর এবার জমেছে কমলাপুর। শুক্রবারের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। লোকেলোকারণ্য পুরো রেলস্টেশন। তিন জুলাইয়ের ট্রেনের অগ্রিম টিকেট পেতে অন্তত ১৫ ঘণ্টা আগে থেকে লাইনে দাঁড়ানো। রাত কেটেছে অপেক্ষায়। সকাল আটটা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অর্থাৎ টিকেট হাতে পাওয়া। নিশ্চিত হলো ঘরে ফেরা। এ যেন এক অনাবিল আনন্দ; যা সত্যিই প্রকাশ করার মতো নয়। তারপর একগাল হাসি নিয়ে বাড়ি ফেরা। তবে চাহিদা বেশি থাকায় শুক্রবার অনেকেই টিকেট না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে টিকেট কালোবাজারির তেমন কোন অভিযোগ এবার নেই। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, তিন জুলাইয়ের টিকেটের চাহিদা বেশি হওয়ায় অনেকেই পাননি। যারা সামনের দিকে ছিলেন তাদের অনেকেই টিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদিকে আজ উদ্বোধন হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে নতুন এই ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এজন্য আজ ২৫ তারিখের অগ্রিম টিকেট বিক্রি বন্ধ থাকবে। ২৬ ও ২৭ জুন দেয়া হবে চার ও পাঁচ জুলাইয়ের টিকেট। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে মানুষের লাইন। কিছু লাইন কাউন্টারের সামনে থেকে একেবারে রাস্তা পর্যন্ত। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনের টিকেটের জন্য সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পর পেয়েছেন কাক্সিক্ষত টিকেট। রংপুরের টিকেট নিতে আসা কামরুজ্জামান কামাল বলেন, টিকেটের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার পর স্টেশনে এসেছি। টিকেট পেলাম সোয়া ৯টার দিকে। তিনি জানান, দীর্ঘ সময় কেটেছে অপেক্ষমাণ অন্য টিকেট প্রত্যাশীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ও তাস খেলে। রাজশাহীর শীতাতপ শ্রেণীর টিকেট নিতে এসেছিলেন রাজধানীর তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম। ৯ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও টিকেট পাননি তিনি। সকাল ৯টার দিকে তিনি বলেন, সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন বলছে টিকেট নেই। টিকেট গেল কোথায়? সিলেটের উপবন এক্সপ্রেসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনের টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কল্যাণপুরের বাসিন্দা জহির হোসেন। তিনি বলেন, যারাই এসি টিকেট চেয়েছেন তাদের কেউই পাননি। অনেকেই রাগ করে চলে গেছেন। পাবনার টিকেট নিতে আসেন কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা সিরাজুল হক। তিনি বললেন, আমার টোকেন নম্বর ৬৪। পরিস্থিতি যা দেখছি তাতে শেষ পর্যন্ত টিকেট পাব কিনা সন্দেহ। একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জামালপুরের টিকেট প্রত্যাশী শামীমা। তিনি জানান, ভোর চারটায় স্টেশনে এসেছেন। সকাল ১১টা পর্যন্ত টিকেট পাননি। টিকেটের জন্য এই কষ্টকে টিকেট পাওয়ার আনন্দের চেয়ে বড় করে দেখছেন না, তারপরও যদি টিকেট পাওয়া যায় সেই আশায় আছি। মানিকনগরের গৃহিণী শাহনাজ সুলতানা যাবেন দিনাজপুরে, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ভোর ৪টা থেকে। অনেক কষ্ট তারপরও নিজের বাড়ি গিয়ে ঈদ করব। এর আনন্দই আলাদা। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল ছাড়া অন্য গন্তব্যের টিকেটের কাউন্টারগুলোতে শুক্রবার তেমন ভিড় দেখা যায়নি। টিকেট পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন নেত্রকোনার হাওর এক্সপ্রেসের যাত্রী পার্থ, নোয়াখালীর যাত্রী নিলয়, কুমিল্লার যাত্রী হিরন, খুলনার যাত্রী পল্লবসহ অনেকেই। তাদের মুখের হাসিই বলছিল, সন্তুষ্টির শেষ নেই। পুরুষ লাইন যেমন দীর্ঘ ছিল, নারীদের লাইনও কম ছিল না। তবে কাউন্টার একটি হওয়ায় নারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সিরাজগঞ্জের টিকেট নিতে আসা আকলিমা জানালেন, সকাল সাড়ে নয়টায় টিকেট পেয়েছিল। এবার নিশ্চিন্ত। এই বলে হাসিমুখে বাসার পথে রওনা করেন তিনি। বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হলো সবচেয়ে যানজটপ্রবণ। এমনিতেই প্রতিদিন এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ঈদ উপলক্ষে এর মাত্রা আরও বাড়বে। ফলে দুর্ভোগও বাড়বে সমানতালে। তাই এই রুটের অনেকেই এখন বিকল্প হিসেবে ট্রেনের টিকেট কেনার চেষ্টা করছেন। টিকেট প্রত্যাশীদের পক্ষ থেকে ছোটখাট অভিযোগ থাকলেও বড় ধরনের অনিয়ম বা কালোবাজারির ঘটনা ঘটছে না বলে দাবি করেন জিআরপি থানার ওসি আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, টিকেট কালোবাজারির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কালোবাজারি সন্দেহে ৮/১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ঈদের সময় সড়কে যানজটের ভোগান্তি এড়িয়ে স্বাচ্ছন্দ্য যাত্রায় অনেকে ট্রেনই বেছে নেন। তবে টিকেট না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ থাকে বরাবরই। কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, এবার ঈদের সময়টাতে প্রতিদিন ৩৩টি ট্রেনের ১৮ হাজার টিকেট বিক্রি হবে। বিভিন্ন ট্রেনে অতিরিক্ত ৮৪টি বগি সংযোজন করা হবে। এছাড়া ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে তিন জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চলবে। কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টার সংখ্যাও আগের চেয়ে তিনটি বাড়িয়ে ২৩টি করা হয়েছে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে আলাদা একটি কাউন্টার। স্টেশন ব্যবস্থাপক জানান, এবার ৬৫ শতাংশ টিকেট উন্মুক্ত বিক্রির জন্য রাখা আছে। মোবাইল ও অনলাইনে বিক্রির জন্য টিকেট রয়েছে ২৫ শতাংশ। এছাড়া ভিআইপিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ টিকেট রাখা আছে বলে জানান তিনি। ঈদ উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও আন্তঃনগর ট্রেন চালু থাকবে বলে রেলওয়ে জানিয়েছে। যাত্রা শুরু হচ্ছে সোনার বাংলার ॥ আজ উদ্বোধন হচ্ছে নতুন ট্রেন ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’। আগামী ২৬ জুলাই থেকে বিরতিহীনভাবে চলবে চট্টগ্রামবাসীর জন্য দেয়া প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, ১৬ বগির বিশেষ ট্রেনটি ইতোমধ্যে কমলাপুর স্টেশনে আনা হয়েছে। ৭৪৬ সিটের ট্রেনে ৪টি বগিতে রয়েছে ২২০টি আসন, শোভন চেয়ার ৪২০টি এবং এসি বার্থ আসন রয়েছে ৬৬টি। এছাড়াও দুটি খাবার গাড়ির সঙ্গে ৪০টি আসন রয়েছে। এসি চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ১০০ টাকা, এসি সিট ও বার্থের ভাড়া ১ হাজার টাকা এবং শোভন সিটের ভাড়া ৬শ’ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার সকালে উদ্বোধন করার পরে নিয়মিত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলবে বিশেষ এ ট্রেন, বন্ধ থাকবে কেবল শনিবার। ট্রেনটি সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুর পৌনে ১টায় চট্টগ্রাম পৌঁছবে। আবার চট্টগ্রাম থেকে বিকেল ৫টায় ছেড়ে রাত পৌনে ১১টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। ইতোমধ্যে নতুন এই ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম টিকেট দেয়া হয় শুক্রবার। কমলাপুর রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এই বিশেষ ট্রেনটির জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। অনেকেই আসছেন আগাম টিকেট কিনতে।
×